1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা ও আমফানে বিবর্ণ ঈদ 

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৩ মে ২০২০

করোনার পর আমফানের কোপ৷ এই দুয়ের প্রভাবে কলকাতায় ঈদের খুশি এবার ম্লান৷ লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হলেও এখনো নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে৷ কিন্তু, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদের প্রাকপর্বের ছবি একেবারেই আলাদা৷

কলকাতার একটি ঈদগাহ ময়দানে ঝড়ের কবলে গাছ ভেঙ্গে পড়েছে৷ ছবি: DW/P. Samanta

লকডাউনের ফলে প্রায় দুমাস কোনো উপার্জন নেই৷ তার উপর সামাজিক দূরত্বের বিধিতে ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছিল৷ তবু মাথার উপর ছাদ ছিল, খেতে ছিল ফসল৷ ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে সেটুকুও হারিয়েছে বহু মানুষ৷ যারা ঘরে বসে ঈদের নামাজের মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু এলাকায় তাঁদের এখন ঠাঁই হয়েছে ত্রাণ শিবিরে৷ বাদুড়িয়ার ২নং ব্লকের কাশেম শেখ, ইব্রাহিম মোল্লারা ঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন আর উৎসবের কথা ভাবতেই পারছি না৷ একদিকে হাতে টাকা নেই, অন্যদিকে ঝড়ে শেষ সম্বলটুকু উজাড় হয়ে গিয়েছে৷ এখন বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় চাহিদা৷’’

ঝড়ের দাপটে অনেক জায়গায় ঈদগাহর ক্ষতি হয়েছে৷ জল জমে আছে সেখানে৷ অনেক মসজিদের চাল উড়ে গিয়েছে৷ প্রতি বছর রমজান মাসের গোড়া থেকেই কলকাতার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোর ছবি বদলাতে থাকে৷ মল্লিকবাজার, জাকারিয়া স্ট্রিট, রাজাবাজার, মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের অস্থায়ী দোকানপাট বসে যায়৷ কলকাতার ইলিয়ট রোডে, ট্রামলাইনের ধারে প্রতি বছর এই সময় দোকান বসাতেন মকবুল ইলাহি, আবু হোসেনরা৷ কেউ ফল বিক্রি করতেন, কেউ সেমাই৷ কিন্তু, এখন এসব রাস্তায় পড়ে রয়েছে ঝড়ের চিহ্ন৷ 

সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে জামাকাপড়ের ব্যবসায়৷ সম্প্রতি কিছু দোকান খুললেও কেনাবেচা নেই৷ হাওড়ার মঙ্গলাহাট থেকে পোশাক কিনে নিয়ে যেতেন বর্ধমানের ব্যবসায়ী অপূর্ব মাঝি৷ তিনি বলেন, ‘‘দোকান খুললেও খদ্দের হচ্ছে না৷ সবার কাজকর্ম বন্ধ৷ মানুষের হাতে টাকা নেই৷ তার উপর ঝড় এসে সব শেষ করে দিল৷’’ হুগলির চাঁপদানির চটকলের শ্রমিক মাসুদুল হক বলেন, ‘‘মিলে কাজ হলে টাকা পাই৷ এখন উৎপাদন বন্ধ৷ রোজার ফল কিনতে পারছি না, শশা কিনে চালাচ্ছি৷ নতুন পোশাকের কথা ভাবতেই পারছি না৷’’

কামাল হোসেন

This browser does not support the audio element.

পশ্চিমবঙ্গের ইমাম সংগঠনের পক্ষ থেকে লকডাউনের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি লিখে আবেদন জানানো হয়েছে, ঈদের জন্য যেন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা না হয়৷ কলকাতার রেড রোডে সবচেয়ে বড় জমায়েত হয়৷ চার লক্ষ মানুষ সেখানে জড়ো হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন৷ আয়োজক খিলাফত কমিটি বন্ধ রেখেছে এই নামাজের আয়োজন৷ খিলাফত কমিটির কলকাতা শাখার সম্পাদক সৈয়দ মহম্মদ সাঈদ বলেন, ‘‘কলকাতা রেড জোনে রয়েছে৷ এখানে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে করা সম্ভব নয়৷ রমজান মাসে সকলে ঘরেই নামাজ পড়েছেন৷ ঈদের দিনও পড়ুন৷’’ নাখোদা মসজিদ, টিপু সুলতান মসজিদের ক্ষেত্রে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ওয়াকফ বোর্ডের পক্ষ থেকে রাজ্যের ৪০ হাজারের বেশি মসজিদের ইমামদের বলা হয়েছে, ঈদের দিন জমায়েত করা যাবে না৷ কিন্তু, যিনি আশ্রয় হারিয়েছেন, তিনি কোথায় প্রার্থনা জানাবেন? কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ সংলগ্ন ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেহানা খাতুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ঝড়ে যা মানুষের ক্ষতি হয়েছে, এখন আমরা সেসব সামলাতে ব্যস্ত৷ আর করোনার সমস্যা মানুষ আগেই বুঝতে পারছে৷ এখন আর উৎসব নিয়ে মাথা ঘামানোর অবস্থা নেই৷’’

ঈদের মুখে সর্বত্র মসজিদ, ঈদগাহ সেজে ওঠে৷ নতুন রঙের পোঁচ পড়ে, আলো জ্বলে ওঠে৷ করোনা ও আমফানের সাঁড়াশিতে এবার সবই অন্ধকার৷ কলকাতার বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক কামাল হোসেন বলেন, ‘‘চারপাশে মৃত্যুর হাহাকার৷ এর মধ্যে উৎসব পালনের মানসিকতাই নেই৷ মন ভালো না থাকলে উৎসবের অর্থ থাকে না৷ প্রতি বছর আনন্দ করি৷ এবার ঘরেই ঈদ কেটে যাবে৷’’ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ