করোনা সংক্রমণের হার সামান্য কমলেও জার্মানিতে আরও কড়া পদক্ষেপের পক্ষে ঐকমত্য বাড়ছে৷ বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে৷ করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার পক্ষেও সমর্থন বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের গতি আপাতত কিছুটা থমকে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তা কমছে না৷ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সাপ্তাহিক গড় সংক্রমণের হার পর পর দুই দিন সামান্য হলেও কিছুটা কমেছে৷ বুধবার সেই মাত্রা ৪৪২ ছুঁয়েছে৷ মঙ্গলবার বিদায়ী চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে আরও কড়া নীতি সম্পর্কে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন৷ বৃহস্পতিবার আবার এক বৈঠকে সুস্পষ্ট পদক্ষেপগুলি ঘোষণা করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন৷
জার্মানির সাংবিধানিক আদালত মঙ্গলবার লকডাউন ও স্কুল বন্ধ রাখার সরকরি সিদ্ধান্তের বৈধতা মেনে নিয়েছে৷ মহামারি মোকাবিলা করতে ‘এমারজেন্সি ব্রেক'-এর আওতায় সরকার দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে আদালত মনে করে৷ তবে ভবিষ্যতেও এমন কড়া সিদ্ধান্ত নিতে হলে উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে এবং পদক্ষেপের মেয়াদ সীমিত রাখতে হবে৷ বিদায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেন, যে সব রাজনৈতিক দল কড়া পদক্ষেপের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে সংশয়ের দোহাই দিয়ে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে আসছে, আদালতের এই রায়ের ফলে তাদের নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে হবে৷
জার্মানিতে করোনা সংকট মোকাবিলায় আপাতত কিছু কড়া পদক্ষেপের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগও নিতে চায় শলৎসের নেতৃত্বে ভবিষ্যৎ জোট সরকার৷ সব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই সংসদের অনুমোদনের উপর জোর দিচ্ছেন শলৎস৷ যেমন তিনি চান, আগামী বছরের শুরুতেই করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার প্রশ্নে সংসদ সদস্যরা হুইপ ছাড়াই নিজেদের বিবেক অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন৷ সংসদ সদস্য হিসেবে শলৎস নিজে সেই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন৷ চলতি বছরের শেষেই সংসদে প্রস্তাবের খসড়া পেশ করা হবে৷
আগামী বড়দিন উৎসবের আগেই আরও তিন কোটি করোনা টিকা দেবার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে বিদায়ী ও সম্ভাব্য সরকার৷ টিকাদান কেন্দ্র ও ডাক্তারের চেম্বারের পাশাপাশি ওষুধের দোকানেও সেই টিকা দেবার ব্যবস্থা করা হবে৷ জার্মান সেনাবাহিনীর এক জেনারেলের নেতৃত্বে এক বিশেষজ্ঞ কমিটি টিকাদান ও করোনা সংকট মোকাবিলায় অবদান রাখবে৷ তবে তার আগে সংক্রমণের হার কমাতে এবং করোনা ভাইরাসের ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের সম্ভাব্য তাণ্ডব রুখতে বৃহস্পতিবার আরও কড়া পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে৷ বিশেষ করে সুযোগ সত্ত্বেও টিকা নিতে অনিচ্ছুক মানুষদের সম্ভবত দোকানবাজারেও প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না৷ তারা শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন৷ মানুষের ভিড় হয়, এমন সমাবেশ নিয়ন্ত্রণেও কড়া নিয়ম স্থির করা হবে৷
ফেডারেল স্তরে আরও কড়াকড়ির ঘোষণার আগেই বেশ কয়েকটি রাজ্য সেই পথে এগোচ্ছে৷ বিশেষ করে টিকা নিতে অনিচ্ছুক মানুষের উপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হচ্ছে৷
জার্মানিতে করোনার চতু্র্থ ঢেউ
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি৷ সংক্রমণের হার, দৈনিক মৃতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জার্মানিতে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব আসলে চতুর্থ ঢেউ আঘাত হানার ইঙ্গিত৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
দৈনিক মৃত্যু বাড়ছে দ্রুত
ওপরের ছবিটি বন শহরের এক কবরস্থানের৷ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া স্ত্রীকে স্মরণ স্বামী৷ জার্মানির অনেক শহরেই এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট (আরকেআই)- এর তথ্য অনুযায়ী, গত পহেলা অক্টোবর সারা দেশে করোনায় মারা গিয়েছিলেন ১৮ জন৷ ১৮ নভেম্বর সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২০১ জন৷ একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড এটি৷
ছবি: Ute Grabowsky/photothek/imago images
কফিনেও সতর্কবার্তা
কবরস্থানে কফিনের সারি৷ একটি কফিনে জার্মান ভাষায় লেখা, ‘ইনফেকসিয়ন্সগেফার’, যার অর্থ ‘ইনফেকশনের ঝুঁকি’৷
ছবি: Robert Michael/dpa/picture alliance
ঝুঁকিতে বয়স্করা
ছবিতে এক ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ একজনকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার দৃশ্য৷ করোনায় বয়স্কদের প্রাণহানির শঙ্কা সবসময়ই বেশি৷ সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধাশ্রমে নতুন করে হানা দিয়েছে করোনা৷
ছবি: Jens Kalaene/dpa/picture alliance
শিশুরাও আক্রান্ত
জার্মানিতে শিশুরাও করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের সংক্রমণের হার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে৷ জার্মানির স্কুলে আগে থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষা করানো হয়৷ এখন সব শিশুকে টিকা দেয়া শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
আইসিইউ সংকট
লাইপসিশের এক হাসপাতালের আইসিইউতে করোনার চিকিৎসার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ওপরের ছবিতে৷ সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর ভিড়ও বাড়ছে৷ আইসিইউ খালি পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে অনেক হাসপাতালে৷
ছবি: Jan Woitas/dpa/picture alliance
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি
হামবুর্গের এই স্টেশনের মতো জার্মানির সব শহরের গণপরিবহনে আবার ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ তবে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থবিধির কঠোর অনুসরণও সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ দুই ডোজ টিকা নেয়া, করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়া কিংবা করোনা থেকে অতি সম্প্রতি সেরে ওঠা ব্যক্তিরাই কেবল ট্রেন, ট্রাম বা বাসে উঠতে পারেন৷
ছবি: Eibner/imago images
হোম অফিস
একটা সময় সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় জার্মানিতে হোম অফিসের বাধ্যবাধকতা অনেক শিথিল করা হয়েছিল৷ কিন্তু ‘ফোর্থ ওয়েভ’-এর আশঙ্কা জাগতেই আবার নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন৷ সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ঘরে বসে কাজ করাকেই আবার অগ্রাধিকার দিচ্ছেন অনেকে৷৷
ছবি: Imago/S. Midzor
ক্রিসমাস মার্কেটে কঠোরতা
ওপরে ফ্রাইবুর্গ শহরের ক্রিসমাস মার্কেটের ছবি৷ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে ক্রিসমাস মার্কেট চলছে সেখানে৷ জার্মানির বেশিরভাগ শহরেই এভাবে ক্রিসমাস মার্কেট বসেছে৷ তবে বাভারিয়া রাজ্য কর্তৃপক্ষ খুব কঠিন নিয়মে শুরু করেছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ কোনো শহরে সপ্তাহে সংক্রমণ এক হাজার হবার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকা লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বাভারিয়া৷
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
আবার বিনা পয়সায় করোনা পরীক্ষা
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় সবাইকে নিজের খরচে করোনা পরীক্ষা করানোর কথা বলেছিল জার্মান সরকার৷ কিন্তু করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত দেখা দিতেই আবার বদলে গেছে নিয়ম৷ ফিরে এসেছে বিনে পয়সায় করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ৷