করোনা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
২৭ আগস্ট ২০২০করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের দেশে আমরা সব কিছু নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়েছি৷ আমাদের অনেক পরামর্শই উপেক্ষিত হয়েছে৷ আর এই দেশে অনেক কিছুই মানানো সম্ভব হয় না৷ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানবে কে?’’
২৬ আগস্টের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় মারা গেছেন চার হাজার ৮২ জন৷ ওইদিন ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৫৪ জন৷ এপর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ দুই হাজার ১৪৭ জন৷ আর ১৫ হাজার ৭০ টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৫১৯ জন৷ এপর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৬১টি৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের শতকরা হার ১৬.৭২ ভাগ৷ এপর্যন্ত গড় শনাক্তের হার ২০.৩৪ ভাগ৷ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১.৩৫ ভাগ৷
বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় গত ১৮ মার্চ, প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ৮ মার্চ৷
ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘মে মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত সংক্রমণের গড় হার শতকরা ২০ ভাগের নিচে ছিলো৷ এরপর থেকে তা গড়ে ২০ ভাগের উপরে উঠে যায়৷ একক দিন হিসেবে আগস্ট মাসের ১৮ তারিখে সংক্রমণের হার ২০ ভাগের নিচে চলে যায়৷ ২০ তারিখে আবার ২০ ভাগের উপরে চলে যায়৷ এখন আবার ২০-এর নিচে আছে৷ কিন্তু এটা দিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না যে এখানে করোনা সংক্রমণ কমছে৷ আমাদের আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে৷ দেখতে হবে কমার ধারা অব্যাহত থাকে কিনা৷’’
বাংলাদেশে করোনা টেস্ট এবং হাসাপাতালে ভর্তির হার দুটোই কমছে৷ কিন্তু মৃত্যু কমছে না৷ আবার একই অবস্থায় সংক্রমণ ও মৃত্যু হার প্রায় একই পর্যায়ে রয়েছে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে৷ এর কারণ কী? বাংলাদেশে করোনা কি দীর্ঘয়িত হবে? এর জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে করোনা আসলে কোন অবস্থায় রয়েছে তা এখন বোঝা কঠিন৷ টেস্ট কমলে তো সংক্রমণের হার কিছুটা কম দেখা যাবে৷ আর টেস্টের প্রতি মানুষের নানা কারণে আগ্রহও কমে গেছে৷ এখন করোনার সাধারণ লক্ষণে মানুষ আর টেস্ট করায় না৷ হাসপাতালেও যায় না৷ আর যে টেস্ট করা হচ্ছে তাও লক্ষ্যহীন৷ সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা থেকে প্রতিদিন কতগুলো নমুনা পরীক্ষা করা হবে৷ আর সেটা করা হলে প্রকৃত সংক্রমণ বোঝা যাবে৷
ডা. নজরুল ইসলাম বলেন মনে করেন, ‘‘দেশে করোনা আক্রান্ত আসলে কত লোক আছেন তা আমরা জানি না৷ টেস্টের ভিত্তিতে সংক্রমিত ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে৷ কিন্তু বাস্তবতা সেটা নাও হতে পারে৷ কত লোক করোনা ছড়াচ্ছে তাও বোঝা যাচ্ছেনা৷ কেউ মাস্ক পরছেন, কেউ পরছেন না৷ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন, কেউ মানছেন না৷ ফলে এখানে করোনা ছড়ানোর হার বেশি সেটা বোঝা যায়৷ এখন দেখা যাচ্ছে ঢাকায় সংক্রমণের হার অনেক বেশি এবং বাড়ছে, প্রত্যন্ত এলকায় হয়তো কম৷ কিন্তু সেটার গড় করে করোনা কমছে তা বলা যাবেনা৷’’
বাংলাদেশে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে করোনা কি এখানে চূড়ায় পৌঁছেছে? তার জবাব কিন্তু মিলছে না৷ চিকিৎসকেরা বলছেন যে, চূড়ায় পৌঁছানোর পর তা দ্রুত নেমে যায়৷ কিন্তু এখানে অনেক দিন ধরে একই পর্যায়ে আছে৷ সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘‘করোনায় দ্বিতীয় ওয়েভ অনেক পরের কথা৷ বাংলাদেশে প্রথম ওয়েভই এখনো শেষ হয়নি৷ প্রতিদিনই ৪০-৫০ জন করে মানুষ মারা যাচ্ছে৷ মৃত্যু তো কমছে না৷ আর যদি এখানে দ্বিতীয় ওয়েভ হয় তাহলে তা ভয়ঙ্কর হবে৷ সেটা হবে শীতের সময়৷’’
এখন বাংলাদেশে অ্যান্টিবডি টেস্ট জরুরি বলছেন তারা৷ তাহলে বোঝা যাবে ইমিউনিটি এখানো কতটা হয়েছে৷ অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু শুরু হতে সময় লাগবে৷ বাংলাদেশের চেয়ে বিশ্বের অনেক দেশে মৃত্যু ও সংক্রমণ বেশি হলেও তারা কিন্তু সেটা কমিয়ে এনেছেন৷ ডা. জাহিদ বলেন, ‘‘এখানে প্রবণতাই হলো অস্বীকার করা৷ তাহলে আর কী হবে!’’
আর ডা. নজরুল ইসলামের মতে, ‘‘আমরা এখানে করোনা প্রতিরোধে তখনো চীনা পদ্ধতি আবার কখনো ইটালীয় পদ্ধতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি৷ এখন তো যে যার মত চলছেন৷ নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়েছি৷’’
২১ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...