গোটা বিশ্বে দ্রত করোনা টিকা সরবরাহে সম্মতি জানালেও টিকা কোম্পানিগুলির মেধাসত্ত্ব প্রত্যাহারের বিরোধিতা করেছে জার্মানি৷ ইইউ নেতারা সপ্তাহান্তে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে করোনা টিকার মেধাসত্ত্ব সাময়িক বাতিল করার উদ্যোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিবাচক সাড়া দিলেও জার্মানি বিরোধিতা করছে৷ বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশে করোনা টিকার অভাব মেটাতে মেধাসত্ত্ব মোটেই অন্তরায় নয় বলে যুক্তি দেখিয়েছে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার৷ জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, করোনা টিকার উপর মেধাসত্ত্ব তুলে নিলে সার্বিকভাবে টিকা উৎপাদনের উপর কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে না৷ তার মতে, উৎপাদন ক্ষমতা এবং উচ্চ মানদণ্ডই আপাতত প্রধান সমস্যা৷ টিকা কোম্পানিগুলি অনেক দিন থেকেই বিভিন্ন দেশে সহযোগীদের সঙ্গে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ মডার্না কোম্পানি গত অক্টোবর মাসেই করোনা টিকার মেধাসত্ত্বের উপর দাবি শিথিল করলেও কোনও কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগে সেই টিকা তৈরি করতে পারেনি৷
জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৃহত্তর উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন৷ অর্থাৎ তিনিও মনে করেন, যে একমাত্র গোটা বিশ্বে টিকা সরবরাহ করেই করোনা মহামারি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷ স্পান বলেন, সেই লক্ষ্যে করোনা টিকা রপ্তানির পথে বাধা তুলে নেওয়া উচিত৷ মার্কিন প্রশাসন যেভাবে টিকা এবং টিকা উৎপাদনের রপ্তানির পথে বাধা সৃষ্টি করে এসেছে, স্পান পরোক্ষভাবে
উল্লেখ্য, জার্মানির বায়োনটেক কোম্পানি অ্যামেরিকার ফাইজার কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে করোনা টিকা তৈরি করেছে৷ কিউরভ্যাক নামের আর একটি জার্মান কোম্পানিও আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারে৷ জার্মানির সরকার এমন কোম্পানির মেধাসত্ত্ব বাতিল করতে চায় না৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারাও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন৷ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে অ্যামেরিকার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন৷ তিনিও টিকা রপ্তানির উপর নিয়ন্ত্রণ তুলে নেবার পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ তবে বর্তমান সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ইইউ যে কোনো কার্যকর ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাব বিবেচনা করতে প্রস্তুত৷ পর্তুগালের পোর্টো শহরে শুক্র ও শনিবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি উঠে আসবে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ মেধাসত্ত্ব বাতিলের প্রস্তাবের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন৷
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদের মধ্যেও এই প্রস্তাব নিয়ে জোরালো তর্কবিতর্ক চলেছে৷ কমপক্ষে ১৬০টিরও দেশের সমর্থন ছাড়া মেধাসত্ত্ব বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন পেতে পারে৷ এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও টিকা কোম্পানির সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির পক্ষে করোনা টিকা উৎপাদন করা কার্যত অসম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
করোনার ভারতীয় রূপ কতটা ভয়ংকর?
প্রায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে ভারতে৷ ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের ভূমিকা থাকতে পারে৷ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
বি.১.৬১৭
এমন নামেই পরিচিত করোনার নতুন ভারতীয় ধরনটি৷ দেশটিতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ এটি কীনা সেটি অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ তবে সম্ভাব্য একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
কখন থেকে?
গত মার্চে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের কথা জানায়৷ ভাইরাসের এই ধরনটি দুইবার রূপ বদলেছে বলে সেসময় জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷ তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা সেটি এখন তৃতীয়বারের মতো রূপ বদলেছে৷ জিনগত উপাত্তের উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডার জিআইএসএইড-এর (GISAID) তথ্য অনুযায়ী ভারতে বিদ্যমান করোনা ভ্যারিয়েন্টের ৬৩ ভাগই এখন বি.১.৬১৭৷
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
কতটা উদ্বেগের?
প্রথম রূপটি (E484Q) অনেকটা ব্রাজিলে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটানো ভ্যারিয়েন্টের মতো৷ দ্বিতীয়টি (L452R), এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া গেছে৷ এই ধরনটি টিকার রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম এবং বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে৷ আর তৃতীয় রূপটি (P681R) উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটির কাছাকাছি৷
ছবি: picture-alliance/M. Schönherr
কতটা ছড়িয়েছে?
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যাচ্ছে৷ শুধু ভারত নয় এটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশগুলোতেও৷ জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও দেশগুলোতে বি.১.৬১৭ শনাক্ত করেছে৷
ছবি: Xavier Galiana/AFP
মানবদেহে কী করছে?
একাধিক রূপ বদলের কারণে ভাইরাসটি শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে৷ বিশেষ করে এর পক্ষে শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি বা যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও এই ভ্যারিয়েন্টে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: AFP/National Institutes of Health
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় রেখেছে৷ অর্থাৎ, তারা ভাইরাসটি নজরদারিতে রেখেছে, তবে এখনও সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছালে এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করা হতে পারে৷
ছবি: Fabrice Coffrini/AFP/Getty Images
বেশি সংক্রামক নয়?
ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য৷ যুক্তরাজ্যের কোভিড-১৯ জেনোমিকস ইনিশিয়েটিভ এর পরিচালক ড. জেফারি ব্যারেট এর মতে গত কয়েক মাসে ভ্যারিয়েন্টটি বেশ ধীর গতিতে ছড়িয়েছে৷ আর এজন্য তিনি এটিকে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৭ এর মত সংক্রামক নয় বলে মনে করছেন৷
ছবি: PAWAN KUMAR/REUTERS
উপাত্ত কী বলে?
জিনগত বিশ্লেষণে মহারাষ্ট্রে ৬০ শতাংশের বেশি করোনা আক্রান্তের নমুণায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷ তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তারা যত নমুনা পরীক্ষা করেছেন সেটি উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Pradeep Gaur/ZUMA Wire/imago images
টিকায় কি কাজ হচ্ছে?
অন্তত দুইটি গবেষণা বলছে ভ্যারিয়েন্টের এল৪৫২আর রূপটি অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যেতে পারে৷ তবে এর একটি এখনও অপ্রকাশিত এবং অ্যাকাডেমিকভাবে পিআর রিভিউ সম্পন্ন হয়নি৷
ছবি: Anindito Mukherjee/Getty Images
অতিরঞ্জন হচ্ছে?
অনেকে অবশ্য বলতে চাইছেন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় যেসব তথ্য আসছে তার মধ্যে অতিরঞ্জন রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিয়োনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি পি কামিল তাদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন কোন নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই যেখানে বলা হয়েছে এল৪৫২ রূপটি সব ধরনের ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডিকে এড়াতে পারে৷’’ সেটি সম্ভব নয় বলেও মত তার৷