1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা-গরিবদের বাঁচানোর বাজেট চাই

৩১ মে ২০২১

অনেক মধ্যবিত্তও করোনার আঘাতে নেমে গেছেন দরিদ্রের কাতারে৷ এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে নতুন দরিদ্র এখন প্রায় আড়াই কোটি৷ অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজেটে দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে এই অর্থনৈতিক, সামাজিক সংকট থেকে মুক্তি কঠিন হবে৷

Bangladesch | Coronavirus | Hilfsgüter
ছবি: DW

নির্মাণ শ্রমিক হাসানের আয় নির্ভর করে প্রতিদিনের কাজের উপর৷ করোনার আগে গাজীপুরে একজন ঠিকাদারের অধীনে তিনি কাজ করতেন, দৈনিক সাড়ে ৫০০ টাকা মজুরিতে৷ পাশাপাশি আরো কিছু কাজ মিলিয়ে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা তার হাতে আসত অনায়াসে৷ তবে সময়টা এত দ্রুত বদলে যাবে সেটি অনুমাণ করেননি মোটেও৷ জুলাই নাগাদ কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়৷ ফিরে যান নিজ জেলা নোয়াখালীতে৷ তিনমাস বেকার বসে থাকতে হয়েছে তাকে৷ অক্টোবর নাগাদ একটি কাজ জোটে, কিন্তু স্বস্তি ফেরেনি তাতে৷ হাসান জানান, ‘‘গত দুই-তিন মাস ধরে একদিন কাজ হলে তিনদিন হয় না৷ কাজ না হলে টাকাও নাই৷ তারমধ্যে মজুরি ঠিকঠাক পাই না৷ মাসে পাঁচ হাজার টাকাও জোটে না৷’’

করোনা যাদের দারিদ্র্যরেখার নীচে নামিয়ে এনেছে হাসান তাদেরই একজন৷ তার মতো এমন মানুষের সংখ্যা মোটেও কম নয়৷ পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফল অনুযায়ী সেটি দুই কোটি ৪৫ লাখ৷ গত মার্চ পর্যন্ত মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এত বিপুল মানুষের আয়ের স্তরে এই পরিবর্তন এসেছে৷

ড. সেলিম রায়হান

This browser does not support the audio element.

সরকারের হিসাবে ২০১৮-১৯ সালে জনসংখ্যার সাড়ে ২০ শতাংশ বা সোয়া তিন কোটি মানুষ দরিদ্র ছিল৷ অর্থাৎ নতুনসহ প্রায় ছয় কোটি মানুষ এখন দারিদ্র্যের কাতারে রয়েছেন৷ এর আগে বাংলাদেশের আরেক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং- সানেমের জরিপেও এমন তথ্য উঠে এসেছে৷ গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী  দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷

ঠিক এমন এক বাস্তবতায় আগামী বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার৷ 

দারিদ্র্যের কাতারে নেমে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত

করোনায় বিপুল পরিমান মানুষ চাকরি হারিয়েছে৷ অনেকের কমে গেছে আয়৷ বিভিন্ন জরিপেও তা ধরা পড়েছে৷ গত বছর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর এক জরিপে দেখা যায় করোনার কারণে নতুন করে ১৩ শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছে৷ বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে মহামারির কারণে লকডাউনের প্রথম ধাক্কায় কাজ হারিয়েছিলেন ৬০ ভাগ মানুষ৷ তাদের অনেকে পরবর্তীতে কাজে ফিরলেও আয় কমে গেছে৷ সানেম এর আরেক জরিপে ৬২ শতাংশ কর্মী ও শ্রমিক বলেছেন, ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বরে তাদের মজুরি আগের বছরের চেয়ে কমেছে৷

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান

This browser does not support the audio element.

এই ধাক্কায় বিপাকে আছেন মধ্যবিত্তরাও৷ সানেমের প্রধান নির্বাহী ড. সেলিম রায়হান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তরাও যথেষ্ট সংকটে পড়েছেন৷ আমাদের গবেষণায়ও তাই উঠে এসেছে৷... হিসাবে দেখা যাচ্ছে আড়াই কোটি থেকে সাড়ে তিন কোটি নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে একটা বিশাল অংশ নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নিম্ন আয়ের মানুষ৷ তারা দরিদ্র ছিল না এর আগে৷ তাদের একটা বড় সমস্যা হল এই পরিবারগুলোর আগে কোনো মানুষ বা সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া বা পাওয়ার সুযোগে ছিল না৷ ...এই সংকটের সময় তারা ঠিক সাহায্যও চাইতে পারছেন না৷ তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য কোন ম্যাকানিজমও নেই পরিস্কার৷’’

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে তেমনই একজন ব্যক্তি সরকারের তথ্য সহায়তা কেন্দ্রে ফোন করে খাদ্য চেয়ে উলটো শাস্তি পেয়েছিলেন৷  এই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ব্যাপক সমালোচনা হয়৷ পিপিআরসি এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানও বলেন, ‘‘মধ্যবিত্তের একটা অংশ নতুন দরিদ্রদের মধ্যে ঢুকে গেছে৷ এমনও আমরা দেখেছি, শিক্ষক ছিল কিন্তু কাজ না পেয়ে অদক্ষ একটা কাজ করতে হচ্ছে৷’’

তিনি মনে করেন, তাদের জন্য মূলত খাদ্য বা ভাতা নয় প্রয়োজন নগদ অর্থ সহায়তা, ‘‘এককালীন একটা টাকা দেয়া গেলে তাদের জন্য সঙ্গত হতো৷ এর বাইরে এরা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায়৷ সেখানেও সহযোগিতা দরকার,’’ বলেন এই অর্থনীতিবিদ৷ 

বদলাতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি

দরিদ্র ও বঞ্চিতদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি নামে সরকারের একটি কর্মসূচি রয়েছে৷ গত বছর বাজেটেও এ খাতে এক কোটির কিছু বেশি মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা বাবদ অর্থ বরাদ্দ করেছিল সরকার৷ প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় এ বছরও তার আওতা কিছুটা বাড়বে বলে জানা যাচ্ছে৷ কিন্তু অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, করোনার বাস্তবতায় দারিদ্র্যের চিত্রে যে পরিবর্তন এসেছে শুধু এই কর্মসূচি দিয়ে তা মোকাবিলা করা যাবে না৷

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার যে কর্মসূচি সেটা মূলত গ্রামীণ দরিদ্রদের নিয়ে৷ নগর দরিদ্রদের নিয়ে কোন কর্মসূচি নাই৷ এই বাজেটে এই নগর দরিদ্রদের একটা বড় সহযোগিতা দেয়া দরকার৷ দ্বিতীয়ত, নতুন দরিদ্র যারা তারা কিন্তু ৫ কেজি, ১০ কেজি চালের সহযোগিতা চাচ্ছে না৷ তারা দারিদ্র্যের উপরে অবস্থান করছিল কিন্তু এখন পড়ে গেছে৷ ওদের আর্থিক সহায়তা দরকার৷''

তিনি বলেন, সরকার গত বছর ক্ষতিগ্রস্তদের আড়াই হাজার টাকা করে দেয়া শুরু করেছিল৷ ৩৪ লাখ মানুষ সেই টাকা পেয়েছেন৷ তবে এই তালিকা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে৷ ব্র্যাকের এই চেয়ারম্যান মনে করেন, শুধু পুরাতন দরিদ্র নয়, যেই ২ কোটি ৪৫ লাখ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে, সবারই এমন সহযোগিতা দরকার৷

কিন্তু সমস্যা হলো পুরাতন বা নতুন, দেশের দরিদ্র মানুষের সঠিক কোনো পরিসংখ্যানই নেই সরকারের কাছে৷ ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘যারা পুরনো তাদেরই সঠিক তথ্য নেই৷ এজন্য তাদেরই সহায়তা দিতে গিয়ে সরকার নানা ধরনের সমস্যায় পড়েছে আমরা গত বছর দেখেছি৷ এখন নতুন করে যারা দরিদ্র হয়েছেন তাদের তালিকাতো কিছুই নেই৷ কোন ধরনের তথ্যই নেই সরকারের কাছে৷ সুতরাং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যেভাবে বাজেটে প্রস্তাব করা হয় গতানুগতিকভাবে, সেই গতানুগতিক প্রক্রিয়া ও কর্মসূচির মাধ্যমে পুরনোদের কাছে পৌঁছানোর সমস্যা আগেই আছে, নতুনদের কাছে পৌঁছানো আরো ভয়ানক সমস্যা৷ আমি মনে করি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন কর্মসূচি দরকার৷ শুধু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বা তার বরাদ্দ ঘোষণা করাই যথেষ্ট নয় নিশ্চিত করতে হবে এই বরাদ্দ যাতে পৌঁছতে পারে, নতুন ও পুরাতন দরিদ্র যারা তাদেরকে আইডেন্টিফাই করা যায়৷’’

কিন্তু প্রশ্ন হলো এমন চিন্তা কতটা রয়েছে সরকারের? বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নতুন দারিদ্র্যের তথ্য দিলেও তা বিবেচনায় নিচ্ছে না সরকার৷ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, শুধু সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যই তারা গ্রহণ করবেন৷ কিন্তু সেই পরিসংখ্যান এখনও করেনি সংস্থাটি৷

ড. সেলিম বলেন, ‘‘আমি যেটা মনে করি সরকারি নীতিনির্ধারক যারা আছেন তাদেরকে একনলেজ করতে হবে পরিস্থিতি৷ যদি তারা মনে করেন এরকম হয়নি তাহলে কিন্তু এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা খুবই সংকটে আছেন তাদের সহযোগিতা করতে পারবেন না৷ দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের চিহ্নিত করে তাদের সহযোগিতায় সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে৷ ....বাজেটে আমি চাই শুধু বরাদ্দ না এই ম্যাকানিজমগুলো সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া৷’’

তার মতে, পুরো বাজেটের প্রধান মনযোগ থাকা উচিত তিন জায়গায়৷ দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং অবশ্যই স্বাস্থ্যখাত৷ তা না করে গতানুগতিকভাবে অন্যান্য বছরের মতো করে বাজেট প্রণয়ন করা হলে ‘বর্তমান ভয়াবহ সংকট’ থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ