শীত পড়তেই করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে ইউরোপে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, অস্ট্রিয়া, ইটালি, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই সমস্ত দেশের হাসপাতালগুলি দ্রুত ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। এরপর হাসপাতালে বেড পাওয়াও মুশিকলের বিষয় হবে। অন্য দিকে, রয়টার্সের হিসেব বলছে, গত এক সপ্তাহে অ্যামেরিকায় কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ লাখ। মৃত্যুর সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো বেড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ৩২০ জনের। ইতালিতে মারা গিয়েছেন ২২১ জন। অস্ট্রিয়ায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে এক হাজার। এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর হার লাফিয়ে বেড়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের হিসেব অনুযায়ী এক সপ্তাহে ৪০ শতাংশ মৃত্যুর হার বেড়েছে ইউরোপে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, দ্রুত ইউরোপে কঠিন লকডাউনের ব্যবস্থা না করলে ফলাফল গতবারের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।
ইউরোপের বহু দেশেই নতুন করে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি সহ বহু দেশ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করার জন্য নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে প্রায় সর্বত্র কড়াকড়ির বিরুদ্ধে আন্দোলনও শুরু হয়েছে। জার্মানি, ইটালিতে রাস্তায় নেমে মানুষ প্রতিবাদ করছেন। মঙ্গলবার ইটালির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে। আগুন জ্বলেছে রাস্তায়। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আগের মতোই নতুন করে সার্বিক লকডাউনের রাস্তায় যেতে হবে বিভিন্ন দেশকে। নইলে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করা সমস্যা হবে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: ইউরোপে আবার কড়াকড়ি
ইউরোপে করোনার প্রকোপ আবার বাড়ছে৷তাই অর্থনীতি বাঁচাতে লকডাউন এড়িয়েই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আবারো কড়াকড়ি আরোপ করছে কয়েকটি দেশের সরকার৷
ছবি: Philippe Lopez/AFP/Getty Images
জার্মানিতে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকা বাড়ছে
করোনা সংক্রমণের নতুন ঝুঁকিতে জার্মানির মিউনিখ শহর৷ বার্লিনে হঠাৎ করেই বেড়েছে সংক্রমণ৷ আর তাই রাতে কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন৷ শহরটিতে ৭০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কারফিউ জারি করা হলো৷ রাত ১১টার মধ্যে দোকানপাটসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ আপাতত অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ পাঁচ জনের বেশি মানুষ রাত ১১টার পর ঘরের বাইরে এক হতে পারবে না৷
ছবি: Fabrizio Bensch/Reuters
চেক প্রজাতন্ত্রে জাতীয় পর্যায়ে লকডাউন জারি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো দেশব্যাপী লকডাউন জারি করেছে চেক প্রজাতন্ত্র সরকার৷ অক্টোবরের ৫ তারিখ থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে৷ মাস্ক সব জায়গায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ গির্জায় ১০ জনের বেশি মানুষের প্রবেশ নিষেধ৷ শপিং সেন্টারগুলোতে ওয়াইফাই বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, যাতে তরুণদের জমায়েত কম হয়৷
ছবি: Gabriel Kuchta/Getty Images
স্পেনে জরুরি অবস্থা জারি
স্পেনে হঠাৎ করে আবারো বেড়েছে করোনা সংক্রমণ৷ সংক্রমণ কমাতে মন্ত্রিসভা ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ দিয়েছে৷ সারাদেশে কোয়ারান্টিন পদ্ধতি আবারও বলবৎ হচ্ছে৷ মাদ্রিদের স্থানীয় সরকার করোনা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অমান্য করার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো৷
ছবি: SOPA Images/ZUMA Wire/picture-alliance
ফ্রান্সে কড়াকড়ি আরোপে পুলিশি তৎপরতা
ফ্রান্সে দ্রুত বাড়ছে করোনা সংক্রমণ৷ এ কারণে রাজধানী প্যারিসে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব ‘বার ’৷ তুলোঁ এবং মঁতেপিলার ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকার শীর্ষে৷ শনিবার ফ্রান্সে একদিনে সংক্রমণের হার ছিল ২৭ হাজার, যা মহামারি শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ৷ প্যারিস এবং এর উপকন্ঠে পুলিশ সবসময় লক্ষ্য রাখছে বারগুলো বন্ধ আছে কিনা আর রেস্তোরাঁগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কিনা৷
ছবি: Kiran Ridley/Getty Images
পোল্যান্ডে সংক্রমণ বাড়লেও স্কুল খোলা
পোল্যান্ডে টানা পাঁচদিন ধরে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ কিন্তু এরপরও স্কুল খোলা আছে৷ ৬০ থেকে ৬৫ বছর বয়সি মানুষদের জন্য সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকছে৷ বাইরে বের হলে সর্বত্র মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ ৩ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২১ হাজার ৬৩৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন এবং ২ হাজার ৯৭২ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/K. Pempel
স্লোভাকিয়া: ছয় জনের বেশি একসাথে নয়
স্লোভাকিয়ায় ১৩ অক্টোবর থেকে ছয় জনের বেশি মানুষ জমায়েত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ তবে পরিবারের সদস্যরা এই নিয়মের বাইরে৷ গির্জায় প্রার্থনা ও সব ধরনের ‘পাবলিক ইভেন্ট’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ সর্বত্র মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ ফিটনেস আর ওয়েলনেস সেন্টারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে৷ রেস্তোরাঁর ভেতরে খাবার দেয়া নিষিদ্ধ৷ (৩০ সেপ্টেম্বর তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে করোনা কড়াকড়ির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ৷)
ছবি: Pavel Neubauer/dpa/picture-alliance
ইংল্যান্ডে ‘থ্রি-টায়ার’ অ্যালার্ট
ইংল্যান্ডে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ‘থ্রি-টায়ার’ অ্যালার্ট সিস্টেম চালু করেছে সরকার৷ নতুন এই সিস্টেমে করোনা সংক্রমণের হারের ভিত্তিতে এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ‘মধ্যম’ ‘উচ্চ’ ও ‘সর্বোচ্চ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ যেমন: উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় আছে লিভারপুল৷ এই এলাকায় কড়াকড়ি আরোপের কথা ভাবছে সরকার৷ ফলে জিম, পাব, ক্যাসিনো বন্ধ রাখার ঘোষণা আসতে পারে৷
ছবি: Justin Tallis/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
ইউরোপ যখন দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, অ্যামেরিকাতেও তখন নতুন করে করোনার প্রকোপ বাড়ছে। সম্প্রতি সংবাদসংস্থা রয়টার্স একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। তাদের হিসেব, গত এক সপ্তাহে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অ্যামেরিকায়। মৃত্যুর সংখ্যাও সেখানে বাড়ছে। এক সপ্তাহে করোনায় মারা গিয়েছেন পাঁচ হাজার ৬০০ জন। হাসপাতালে যাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ১৩ শতাংশ। নতুন হটস্পট হয়ে উঠেছে ইলিনয়। সেখানে এক সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ। টেক্সাসের পরিস্থিতিও একই রকম।
এই পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ৩ নভেম্বর অ্যামেরিকায় প্রেসিডেনশিয়াল ভোট। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ভোটের পর সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। করোনার ভয়ে বহু মানুষ আগেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। রেকর্ড সংখ্যাক পোস্টাল ভোটও পড়ছে এ বার।
সব মিলিয়ে ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার পরিস্থিতি ফের খারাপ হচ্ছে। তুলনায় ভারতের অবস্থা ভালো। গত কয়েক দিনে করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা হলেও কমেছে। দৈনিক সংক্রমণ ৫০ হাজারের নীচে বেঁধে রাখা গিয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।