করোনা রুখতে মোদী সরকারের মোবাইল অ্যাপ নিয়ে শুরু হয়েছে জোরদার বিতর্ক। অভিযোগ, এই অ্যাপ গোপনীয়তার অধিকার ভঙ্গ করছে।
বিজ্ঞাপন
নাম আরোগ্য সেতু অ্যাপ। করোনা নিয়ে সব তথ্য সেখানে রয়েছে, আর রয়েছে একটা বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তা হলে সেটা ধরা পড়ার ১৪ দিন আগে কারা তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন, তা অ্যাপ জানিয়ে দেবে। যদি অ্যাপ ব্যবহারকারী কেউ করোনায় আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন, তা হলে নিজেকে কোয়ারান্টিনে রাখতে হবে। তারপর অ্যাপই বলে দেবে, কবে তিনি আবার বাইরে যেতে পারবেন। অ্যাপ এটাও বলে দেবে কখন বেরনোটা তুলনায় নিরাপদ। কোথায় করোনা হয়েছে, কতজন আক্রান্ত, করোনা হলে কী করতে হবে, করোনা ঠেকাতে কী করতে হবে, কাছাকাছি কোন দোকান খোলা, তাও বলে দেবে অ্যাপ।
আর মোদী সরকার ফরমান জারি করেছে, সব কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীকে এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। এমনকী বেসরকারি সংস্থায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদেরও বাধ্যতামূলকভাবে অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। বেসরকারি অফিসের কর্তা নিশ্চিত করবেন, যাতে সকলে এই অ্যাপ ডাউনলোড করেন। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের দিল্লি ঘেঁষা শহর নয়ডার ফরমান আরও কঠোর। অ্যাপ ডাউনলোড না করলে এক হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের জেল। শুধু সরকারি বা বেসরকারি অফিসের কর্মী নন, এই অ্যাপ সকলকে ডাউনলোড করতে হবে।
করোনায় মানুষের চলাফেরায় গুগলের নজরদারি
করোনার সময় মানুষ কোথায় কোথায় যাচ্ছেন? তার হিসেব করেছে গুগল৷ সম্প্রতি একটি ‘কমিউনিটি মোবিলিটি রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে তারা, যেখানে উঠে এসেছে বিভিন্ন দেশের তথ্য৷ আছে বাংলাদেশেরও৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
কমিউনিটি মোবিলিটি রিপোর্ট
কেনাকাটা ও বিনোদন, মুদি দোকান ও ফার্মেসি, পার্ক, বাস-ট্রেন স্টেশন, কর্মক্ষেত্র এবং বাসায় মানুষের যাতায়ত ও অবস্থানে কতটা পরিবর্তন ঘটেছে সেই তথ্য বের করেছে গুগল৷ এজন্য বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহারকারীদের লোকেশন ডেটা ব্যবহার করেছে তারা৷ সবশেষ ডেটাকে তুলনা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Da Qing
বিনোদন, কেনাকাটায় ভাটা
রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, শপিং সেন্টার, থিম পার্ক, জাদুঘর, লাইব্রেরি এবং মুভি থিয়েটারগুলো রয়েছে এই ক্যাটাগরিতে৷ ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এসব জায়গায় বাংলাদেশের মানুষের যাতায়ত বা গতিশীলতা ৭৬ ভাগ কমেছে৷ ভারতে কমেছে ৮০ ভাগ, নেপালে ৭৭ ভাগ আর পাকিস্তানে ৬৫ ভাগ৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
দোকানে যাতায়ত কমেছে অর্ধেক
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার, খাদ্য গুদাম, কৃষি বাজার, ওষুধের দোকানে বাংলাদেশের মানুষের যাতায়ত আগের চেয়ে ৫৫ ভাগ কমে গেছে৷ একই হারে কমেছে ভারতেও৷ নেপালে কমেছে ৬৮ ভাগ, পাকিস্তানে ৪৭ ভাগ৷
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
পার্কে বেড়ানো কমেছে
জাতীয় উদ্যান, সমুদ্র সৈকত, নগর চত্বর, কিংবা পার্কগুলোতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ৷ এপ্রিলে এসে ফেব্রুয়ারির তুলনায় তা কমেছে ৩৪ ভাগ৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালে ৫৫ ভাগ, ভারতে ৫২ ভাগ, পাকিস্তানে পার্কে বেড়ানোর প্রবণতা কমেছে ৩৬ ভাগ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
যোগাযোগ কমেছে তিন চতুর্থাংশ
বাংলাদেশে বাস, রেল স্টেশনের মত যোগাযোগ কেন্দ্রগুলোতে মানুষের গতিশীলতা ৭২ ভাগ কমে গেছে৷ প্রায় একই হারে কমেছে ভারত ও নেপালেও৷ তবে পাকিস্তানে এই হার হ্রাস পেয়েছে ৫৫ ভাগ৷
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
কাজে যাচ্ছে না মানুষ!
বাংলাদেশে ২৭ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে৷ এর প্রভাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে কর্মক্ষেত্রে মানুষের গতিশীলতা ৫৮ ভাগ কম ছিল৷ ৪৮ থেকে ৬৪ ভাগ গতিশীলতা কমেছে ভারত, পাকিস্তান, নেপালেও৷
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
বাসায় থাকার প্রবণতা বেড়েছে
ছুটি আর বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে সময় কাটানোর প্রবণতা বেড়েছে৷ গৃহস্থলে থাকার হার এই এক মাসে ২৫ ভাগ বেড়েছে৷ এক্ষেত্রে ৩০ ভাগ বেড়েছে ভারতে, ১৯ ভাগ পাকিস্তানে আর ২১ ভাগ নেপালে৷
ছবি: Shib Sankar Rabidas
গতিশীলতা ব্যাপক কমেছে ইউরোপে
ইউরোপের কোভিড ১৯ এ বেশি আক্রান্ত দেশগুলোতে মানুষের গতিশীলতা ব্যাপক হারে কমেছে৷ স্পেন, ইটালি, ফান্সে দোকান ও বিনোদন কেন্দ্রে যাতায়ত হ্রাস পেয়েছে ৮৬ থেকে ৯০ ভাগ৷ এসব দেশের মানুষ এমনকি পার্কে ভ্রমণও আগের চেয়ে আশিভাগ কমিয়ে দিয়েছেন৷
ছবি: Imago Images/Zuma Wire
যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রা বদলেছে কম!
পৃথিবীতে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সংক্রমণে উপরের দিকে থাকা দেশগুলোর তুলনায় তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন কমই ঘটেছে৷ ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে ৪৫ ভাগ কমেছে কেনাকাটা বিনোদন কেন্দ্রে যাওয়া, পার্কে যাতায়ত কমেছে ১৬ ভাগ৷ আর যোগাযোগ কেন্দ্রগুলোতে মানুষের চলাচল ছিল আগের চেয়ে ৪৯ ভাগ কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/M. Dwyer
পার্ক ভ্রমণ বেড়েছে জার্মানিতে
জার্মানিতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত৷ লকডাউন করা না হলেও দেশটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে রয়েছে বিধিনিষেধ৷ মানুষ এই সময়ে দোকান, বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কমাননি পার্ক ভ্রমণ৷ বরং ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৩৫ ভাগ বেড়েছে৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের বাসিন্দারা এমনকি আগের চেয়েও ৭৭ ভাগ বেশি সময় কাটাচ্ছেন পার্কগুলোতে৷
ছবি: Reuters/A. Hilse
10 ছবি1 | 10
কেন্দ্রীয় সরকারের এই অ্যাপ নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। একাধিক সংগঠন দাবি করেছে, এই অ্যাপ লোকের গোপনীয়তার অধিকার ভঙ্গ করছে। এই অ্যাপ ব্লুটুথ ও জিপিএসের মাধ্যমে কাজ করে। যাঁর কাছে এই অ্যাপ আছে, তার গতিবিধি রেকর্ড হয়ে যায়। তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে দেখা করছেন, সেটা যেমন জানা যায়, তেমনই তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য, তাঁর কনট্যাক্টস সহ সব তথ্যই পৌঁছে যাচ্ছে সরকারের কাছে। ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের মতে, ''ভারতে একটা সামগ্রিক ডেটা প্রটেকশন আইন নেই। নজরদারি নিয়ে যে আইন আছে তা মান্ধাতার আমলের। বিপর্যয়ের সময় ত্রাণ দেওয়ার জন্য যে অ্যাপ চালু করা হয়, তা মূলত কনট্যাক্ট ট্রেসিং করতে। অনেক সময় তা লোকেদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগানো হয়। এই অ্যাপ লোকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করবে, ফলে তাঁর গোপনীয়তা সংকটে পড়বে। তাদের মতে সিঙ্গাপুরে এই ধরনের অ্যাপ আছে। কিন্তু তার তথ্য কেবলমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রক ব্যবহার করতে পারে। এখানে কোন মন্ত্রক ব্যবহার করবে, তা স্পষ্ট করে বলা নেই।''
রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বিগ ব্রাদার সকলের ওপর নজর রাখছে। এটা সব চেয়ে খারাপ ধরনের রাজনৈতিক ধোঁকা। লোকে যখন অসুরক্ষিত অবস্থায় আছে, তখন প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার করা উচিত ছিলো। মোদী-শাহের বিজেপি আমাদের এটা বিশ্বাস করাতে চায়, আরোগ্য সেতু অ্যাপ কিছুদিনের মধ্যেই বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু আমি বলছি, বাতিল হবে না।''
বিতর্ক বাড়ছে দেখে সরকারের তরফে একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অ্যাপের গোপনীয়তারনীতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সকলের সুবিধার জন্যই ব্যবহারকারীর লোকেশন বা তিনি কোথায় আছেন, সেই তথ্য নেওয়া হয় এবং তা সার্ভারে নিরাপদে এনক্রিপ্ট করে রাখা হয়। তিনি স্বেচ্ছায় কনট্যাক্টদের সম্পর্কে তথ্য দিলে তা স্টোর করে রাখা হয় এবং তিনি করোনায় আক্রান্ত হলে তবেই তা দেখা হয়। সমানে এই অ্যাপকে আরও উন্নত করা হচ্ছে এবং পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলে সকলের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ ও গোপন আছে। টিম আরোগ্য সেতু জানিয়েছে, কারও কোনও তথ্য ফাঁস হয়নি।
জার্মানিতে ভিডিও নজরদারি বিতর্ক
বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তার খাতিরে ভিডিও নজরদারি যন্ত্র ব্যবহার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী৷ জার্মানিতেও স্বল্পমাত্রায় চালু আছে এমন ব্যবস্থা৷ কিন্তু চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
ভিডিও নজরদারি
জার্মানির বিভিন্ন রেল স্টেশনে ভিডিও নজরদারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে অনেক দিন থেকেই৷ তবে তার পরিসর বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার৷ ২০২৪ সালের মধ্যে প্রধান সব রেল স্টেশনগুলোকে এই ধরনের নজরদারির আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ শুধু সিসি ক্যামেরা দিয়েই নয় তার সাথে চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও যোগ করতে চান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schreiber
চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি
বার্লিনের সুডক্রয়েজ রেল স্টেশনে সম্প্রতি চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প শেষ হয়েছে৷ এই স্টেশন ব্যবহারকারী ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী এক বছরের জন্য তাদের চেহারা শনাক্ত করার অনুমতি দেয় সরকারকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schreiber
যেভাবে শনাক্ত করা হয়
প্রকল্পটি শুরুর আগে স্বেচ্ছাসেবীদের ছবি পুলিশের ডেটাবেজে দেয়া হয়েছে৷ ট্রেন স্টেশনে বসানো ক্যামেরা যখনই তাদের চিহ্নিত করে সেই তথ্য পুলিশের কাছে চলে যায়৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
কতটা সঠিক?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রযুক্তিটি ৮০ ভাগ সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম হয়েছে৷ অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি ৫ জনের চারজনকে শনাক্ত করতে পারছে সিস্টেমটি৷ অন্যদিকে এক হাজার জনে একজনকে ভুলভাবে শনাক্ত করেছে এই সফটওয়্যার৷
ছবি: DW/J. Chase
ভুলের মাশুল
প্রযুক্তিটির ভুলের সংখ্যা কম হলেও তা নিয়ে উদ্বেগ আছে৷ কেননা শতভাগ নির্ভুল না হলে যেকোন একজন নিরপরাধী ব্যক্তিও হয়রানির শিকার হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আগ্রহী পুলিশ
জার্মানির পুলিশ চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে৷ ফেডারেল পুলিশ বিভাগের প্রধান ডিয়েটার রোমান মনে করেন, এর ফলে বিশেষ পুলিশি অভিযান ছাড়াই দ্রুত অপরাধীকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে, যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় অর্জন হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Sparta
আইনি বাধা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আগ্রহ থাকলেও জার্মানিতে এখনই চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার চালু করা সম্ভব না৷ কেননা এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির ভিডিও নজরদারি ব্যবস্থা চালুর জন্য এখনও আইনী কাঠামো নেই দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/picturedesk/H. Ringhofer
আদালতের রায়
আইনি কাঠামো না থাকলেও আদালতের সাম্প্রতিক একটি রায় অবশ্য পুলিশের পক্ষে গেছে৷ গত বুধবার হামবুর্গের প্রশাসনিক আদালত ২০১৭ সালে জি টুয়েন্টি সম্মেলনের বিক্ষোভে অংশ নেয়াদের ছবির বিতর্কিত তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণের অনুমতি দিয়েছে পুলিশকে৷ স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেহারা শনাক্তকরণ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঐ ঘটনায় সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করে৷
ছবি: picture-alliance /dpa/B. Thissen
উদ্বেগও আছে
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন নেতারা এ ধরনের প্রযুক্তির পক্ষে যেমন আছেন তেমনি বিপক্ষে থাকা রাজনীতিবিদের সংখ্যাও কম নয়৷ পুলিশ ও গোয়ান্দা বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট ছবি অনুসন্ধানের বিষয়ে গত জুলাইতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে বেসরকারি সংগঠন সোসাইটি ফর সিভিল রাইটস৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ভারতে গোপনীয়তার অধিকার হলো মৌলিক অধিকার। ফলে সেই অধিকার ভঙ্গ হলে সেটা নিঃসন্দেহে গুরুতর বিষয়। এর আগে আধার কার্ড বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা নিয়েও অভিযোগ উঠেছিলো যে, এটা গোপনীয়তার অধিকার ভঙ্গ করছে। তখনও অভিযোগ উঠেছিলো, আধারের তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীকালে তথ্য ফাঁসের কিছু উদাহরণও সামনে আসে। সামাজিক মাধ্যমে নজরদারি নিয়েও একই অভিযোগ করা হয়েছিলো। সুপ্রিম কোর্ট রায়দেয়, আধারকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না।
একসময় সরকার কিছু সাংবাদিকের ফোন ট্যাপ করছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই তালিকায় ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''এই ভাবে অ্যাপের মাধ্যমে সব ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে কি করোনা ঠেকানো যায়? এই ভাবে লোকের ওপর নজরদারি করা যায়। এই অ্যাপ ডাউনলোড করলেই ব্লুটুথ ও জিপিএস চালু হয়ে যায়। ফলে গতিবিধি সহ ব্যক্তিগত সব তথ্য সরকারের কাছে চলে যাবে। লোকের ওপর নজরদারি রাখা সম্ভব হবে। তাছাড়া সরকার একটা অ্যাপ চালু করতেই পারে। কিন্তু তা বাধ্যতামূলক করবে কেন? বাধ্যতামূলকভাবে ডাউনলোড করতে হলে, তার সব শর্ত মানতেই হবে। তাই স্বেচ্ছায় ফোনের সব কনট্যাক্টস সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রশ্ন উঠছে কী করে?''
তথ্যের অধিকার ও তার অপব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা সুমন সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''একটা মহামারিকে সামনে রেখে এই অ্যাপ চালু করা হয়েছে। কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্য হলো মহামারির পরেও মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে ভারতকে একটা নজরদারি রাষ্ট্রে পরিণত করা।'' সরকারি ব্যাখ্যার পরেও বিতর্ক থামছে না। বরং বাড়ছে।