1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা ও অর্থনীতি: কিভাবে সামলাবে সরকার?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ মে ২০২০

বাংলাদেশে করোনার রোগী শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ পাশাপাশি বাড়ছে অর্থনৈতিক চাপও৷ এমন অবস্থায় কোন দিকটিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত?

ছবি: Sazzad Hossain

বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ সেটি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনো নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ অন্যদিকে সারা বিশ্বের মত চাপের মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতিও৷ এমন অবস্থায় কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে, মানুষের জীবন না অর্থনীতি? এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন একজন অর্থনীতিবিদ এবং একজন চিকিৎসক?

অর্থনীতিতে প্রভাব

বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে যেতে পারে৷ যেখানে অর্থবছরের শুরুতে আট দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার৷

এরিমধ্যে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে গেছে৷ কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷ হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহণ শ্রমিক, রিকশা চালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের কোন কাজ নেই৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় লকডাউনের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল এই এক মাসে অর্থনীতিতে এক লাখ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ আর কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে দেশে ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা৷

ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এই করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা এখন আর অনুমান করা সম্ভব হচ্ছেনা৷ কারণ করোনার শেষ সম্পর্কে আমরা  এখনো ধারণা করতে পারছিনা৷ ক্ষতির পরিমান, জিডিপির ক্ষতি এখন যা বলা হচ্ছে তা প্রজেকশনের ভিত্তিতে৷ বাস্তবতা হতে পারে আরো ভয়াবহ৷’’

যেভাবে অর্থনীতি সচল করা হচ্ছে

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করতে এরইমধ্যে পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে৷ ঈদকে সামনে রেখে সীমিত আকারে দোকানপাট ও শপিং মলও চালু হয়েছে৷ তবে জরুরি পরিবহণ ছাড়া আর সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে ২৬ মার্চ থেকে৷

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন বিএমএ'র মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন,  বলেন, ‘‘সরকার তার বিবেচনায় অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়ে সব কিছু ধীরে ধীরে খুলে দিচ্ছে৷ কিন্তু আমার বিবেচনায়  সঠিক পদ্ধতিতে হয়নি৷

তিনি বলেন, ‘‘পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার আগে সব শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি ছিলো৷ কিন্ত তা না করে সবাইকে কাজে নেয়া হয়ছে৷ ঈদের আগে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দোকানপাট খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ এটা  ঠিক হয়নি৷ আমাদের করোনা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এখনো জানি না৷ সেটা না জেনে এভাবে সব কিছু খুলে দেয়া ঠিক না৷ আর যেটা খুলতে হবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানতে হবে৷''

তবে তিনি সাধারণ মানুষের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘দাবী জানিয়ে অভিভাবকরা স্কুল কলেজ বন্ধ করে কক্সবাজারে ঘুরতে গেলেন৷ এটা কিভাবে হয়! আবার এখন দোকানপাটে ঈদের কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না৷ নিজের জীবনের সিদ্ধান্ততো নিজেকেই নিতে হবে৷ ঘরে বেধে রাখা তো সরকারের দায়িত্ব না৷ সরকার তো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছে৷’’ 

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা কতটা

রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ২৭৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন৷ মোট করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ২৬৮ জন৷ মোট প্রাণ হারিয়েছেন ৩২৮ জন৷ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে৷ পাশাপাশি বড় ধরনের চাপ সামলাতে হবে স্বাস্থ্যখাতকে৷

এরইমধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা চরমভাবে ফুটে উঠেছে৷ এখন ৪১টি সেন্টারে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ঢাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল রয়েছে আটটি৷ জেলা হাসপাতালগুলোতে আলাদা করোনা ইউনিট করা হয়েছে৷ উপজেলা পর্যায়ে করা হয়েছে আইসোলেশন সেন্টার৷ কিন্তু তারপরও পরীক্ষার এবং চিকিৎসার অপ্রতুলতা আছে৷ অন্যদিকে সাধারণ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাও অনেকটা ভেঙে পড়েছে৷

এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা দরকার৷ এটা এখন প্রমাণিত যে এই দুই খাতে বরাদ্দই হলো সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ৷ ভিয়েতনামের মত দেশ তা প্রমাণ করেছে৷ আমরা দুর্বল বলেই করোনা নিয়ে কোনো গবেষণা করে ভবিষ্যত নির্দেশনা দিতে পরছি না৷ করোনা হাসপাতালগুলোতে মাত্র ২০০ আইসিইউ বেড আছে৷ তাহলে কিভাবে আমরা যুদ্ধ করবো?’’

চলতি বাজেটে স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা৷ যা জাতীয় বাজেটের চার দশমিক ৯২ শতাংশ৷ বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জনপ্রতি বরাদ্দের পরিমান বছরে মাত্র ১৪২৭ দশমিক ৭৭ টাকা৷ সেখানে আছে দুর্নীতির অভিযোগও৷ এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘এই খাতে দুর্নীতি ঢাকতে এখন অনেক অসত্য তথ্য দেয়া হচ্ছে৷’’ 

কী সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত? 

ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

ইউরোপ সহ বেশ কিছু দেশে লকডাউন পরিস্থিতি তুলে নেয়া হচ্ছে৷ ধীরে ধীরে অর্থনীতিকে সচল করার পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা৷ বাংলাদেশে কি তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে? বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘সুস্থ মানুষই অর্থনীতি সচল রাখে৷ তাই মানুষই যদি টিকে না থাকে তাহলে অর্থনীতি সচল থাকবে কিভাবে৷ এটা শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো দুনিয়ারই পরিস্থিতি৷ আমাদের এখানে সরকারি চাকরিজীবী আর বড় কর্পোরেট খাতের লোকজন এখনো বেতন পাচ্ছে৷ কিন্ত কতদিন পাবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷’’

এই পরিস্থিতিতে সতর্ক ও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন৷ তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের সামনে এখনো সময় আছে, সুযোগ আছে৷  কারণ আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিমান তুলনামূলকভাবে এখনো কম৷ কিন্তু সিদ্ধান্ত সঠিক না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে৷ যদি এটা বেড়ে যায় তাহলে চিন্তা করুন খাগড়াছড়ির মত জায়গার কতজনকে আমরা ঢাকায় এনে চিকিৎসা দিতে পারব৷ আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিস্থিতি সামলাতে পারবে?’’

এহতেশামুল হক চৌধুরীর মতে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন অঞ্চলকে ভাগ করা যেতে পারে৷ সেখানে ‘রেড জোন', ‘ইয়োলো জোন’, ‘গ্রিন জোন’ থাকবে, যা ভারতেও করা হয়েছে৷ এক এক জায়গার পরিস্থিতি অনুযায়ী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করা যেতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘জীবন ক্ষতিগ্রস্থ হলে অর্থনীতিও বাঁচে না এটা আমাদের মনে রাখতে হবে৷ তাই দু’টোর মধ্যে একটি সমন্বয় করতে হয়৷’’

এই বিষয়ে ড. নাজনীন আহমেদের পরামর্শ, ‘‘সিদ্ধান্ত নিতে হবে হট স্পট চিহ্নিত করে৷ সেখানে আমাদের কড়াকড়ি আরোপ করতেই হবে৷ আর যেখানে সংক্রমণ কম বা পরিস্থিতি ভালোর দিকে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে হবে৷ ঢালাওভাবে সবকিছু খুলে দেয়া যাবে না৷ একটা ১০ ফুট বাই আট ফুট দোকানে তো সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব নয়৷ আমাদের ঈদের জন্য দোকান খোলার দরকার নাই৷ আর যেসব দোকান খোলা রাখা দরকার সেসব দোকানে হোম ডেলিভারি চালু করতে হবে৷’’

তিনি মনে করেন ,‘‘জীবন না অর্থনীতি সেটা নিয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ মানুষ বাঁচলে অর্থনীতি বাঁচবে৷ আবার অর্থনীতি ধসে গেলে মানুষের বড় বিপর্যয়৷ তাই এখানে সরাসরি কোনো উত্তর নেই৷ সর্বাধিক বেনিফিট যেভাবে হয় আমাদের সেই বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ আর সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে মানুষ৷ সিদ্ধান্ত হবে মানুষের জন্য৷ বেঁচে থাকার জন্য৷’’ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ