ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি করোনা টিকা অবাধে ব্রিটেনে রপ্তানি হলেও ব্রিটেন থেকে ইইউ-তে টিকা রপ্তানি করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে ব্রাসেলস অভিযোগ করছে৷ ব্রিটেন ইইউ-কে সতর্ক করে দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ধীর গতিতে করোনার টিকাদান কর্মসূচির জন্য প্রবল চাপের মুখে রয়েছে ইউরোপীয় কমিশন৷ অথচ টিকা কোম্পানিগুলির সঙ্গে দরকষাকষি করে ছোটবড় সব সদস্য দেশের জন্য ন্যায্য দামে যথেষ্ট পরিমাণ টিকা কেনা ও বণ্টনের দায়িত্ব নিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী প্রতিষ্ঠান৷ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বুধবার বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন এবং ভবিষ্যতে ইইউ সদস্য দেশগুলির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেন৷
টিকা কেনার জন্য বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে ইইউ কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় নি৷ এই সব কোম্পানির উৎপাদন কেন্দ্র একাধিক দেশে ছড়িয়ে রয়েছে৷ ফলে চাহিদা মেটাতে কোম্পানিগুলি একাধিক দেশে করোনা টিকা রপ্তানিও করছে৷ দেখা যাচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী ইইউ যথেষ্ট পরিমাণ টিকা হাতে না পেলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নে উৎপাদিত টিকা দিব্যি বাইরে পাঠানো হচ্ছে৷ বিশেষ করে ব্রিটেন এর ফলে বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছে৷ গত জানুয়ারি মাস থেকে ইইউ-র বাইরে টিকা রপ্তানির জন্য আলাদা অনুমতির নিয়ম চালু হলেও বাস্তবে সবসময়ে তাতে ফল পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে ইইউ-তে তৈরি প্রায় চার কোটি দশ লাখ টিকা ৩৩টি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে বলে ইইউ কমিশন জানিয়েছে৷ সমালোচকদের মতে, রপ্তানি বন্ধের মতো কড়া পদক্ষেপের বদলে চুক্তি ভাঙার দায়ে কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত৷
বলা বাহুল্য, এমন পরিস্থিতিতে ইইউ দেশগুলিতে ক্ষোভ বাড়ছে৷ সমালোচনার মুখে ইইউ কমিশন প্রেসিডেন্ট রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও কড়া নিয়ম চালু করার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, যে সব দেশে টিকা রপ্তানি হচ্ছে, সে সব দেশও একই রকম উদারতা না দেখালে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে৷ অর্থাৎ সেই দেশ টিকা রপ্তানি নিষিদ্ধ করলে ইইউ-ও পালটা পদক্ষেপ নেবে৷ তবে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা নেই৷ সরাসরি নাম করে ব্রিটেনের প্রতি সতর্কতার বার্তা দেওয়া হয়েছে৷
যেভাবে চলছে করোনার টিকা দেয়ার কার্যক্রম
বাংলাদেশে প্রথম পর্যায়ে ৩৫ লাখ মানুষকে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় কার্যক্রম। সারাদেশে এক হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে চলছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা দেয়া। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা
প্রাথমিক পর্যায়ে করোনা ভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ সরকারি কর্মচারি, চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং সম্মুখসারির যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিবন্ধনের সুযোগ দিচ্ছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভয় কেটে যাচ্ছে
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের করোনা টিকাদান কেন্দ্রের ইনচার্জ হামিদা বেগম বলেন, “শুরুতে মানুষের মাঝে অনেক শঙ্কা এবং ভয় ছিল। কিন্তু গত ১০ তারিখ থেকে প্রচুর মানুষ কেন্দ্রে আসছে। গড়ে আমরা দৈনিক ১৫০০-র চেয়েও বেশি মানুষকে টিকা দিচ্ছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই
একাধিক টিকাদান কেন্দ্রে ঘুরে কোথাও টিকা দিতে আসা মানুষদের মাঝে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে দেখা যায়নি। একটি কেন্দ্রের কর্তব্যরত একজন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন “সীমিত পরিসরে শুরু করায় এখন সব ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তাছাড়া সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবও রয়েছে৷”
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চলছে কাউন্সেলিং
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভ্যাকসিন গ্রহণের পর পর্যবেক্ষন কক্ষে বিশ্রাম করছেন মিরপুর থেকে আসা এম শামসুল হক। টিকার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কর্তব্যরত সেবিকা। টিকা নেওয়ার পর কেমন লাগছে- জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন. ‘‘আলাদা কোনো শারীরিক অনুভূতি নেই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ক্ষোভ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনা টিকা নিতে সস্ত্রীক এসেছিলেন মীর কবির হোসেন। পাঁচ তলায় লিফট ছাড়া উঠে তিনি ক্ষুব্ধ৷ জানালেন, তারা দু’জনই হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টের রোগী। বয়স্ক রোগীদের কথা ভেবে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বন্ধ অন স্পট নিবন্ধন
করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি নিবন্ধন হওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এক ঘোষণার মাধ্যমে অন স্পট নিবন্ধন স্থগিত করা হয় এবং শুধু অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়। কবে আবার এ সুযোগ চালু করা হবে, সে সুম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নেই আলাদা পর্যবেক্ষণ কক্ষ
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল একটি ছোট কনফারেন্স কক্ষে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। নেই পৃথক কোনো টিকা পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কক্ষ। এ কারণে অনেককে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায়।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
এসেছেন সপরিবারে
পরিবারের পাঁচজন সদস্যসহ টিকা কেন্দ্রে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা খান মো. ইসহাক। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর পর্যবেক্ষণ কক্ষে বিশ্রাম নিতে নিতে জানালেন, টিকা নিতে পেরে তিনি সন্তুষ্ট এবং সকলের প্রতি তার আবেদন, সবাই যেন কোনো শঙ্কা ছাড়াই টিকা নেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দ্বিতীয় ডোজ আট সপ্তাহ পর
প্রথম ডোজ নেওয়ার পরই আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার তারিখও নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। এর মাঝে কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যায় নির্ধারিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধও জানিয়ে রাখছেন টিকা দেয়ার কাজে সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইন নিবন্ধনে জটিলতা
করোনার টিকে নিতে নিবন্ধন করতে হচ্ছে ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইটে। কিন্তু অনেকেই জানেন না OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) কী। খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মকর্ত একজনও নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, নিবন্ধনে তিনি নিজেও ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং আরেকজনের মাধ্যমে করিয়ে নিয়েছেন। প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা সাধারণ মানুষকেও এ সমস্যায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভিআইপি বুথ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-তে গিয়ে ভিআইপি বুথ খোলা হয়েছে। কারা এর আওতায় পড়বেন জানতে চাইলে কর্তব্যরত ব্যক্তি জানান, মন্ত্রীপরিষদ, বিচারবিভাগ, সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরতরা এই বিশেষ বুথে টিকা নিতে পারবেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
স্বেচ্ছাসেবক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক করোনা টিকা কেন্দ্রে গিয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকদের কর্মসূচিতে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। টিম লিডার নাফিজ কালাম নিবিড় জানান, তাদের ২০ জনের একটি দল বিএসএমএমইউতে আসা টিকাগ্রহীতাদের রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত পুরোটা সময় সেবা দিচ্ছেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
12 ছবি1 | 12
প্রাক্তন সদস্য দেশ হিসেবে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি প্রায় এক কোটি টিকার ডোজ হাতে পেলেও সে দেষ থেকে ইইউ-তে টিকা রপ্তানি করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে৷ চলতি মাসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিয়েছেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ তবে টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার মতো চরম সিদ্ধান্তের বদলে প্রাপ্য টিকার ন্যায্য বণ্টনের ডাক দিয়েছেন তিনি৷
ব্রিটেন অবশ্য এমন গুরুতর অভিযোগের মুখে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷ সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, কোম্পানিগুলির সঙ্গে ব্রিটেনের যাবতীয় চুক্তি অনুযায়ী তিনি টিকা সরবরাহ প্রত্যাশা করেন৷ এক বিবৃতির মাধ্যমে তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, যে ব্রিটিশ সরকারের অর্থে চালিত গবেষণার ফলে অ্যাস্ট্রাজেনিকা-অক্সফোর্ড টিকা তৈরি হয়েছে৷ তাঁর সরকারই ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ‘সাপ্লাই চেন’ বা সরবরাহের শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে৷ টিকা কোম্পানিগুলি চুক্তির শর্ত পূরণ করতে যেখানে সম্ভব উৎপাদন করছে বলে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনে করেন৷ তিনি ফন ডেয়ার লাইয়েনের মন্তব্যের ভিত্তিতে ইইউ-র স্পষ্ট অবস্থান জানতে চেয়েছেন৷ উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে ব্রিটিশ সরকার সে দেশ থেকে টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করেছিল৷ ইইউ এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের বক্তব্য জানতে চাইলেও এখনো কোনো জবাব পায় নি৷