করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এই প্রথম এক দিনে একশরও বেশি মানুষের মৃত্যু হল চীনে। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল হাজার।
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে এক হাজারেরও বেশি লোকের। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে সোমবার শুধু হুবেই প্রদেশেই মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। আর হুবেইয়ের বাইরে মৃত্যু হয়েছে আরও পাঁচ জনের। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এক দিনে এটাই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু।
সোমবার বেজিংয়ের একটি হাসপাতালে রোগীদের দেখতে গিয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মুখে মাস্ক লাগিয়ে হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেন। হাসপাতালেই তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখনও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। তবে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য চীন সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু। সোমবার সংস্থার তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, করোনা মহামারির চেহারা নিয়েছে। পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে চলে না যায়, তার জন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
বাজারেও করোনার আঘাত
করোনা ভাইরাসের প্রভাব স্বাস্থ্য থেকে এসে পড়েছে বাজারেও৷ কীভাবে সামলাচ্ছে তারা করোনার দাপট, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: VLADIMIR MARKOV via REUTERS
বাড়ছে প্রতিরোধক বিক্রি
করোনা ভাইরাস ছড়ানোর মতোই দ্রুতগতিতে বাড়ছে জীবাণুর ভয়৷ সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা ধরনের জীবাণু-প্রতিরোধকের চাহিদা৷ কেমিক্যাল সংস্থাগুলির বিভিন্ন পণ্যের বিক্রিও বাড়ছে৷ কিন্তু পণ্যবাহী জাহাজ চীনের সীমান্তে আটকা থাকার ফলে নতুন মাল পৌঁছতে পারছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
রেস্টুরেন্টে ভাঁটা
কেএফসি, পিৎজা হাট বা ম্যাকডোনাল্ডসের মতো ফাস্ট ফুড চেনগুলির রমরমা করোনা ভাইরাসের কারণে আগের মতো নেই৷ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে এই সব দোকান৷ অনলাইনে বিক্রিও বন্ধ৷ অন্যান্য অনলাইন খাবার অর্ডার করার অ্যাপও এখন আর চীনে খাবার সরবরাহ করছে না৷
ছবি: picture-alliancedpa/imaginechina/Y. Xuan
খেলার সামগ্রীতেও করোনার প্রভাব
বিশ্বখ্যাত খেলার সামগ্রীর ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস ও নাইকি সাময়িকভাবে চীনে তাদের বেশির ভাগ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, যেসব দোকানে নাইকি বা অ্যাডিডাসের পণ্য বিক্রি হয়, সেখানেও চলছে কড়া নজরদারি, যাতে করে বিক্রি না হওয়া পণ্যের মাধ্যমে জীবাণু আরো না ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer/Imaginechina
বিপদের ঝুঁকিতে গাড়িপ্রস্তুতকারীরা
জার্মান গাড়ি শিল্পের উপর এই ভাইরাসের ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে, মনে করছেন গাড়ি শিল্প বিশেষজ্ঞ ফার্ডিনান্ড ডুটেনহ্যোফার৷ বিখ্যাত গাড়িপ্রস্তুতকারী সংস্থা ফক্সভাগেনের মোট ৩৩টি কারখ্না রয়েছে চীনে, যার মধ্যে বেশ কটি আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে৷ গাড়ি প্রস্তুতের কাজে বাধা আসলেও ডেলিভারির কাজ ঠিকই চলছে এখনও৷
ছবি: Imago Images/Xinhua
সাবধানী হন্ডা
করোনা ভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র উহান অঞ্চলে জাপানি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা হন্ডার তিনটি কারখানা আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে৷ এখনও যদিও স্পষ্ট নয় যে কবে থেকে কাজ আবার শুরু হবে, কিন্তু তবুও সাবধানে ফাঁকি রাখতে চান না হন্ডা কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাহিদামত পণ্য নেই বাজারে
বর্তমান বিশ্বে এক দেশের বাজারের সাথে আরেক দেশের শিল্প খুব গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট থাকায় হ্যুনডাই বা হন্ডার মতো সংস্থার প্রস্তুত বন্ধ থাকার প্রভাব পড়ছে বিশ্বের বাজারেও৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় এই সপ্তাহেও বন্ধ থাকবে হ্যুনডাই গাড়ির প্রস্তুতের কাজ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই ধারা অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে৷
ছবি: Reuters/Aly Song
ফ্রাংকফুর্টেও করোনার প্রভাব
চীনের সাথে একাধিক দেশ ইতিমধ্যে বন্ধ করেছে বিমান পরিষেবা৷ এই বন্ধের ফলে বহু ব্যবসায়ী প্রাংকফুর্টের বিখ্যাত ‘আম্বিয়েন্টে’ শিল্পমেলায় তাদের পসরা নিয়ে আসতে পরেননি৷ যদিও জার্মানির সাথে উহানের কোনো সরাসরি বিমান ব্যবস্থা নেই, তবুও সাবধান থাকতে এয়ারপোর্টে বিশেষ আইসোলেশন ইউনিট (চীনফেরত যাত্রীদের জন্য বিচ্ছিন্ন বলয়) রাখা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Schreiber
7 ছবি1 | 7
রবিবার চীনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। কিন্তু রবিবার সেই চিত্রটাও বদলে গিয়েছে। একদিনে ১০০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার। চীনের এক সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি বলেই মনে করছেন সে দেশের সাধারণ মানুষ। হুবেই সহ একাধিক এলাকা গত এক মাস ধরে কার্যত অবরুদ্ধ। সাধারণ মানুষ বাড়ি থেকে বেরতেও ভয় পাচ্ছেন।
হু জানিয়েছে, চীনের বাইরে ২৪টি দেশে এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৯। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে দুই জনের।
এ দিকে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনের অর্থনীতি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি চীনের অর্থ দফতরের একটি রিপোর্ট বলছে, শেষ কোয়ার্টারে দেশের অর্থনীতি এক শতাংশ নীচে নেমেছে। মনে রাখা দরকার, এর আগে ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের প্রকোপে এক অর্থবর্ষে চীনের অর্থনীতি ২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী অর্থবর্ষে চীনের জিডিপি ০ দশমিক ২ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
চীনের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাতেও। অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের বহু গাড়ি এবং ইলেকট্রনিক সংস্থা চীন থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করে। গত দেড় মাসে তা কার্যত বন্ধ। টয়োটাও তাদের চীনের কারখানা বন্ধ রেখেছে৷ কোনও দেশ তাদের প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে না চীনে। চীনের প্রতিনিধিরাও বাইরে যাওয়ার ভিসা পাচ্ছেন না। বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানিও। তার প্রভাব স্বাভাবিকভাবে চীনের ও বিশ্বের অর্থনীতির ওপর পড়বে৷