বাংলাদেশে করোনার রোগী শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ পাশাপাশি বাড়ছে অর্থনৈতিক চাপও৷ এমন অবস্থায় কোন দিকটিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত?
ছবি: Sazzad Hossain
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ সেটি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনো নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ অন্যদিকে সারা বিশ্বের মত চাপের মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতিও৷ এমন অবস্থায় কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে, মানুষের জীবন না অর্থনীতি? এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন একজন অর্থনীতিবিদ এবং একজন চিকিৎসক?
অর্থনীতিতে প্রভাব
বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে যেতে পারে৷ যেখানে অর্থবছরের শুরুতে আট দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার৷
এরিমধ্যে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে গেছে৷ কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷ হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহণ শ্রমিক, রিকশা চালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের কোন কাজ নেই৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় লকডাউনের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল এই এক মাসে অর্থনীতিতে এক লাখ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ আর কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে দেশে ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা৷
ড. নাজনীন আহমেদ
This browser does not support the audio element.
বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এই করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা এখন আর অনুমান করা সম্ভব হচ্ছেনা৷ কারণ করোনার শেষ সম্পর্কে আমরা এখনো ধারণা করতে পারছিনা৷ ক্ষতির পরিমান, জিডিপির ক্ষতি এখন যা বলা হচ্ছে তা প্রজেকশনের ভিত্তিতে৷ বাস্তবতা হতে পারে আরো ভয়াবহ৷’’
যেভাবে অর্থনীতি সচল করা হচ্ছে
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করতে এরইমধ্যে পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে৷ ঈদকে সামনে রেখে সীমিত আকারে দোকানপাট ও শপিং মলও চালু হয়েছে৷ তবে জরুরি পরিবহণ ছাড়া আর সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে ২৬ মার্চ থেকে৷
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন বিএমএ'র মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, বলেন, ‘‘সরকার তার বিবেচনায় অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়ে সব কিছু ধীরে ধীরে খুলে দিচ্ছে৷ কিন্তু আমার বিবেচনায় সঠিক পদ্ধতিতে হয়নি৷
তিনি বলেন, ‘‘পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার আগে সব শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি ছিলো৷ কিন্ত তা না করে সবাইকে কাজে নেয়া হয়ছে৷ ঈদের আগে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দোকানপাট খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ এটা ঠিক হয়নি৷ আমাদের করোনা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এখনো জানি না৷ সেটা না জেনে এভাবে সব কিছু খুলে দেয়া ঠিক না৷ আর যেটা খুলতে হবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানতে হবে৷''
তবে তিনি সাধারণ মানুষের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘দাবী জানিয়ে অভিভাবকরা স্কুল কলেজ বন্ধ করে কক্সবাজারে ঘুরতে গেলেন৷ এটা কিভাবে হয়! আবার এখন দোকানপাটে ঈদের কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না৷ নিজের জীবনের সিদ্ধান্ততো নিজেকেই নিতে হবে৷ ঘরে বেধে রাখা তো সরকারের দায়িত্ব না৷ সরকার তো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছে৷’’
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব
এরইমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷ রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমেছে ব্যাপকভাবে৷ দেখা দিয়েছে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বাড়ার শঙ্কা৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
রপ্তানি ধস
লকডাউনের কারণে ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় ব্যবসা বাণিজ্য, মানুষের কেনাকাটা কার্যত বন্ধ৷ এসব দেশের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে, কয়েকশো কোটি ডলারের কার্যাদেশ বাতিল করেছে৷ এর প্রভাবে এপ্রিলে রপ্তানি আয় নেমে এসেছে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে, যা আগের বছরে একই মাসের চেয়ে ৮২.৮৫% কম৷ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হিসেব বলছে চলতি বছর সারা বিশ্বেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ৩২% পর্যন্ত কমতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yu Fangping
প্রবাসী আয়ে টান
এপ্রিলে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর পরিমাণ ছিল ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ ভাগ কমেছে৷ প্রবাসী আয়ের সিংহভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে৷ জ্বালানি তেলের দাম কমায় তাদের অর্থনীতি বিপর্যয়ে পড়েছে৷ সেইসব দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা৷ এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স গত বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ কমে যাবে, বলছে বিশ্বব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/R. Abd
চাকুরির অনিশ্চয়তা
দেশের ভিতরে যে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে তার কারণেও বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ৷ এসব প্রতিষ্ঠানে যারা চাকুরি করছেন, যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা রয়েছেন তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছে৷ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক চীনে করোনার প্রকোপ শুরুর পর বলেছিল, বাংলাদেশের প্রায় নয় লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারাতে পারে৷ তবে এখন তৈরি পোশাক খাতেই অনেক শ্রমিকের চাকুরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
খাদ্য নিরাপত্তা
গত বছরের মে থেকে চলতি বছরের এপ্রিল, এই সময়ে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩.৫৩ লাখ মেট্রিক টন৷ নতুন বছরে তা ১০ লাখ মেট্রিক টন বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডিএ৷ সরকারের খাদ্য গুদামে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল মজুদ আছে৷ বোরো মৌসুমে আরো ২০ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহ করবে সরকার৷ সেক্ষেত্রে খাদ্যাভাব দেখা দেয়ার আশংকা তেমন নেই৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের হাতে খাদ্য কেনার টাকা থাকবে কিনা৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
দারিদ্র্য বাড়ছে
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সোয়া তিন কোটির বেশি৷ এর বাইরে গত দেড় যুগে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন৷ উপার্জন না থাকলে দ্রুতই তারা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন৷ ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে করোনার প্রভাবে দেশের নিম্নবিত্তের আয় ৭৫ ভাগ কমে গেছে, হতদরিদ্র বা যাদের দৈনিক আয় ১৬০ টাকার কম এমন মানুষের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সরকারের প্রণোদনা
অর্থনীতি বাঁচাতে বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের সরকারও আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, যার আকার ৯৫ হাজার কোটি টাকার বেশি৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প আর কৃষি খাতে ঋণ হিসেবে৷ পাশাপাশি লক-ডাউনের কারণে যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের ব্যাংক হিসাব তৈরি করে এককালীন নগদ অর্থ প্রদানের কথা বলা হয়েছে৷ প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোরও৷
ছবি: Reuters/A. Rahman
টাকার সন্ধান
বাজেটের ঘাটতি মেটাতে এরিমধ্যে ব্যাংক থেকে সারাবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ করে ফেলেছে সরকার৷ নতুন ঋণ নেয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে৷ বিভিন্ন খাতের ব্যয় কমিয়েও অর্থ সংস্থানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা ছাপিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেতে পারে৷ তবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, এমন আশঙ্কায় টাকা ছাপানোর পক্ষে নন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ৷
ছবি: DW
মন্দার শঙ্কা
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মহামন্দার আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা৷ এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও৷ এরইমধ্যে চলতি বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি৷ মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশ কতটা সামলাতে পারবে তা বৈশ্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি নির্ভর করছে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার উপরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা কতটা
রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ২৭৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন৷ মোট করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ২৬৮ জন৷ মোট প্রাণ হারিয়েছেন ৩২৮ জন৷ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে৷ পাশাপাশি বড় ধরনের চাপ সামলাতে হবে স্বাস্থ্যখাতকে৷
এরইমধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা চরমভাবে ফুটে উঠেছে৷ এখন ৪১টি সেন্টারে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ঢাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল রয়েছে আটটি৷ জেলা হাসপাতালগুলোতে আলাদা করোনা ইউনিট করা হয়েছে৷ উপজেলা পর্যায়ে করা হয়েছে আইসোলেশন সেন্টার৷ কিন্তু তারপরও পরীক্ষার এবং চিকিৎসার অপ্রতুলতা আছে৷ অন্যদিকে সাধারণ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাও অনেকটা ভেঙে পড়েছে৷
এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা দরকার৷ এটা এখন প্রমাণিত যে এই দুই খাতে বরাদ্দই হলো সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ৷ ভিয়েতনামের মত দেশ তা প্রমাণ করেছে৷ আমরা দুর্বল বলেই করোনা নিয়ে কোনো গবেষণা করে ভবিষ্যত নির্দেশনা দিতে পরছি না৷ করোনা হাসপাতালগুলোতে মাত্র ২০০ আইসিইউ বেড আছে৷ তাহলে কিভাবে আমরা যুদ্ধ করবো?’’
চলতি বাজেটে স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা৷ যা জাতীয় বাজেটের চার দশমিক ৯২ শতাংশ৷ বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জনপ্রতি বরাদ্দের পরিমান বছরে মাত্র ১৪২৭ দশমিক ৭৭ টাকা৷ সেখানে আছে দুর্নীতির অভিযোগও৷ এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘এই খাতে দুর্নীতি ঢাকতে এখন অনেক অসত্য তথ্য দেয়া হচ্ছে৷’’
কী সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত?
ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী
This browser does not support the audio element.
ইউরোপ সহ বেশ কিছু দেশে লকডাউন পরিস্থিতি তুলে নেয়া হচ্ছে৷ ধীরে ধীরে অর্থনীতিকে সচল করার পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা৷ বাংলাদেশে কি তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে? বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘সুস্থ মানুষই অর্থনীতি সচল রাখে৷ তাই মানুষই যদি টিকে না থাকে তাহলে অর্থনীতি সচল থাকবে কিভাবে৷ এটা শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো দুনিয়ারই পরিস্থিতি৷ আমাদের এখানে সরকারি চাকরিজীবী আর বড় কর্পোরেট খাতের লোকজন এখনো বেতন পাচ্ছে৷ কিন্ত কতদিন পাবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷’’
এই পরিস্থিতিতে সতর্ক ও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন৷ তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের সামনে এখনো সময় আছে, সুযোগ আছে৷ কারণ আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিমান তুলনামূলকভাবে এখনো কম৷ কিন্তু সিদ্ধান্ত সঠিক না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে৷ যদি এটা বেড়ে যায় তাহলে চিন্তা করুন খাগড়াছড়ির মত জায়গার কতজনকে আমরা ঢাকায় এনে চিকিৎসা দিতে পারব৷ আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিস্থিতি সামলাতে পারবে?’’
এহতেশামুল হক চৌধুরীর মতে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন অঞ্চলকে ভাগ করা যেতে পারে৷ সেখানে ‘রেড জোন', ‘ইয়োলো জোন’, ‘গ্রিন জোন’ থাকবে, যা ভারতেও করা হয়েছে৷ এক এক জায়গার পরিস্থিতি অনুযায়ী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করা যেতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘জীবন ক্ষতিগ্রস্থ হলে অর্থনীতিও বাঁচে না এটা আমাদের মনে রাখতে হবে৷ তাই দু’টোর মধ্যে একটি সমন্বয় করতে হয়৷’’
এই বিষয়ে ড. নাজনীন আহমেদের পরামর্শ, ‘‘সিদ্ধান্ত নিতে হবে হট স্পট চিহ্নিত করে৷ সেখানে আমাদের কড়াকড়ি আরোপ করতেই হবে৷ আর যেখানে সংক্রমণ কম বা পরিস্থিতি ভালোর দিকে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে হবে৷ ঢালাওভাবে সবকিছু খুলে দেয়া যাবে না৷ একটা ১০ ফুট বাই আট ফুট দোকানে তো সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব নয়৷ আমাদের ঈদের জন্য দোকান খোলার দরকার নাই৷ আর যেসব দোকান খোলা রাখা দরকার সেসব দোকানে হোম ডেলিভারি চালু করতে হবে৷’’
তিনি মনে করেন ,‘‘জীবন না অর্থনীতি সেটা নিয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ মানুষ বাঁচলে অর্থনীতি বাঁচবে৷ আবার অর্থনীতি ধসে গেলে মানুষের বড় বিপর্যয়৷ তাই এখানে সরাসরি কোনো উত্তর নেই৷ সর্বাধিক বেনিফিট যেভাবে হয় আমাদের সেই বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ আর সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে মানুষ৷ সিদ্ধান্ত হবে মানুষের জন্য৷ বেঁচে থাকার জন্য৷’’
করোনা কালে ঈদ শপিং
ঈদ সামনে রেখে ১০ মে থেকে বাংলাদেশে দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ যা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা৷ ছবিতে দেখে নেওয়া যাক কেমন চলছে ঈদ শপিং৷
ছবি: Sazzad Hossain
আড়ংয়ে ভিড়
দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড আড়ং এর শোরুমে ক্রেতাদের ভিড়৷ যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
ক্রেতাদের লাইন
মিরপুর রোডে সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে আড়ং এর শোরুমের বাইরে ক্রেতাদের লম্বা লাইন৷
ছবি: Sazzad Hossain
ফুটপাতের ভিড়
রাজধানীর গাউছিয়ায় দোকান না খুললেও ফুটপাতে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা৷ যেখানে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মানার আগ্রহ কোনো পক্ষেরই নেই৷
ছবি: Sazzad Hossain
জুতার দোকান
এলিফ্যান্ট রোডের এই জুতার দোকানেও একসঙ্গে থাকার নিয়মের অতিরিক্ত ক্রেতা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
বিক্রেতাদের আক্ষেপ
ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটে ফুটপাত থেকে কাপড় কিনছেন নিম্ন আয়ের মানুষ৷ ক্রেতা না থাকার আক্ষেপ করছেন বিক্রেতারা৷
ছবি: Sazzad Hossain
জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার
ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে বাটার শোরুম থেকে ক্রেতা বেরিয়ে যাওয়ার পর দরজার হাতল জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করছেন একজন বিক্রয়কর্মী৷
ধানমণ্ডির ২৭ নম্বরে একটি শোরুমে ঢোকার মুখে ক্রেতাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
জীবাণুনাশক টানেল
রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলের সামনে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন করা হয়েছে৷ ক্রেতারা টানেলের ভেতর দিয়ে মলে প্রবেশ করছেন৷
ছবি: Sazzad Hossain
ক্রেতার অপেক্ষায়
ঈদে পুরুষদের পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবির চাহিদা থাকে সব থেকে বেশি৷ মিরপুর রোডে সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের এই দোকানটি নানা ধরনের পাঞ্জাবির পসরা সাজিয়ে বসলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না৷
ছবি: Sazzad Hossain
আসছে শিশুরাও
শিশুদের নিয়ে কেনাকাটা করতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকে তা মানছেন না৷ মাপ মত সঠিক পোশাকটি বেছে নিতে শিশুদের সঙ্গে নিয়েই কেনাকাটা করছেন৷
ছবি: Sazzad Hossain
মশারি
করোনা ভাইরাস প্রকোপের মধ্যে ঢাকায় ডেঙ্গুও ছড়াচ্ছে৷ তাই মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে এসময় ফুটপাত থেকে দেখেশুনে মশারি কিনছেন এক নারী৷
ছবি: Sazzad Hossain
সতর্কবার্তা
সরকারের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন দোকানে স্বাস্থ্যসুরক্ষা সম্পর্কিত সতর্কবার্তার নোটিস দেখা যায়৷
ছবি: Sazzad Hossain
হ্যান্ড স্যানিটাইজার
হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে ক্রেতার অপেক্ষায় এক বিক্রেতা৷
ছবি: Sazzad Hossain
বন্ধ বসুন্ধরা সিটি
রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ শপিংমল বসুন্ধরা সিটি বন্ধ রাখা হয়েছে৷ কর্তৃপক্ষরা বলেছেন, দোকান মালিক ও কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে না ফেলতে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
ছবি: Sazzad Hossain
বিকিকিনি কম
প্রায় দেড় মাস পর দোকান খোলার অনুমতি পেলও করোনা সংক্রমণের ভয়ে ক্রেতারা আসছেন না বলে আক্ষেপ বিক্রেতাদের৷ বলেন, বেচা-কেনা একদমই নেই৷