করোনা টিকা না নিলে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জার্মানিতে বিতর্ক
২৬ জুলাই ২০২১
করোনা মহামারির চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কার মুখে জার্মানিতে টিকা না নেওয়া মানুষের উপর আরো চাপ সৃষ্টি করার বিষয়ে বিতর্ক বাড়ছে৷ একদল রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞ এমন দাবি করলেও বাকিরা বিরোধিতা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
কোনো দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশকে করোনা টিকা দিতে পারলে করোনা মহামারি মোকাবিলা অনেক সহজ হয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে ক্ষেত্রে ‘হার্ড ইমিউনিটি' বা গোষ্ঠীগত প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনা ভাইরাসের প্রকোপ অনেক কমিয়ে দেবে৷ ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনের মতো দেশ অন্যদের থেকে আগেই সেই উদ্যোগ শুরু করলেও টিকাপ্রাপ্তদের সংখ্যা একটি মাত্রার পর থমকে যাচ্ছে৷ সহজে টিকা পাবার সুযোগ সত্ত্বেও কিছু মানুষ নানা কারণে সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না৷ ফ্রান্স ও ইটালির মতো দেশে বিশেষ কিছু পেশার ক্ষেত্রে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করায় বিষয়টি নিয়ে ইউরোপে বিতর্ক চলছে৷ সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা উচিত কিনা, সেই প্রশ্নে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে৷
সাধারণ নির্বাচনের প্রায় দুই মাস আগে জার্মানিতেও করোনা টিকা না নেওয়া মানুষের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করার প্রশ্নে রাজনৈতিক আঙিনা গরম হয়ে উঠেছে৷ বর্তমানে প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ টিকার সব প্রয়োজনীয় ডোজ পেয়ে গেছেন৷ বাকি অনেক দেশের তুলনায় জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার এখনো অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান-সহ অনেক বিশেষজ্ঞ৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের চিফ অফ স্টাফ এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক হেলগে ব্রাউন এক সাক্ষাৎকারে চতুর্থ ঢেউ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলে টিকা না নেওয়া মানুষের উপর আরও নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সওয়াল করেন৷ তাঁর মতে এমন মানুষের সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে আনতে হবে৷ হোটেল-রেস্তোঁরা বা সিনেমার মতো বদ্ধ জায়গায় তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা যেতে পারে৷ ব্রাউন বলেন, নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা অক্ষত রাখতে রাষ্ট্র দায়বদ্ধ৷ তাই টিকা না নেওয়া মানুষের জন্য নিয়ন্ত্রণ চালু করা আইনসিদ্ধ পদক্ষেপ৷
আসন্ন নির্বাচনে ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবিরের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী আরমিন লাশেট অবশ্য এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেন৷ অর্থাৎ ঘুর পথেও টিকা না নেওয়া মানুষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান না তিনি৷ বরং তাদের টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে চান লাশেট৷ তাছাড়া তিনি চিকাপ্রাপ্ত, করোনাজয়ী এবং পরীক্ষিত মানুষের মধ্যে সাম্য বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন৷
জার্মানির অন্যান্য অনেক দলের নেতাও করোনা টিকা না নেওয়া মানুষের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছেন৷ তাঁরা হুমকির মাধ্যমে মানুষকে টিকা নিতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন৷ তবে সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে কড়া পদক্ষেপের সম্ভাবনা অনেকেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না৷ সে ক্ষেত্রে শুধু টিকাপ্রাপ্ত ও করোনাজয়ীরা বাকিদের তুলনায় বাড়তি স্বাধীনতা উপভোগ করবেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এপি)
২৫ জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...
করোনা কমায় প্রকাশ্য উৎসবে প্রবাসীদের ঢল
জার্মানিতে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করায় প্রকাশ্য স্থানে অনেক মানুষ আবার সমবেত হতে পারছেন৷ সেই সুযোগে মানহাইমে বসবাসরত প্রবাসীরা আয়োজন করেন ঈদ পূর্ণমিলনী৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
করোনা কমায় কমেছে বিধিনিষেধ
জার্মানিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় অনেক বিধিনিষিধ শিথিল রয়েছে৷ মানহাইম শহরে তিনশ’ জন পর্যন্ত প্রকাশ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে একত্রে অনুষ্ঠান করতে পারছেন৷ সেই সুযোগে শনিবার সেখানে এক অনুষ্ঠানে হাজির হন শতাধিক মানুষ৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
প্রবাসীদের আয়োজনে যুক্ত নানা দেশের মানুষ
মানহাইমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদ পূর্ণমিলনীতে হাজির ছিলেন ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের নানা দেশের মানুষ৷ ছবিতে পাকিস্তানি কয়েকজন তরুণীকে ঘাসের উপর মাদুর বিছিয়ে গল্প করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
করোনা কমায় স্বস্তি, রয়েছে উদ্বেগও
পুরো করোনার সময়টা ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে কাটিয়েছেন সোনালী৷ ২০০৬ সাল থেকে জার্মানিতে বসবাসরত এই নারী জানান, করোনার সময় কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় সন্তানদের ২৪ ঘণ্টাই নিজের সঙ্গে রাখতে হয়েছে৷ কাজটি কঠিন হলেও, সামলাতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি৷ এখন করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল থাকায় আবারও ঘোরাঘুরি শুরু করেছেন সোনালী৷ তবে ভবিষ্যতে আবার কী হয় তা নিয়ে উদ্বেগ আছে তার৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
খোলা ছিল স্কুল, তবে...
মানহাইমের ঈদ আয়োজনে কথা হয় নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আনিকা সিদ্দিকা ইসলামের সাথে৷ সে জানায় যে করোনার সময় তাদের স্কুল বন্ধ হয়নি৷ বরং যখন সংক্রমণ বেশি ছিল তখন অনলাইনে ক্লাস চলেছে৷ সংক্রমণ কমে গেলে স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের৷ পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে শ্রেণীকক্ষে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
করোনায় দুই বছর বন্ধ ছিল আয়োজন
মানহাইমে প্রবাসীদের নিয়ে ঈদ উৎসব আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী দেওয়ান শফিকুল ইসলাম৷ তিনি জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর বাঙালিদের নিয়ে ঈদ উৎসব করা যায়নি৷ তবে, এবার বিধিনিষেধ শিথিল থাকায় আয়োজনটি করা গেছে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
আসছেন শিক্ষার্থীরাও
বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য মাত্র দুই মাস আগে জার্মানিতে এসেছেন শায়লা৷ হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী জানান, করোনার কারণে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের আসার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বটে তবে থেমে যায়নি৷ যেসব শিক্ষার্থী এখনো জার্মানিতে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের ধৈর্য ধরে সব প্রক্রিয়া শেষ করার পরামর্শ তার৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
বারবিকিউ
ঈদ পূর্ণমিলনীতে প্রধান আকর্ষণ ছিল বারবিকিউ৷ চিকেন উইংস, গরুর মাংসের সসেজ, খাসির মাংসসহ নানা কিছু পুড়িয়ে উৎসবে আগতদের পরিবেশন করা হয়েছে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
বাড়তি আকর্ষণ চা
তবে, ঈদ পূর্ণমিলনীতে চা এবং মিষ্টান্ন সরবরাহ করেছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আগত অভিবাসীদের কয়েকজন৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
ছবি তোলার হিড়িক
মানহাইমের একটি পার্কে এবার এই উৎসবের আয়োজন করা হয়৷ সেখানে সবুজ পরিবেশের মাঝে অনেককেই দেশীয় পোশাকে ছবি তুলতে দেখা গেছে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
সাময়িক মুক্তি
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণ গত কয়েকসপ্তাহ কম থাকলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে৷ যদিও সংক্রমণ এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তবে গ্রীষ্মের ছুটির পর পরিস্থিতি আবারো বদলে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ তবে আপাতত বিধিনিষেধের বাইরের সময়টাই উপভোগ করছেন সবাই৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
তরুণদের সামনে আনার প্রয়াস
ঈদ উৎসবে জার্মানিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে৷ এই আয়োজনে তাদেরকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী দেওয়ান শফিকুল ইসলাম৷