1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা দুষ্টুটা!

১৩ মার্চ ২০২০

লিখলাম ‘Virus’, বাংলায় এল ‘দুষ্ট’! বলছিলাম ‘গুগল’ অনুবাদকের কথা৷ এমনিতেই কচ্ছপের কামড় দিয়ে বসে আছে নতুন করোনা দুষ্টুটা! তার ওপর এমন দুষ্টামি! ঘটিরামটাকে খুঁজে পেলে দু'ঘা দিয়ে খুব বলে দিতাম, মশকরার আর জায়গা পান না মশাই!

Coronavirus in Kolumbien Bogota Mann mit Schutzmaske
ছবি: AFP/R. Arboleda

যাই হোক, গৌরচন্দ্রিকা রেখে আসল কথা পাড়ছি৷ করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে৷ মানুষ আতঙ্কিত! সেদিন বাড়িতে ফোন করলাম৷ ধরে ধরে তিন প্রজন্মের সবার সঙ্গে কথা বললাম৷ সবাই কিছুটা ভীত৷ তা ভয় পাবার যথেষ্ট কারণ আছে বটে৷ কিন্তু ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাাপে যেভাবে আতঙ্ক বিনিময় করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বিপদ যেন সিনবাদের ভূত হয়ে চেপেছে ঘাড়ে৷ আর নামবে না৷ 

গুগল ট্রান্সলেটরে ‘Virus’ এর বাংলা ‘দুষ্ট’ ছবি: Google

বাড়ির লোকেরা রেগে টং হয়ে গেলেন যখন জানতে পারলেন এই ‘দুঃসময়ে’ আমি পূর্ব ইউরোপে হাওয়া খেতে গিয়েছিলাম৷ তো তাদের এই বুঝিয়ে শান্ত করলাম, যে সেখানকার পরিস্থিতি জার্মানির চেয়ে অন্তত ভালো৷ আসলে আমার এক বন্ধু এসেছিলেন কাজে, হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে৷ কাজ দফারফা করে ফের বললেন, বন্ধু এবার চল কলা বেঁচবো৷ আমিও লুঙ্গি মেরে টান দিলাম দৌঁড়৷ তো আমরা বুদাপেস্ট, ব্রাতিস্লাভা, ভিয়েনা, প্রাগ, বার্লিন ঘুরে বেড়ালাম৷ একটি বিশেষ কাজে আমাকে ফিরে আসতে হল বন৷ আর বন্ধুটি ঘুরে বেড়ালেন ওয়ারশ, অসলো, কোপেনহেগেন, ব্রাসেলস৷ এরপর কোলন ও বন ঘুরে ফিরে গেলেন ঢাকা৷

আমি আপাতত ইউরোপেই গাঁট বেধেছি৷ তাই আমার প্রসঙ্গ থাক৷ বন্ধুটির অভিজ্ঞতার কথা বলি৷ সেটি একেক শহরে একেকরকম৷ তিনি ওয়ারশতে দেখলেন, এই অসময়েও লোকেরা রাস্তায় গানবাদ্য করছে, অস্থির হলেন প্রাগের লোকারণ্য চার্লস ব্রিজে পা ফেলার জায়গা না পেয়ে আর মুগ্ধ হলেন শ্লোভাকদের আতিথেয়তায়৷ তবে হতবাক হলেন বার্লিনের পথে নেমে৷ শনিবার রাতে রাস্তায় লোক নেই৷ রোববার সকাল এমনিতেই একটু নিষ্প্রাণ থাকে৷ কিন্তু এদিন একটু বেশিই ছিল কি না কে জানে! 

এমন নয় যে, ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টিকে হেলাফেলা করে এড়িয়ে গেছি আমরা৷ যতটা সম্ভব সতর্কই ছিলাম৷ বারবার হাত ধুয়েছি৷ মুখে হাত দিইনি৷ টিস্যু কাগজ ব্যবহার করেছি হাঁচি কাঁশি এলে৷ ব্যবহারের পর তা যথাস্থানে ফেলে দিয়েছি৷ কিন্তু আতঙ্কিত হইনি, কিংবা আমাদের মত আতঙ্কিত নন, কিন্তু সতর্ক এমন লোকও দেখেছি ঢের৷

তো ভ্রমণের সময়টা জুড়ে আমাদের আলাপচারিতায় বারবারই এসেছে এই করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গ৷ এমনকি দিনভরই টুইটার, ফেসবুকের ফিডে আসা খবরগুলো ঘেটেঘুটে দেখছিলাম৷ তো প্রথম থেকেই আমরা ব্যাপক বিরক্ত একটি বিষয়ে৷ তা হল, যেভাবে সবাই পোঁ ধরে সব কিনে নিয়ে যাচ্ছে দোকানগুলো থেকে, তাতে গুগল অনুবাদকে ‘স্যানিটাইজার' অর্থ ডুমুরের ফুল লিখে দিলে ঘটিরামটাকে ক্ষমা করে দিতাম৷

তো এখন একই কায়দা শুরু হয়েছে বাংলাদেশেও৷ মাস্ক, স্যানিটাইজার এসব নাকি শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ গুজবও ছড়াচ্ছে অনেক৷ সেদিন এক বন্ধু দেখালেন একটি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলের খবরের একটি স্ক্রিনশট৷ ব্রেকিং নিউজে বলা হচ্ছে, প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে৷ আবার আরেকটিতে দেখলাম, কোকেন খেলে নাকি করোনা ভাইরাস মরে যায়৷ অথচ কোকেন বাবাজি নিজেরই শ্বাসকষ্ট আছে৷ আর গুজবেরও শেষ নেই৷ কোথায় না জানিয়ে লাশের পর লাশ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, কোথায় পুঁতে ফেলা হচ্ছে, এসব খবরে আতঙ্কিত সবাই৷ সব মিলিয়ে একেবারে জগাখিচুড়ি৷

যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলে

যে কোনো সংকটকালে গুজব ছড়াবেই৷ তাই সেখানে গণমাধ্যমের ভুমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ তো সেখানেও ব্যত্যয় দেখা গেছে৷ যেমন, বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি৷ কিন্তু তার আগেই কেউ ঘোষণা দিয়ে দিলেন আগামী মাস থেকে সব বন্ধ৷ এ ধরনের ঘোষণা মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করে৷ সেক্ষেত্রে একেবারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আবার আগ পর্যন্ত এমন খবর প্রচার করাই উচিত নয়৷ সব খবর ব্রেকিং নিউজ নয়৷ 

গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ সেখানে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার অধ্যাপক কারিন ভাল-ইয়োর্গেনসেনের একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, প্রায় একমাস ধরে খবর বিশ্লেষণ করে তিনি প্রায় ১১শ’টি খবরে ‘ভয়’ অথবা ‘ভীত’ শব্দটি পেয়েছেন৷ অন্তত ৫০টি রিপোর্টে রোগের পরিচয় দিতে গিয়ে ‘কিলার ভাইরাস’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷

ভয় সংক্রামক৷ একটি ভয়ের খবর প্রকাশিত হলে তা ছড়িয়ে যায় যে কোনো ভাইরাসের চেয়ে দ্রুত গতিতে, বিশেষ করে এই সামাজিক মাধ্যমের যুগে৷ তা ক্ষতি করে মানসিক স্বাস্থ্যের৷ অথচ প্রয়োজন উলটোটার৷ কভিড-১৯ এর মত  ভাইরাস ঠেকাতে প্রতিষেধক লাগে না৷ শুধু শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই একে ঠেকিয়ে দেয়া যায়৷ কিন্তু তার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যও সবল থাকতে হবে৷ তা না হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে না৷ চীনে সবাই মিলে ঠেকিয়ে দিয়েছে নতুন এই ভাইরাসটিকে৷ আমাদেরও ঠেকাতে হবে৷ এটি একদিনেই চলে যাবে না৷ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো থেকে যাবে৷ তাই আমরা যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে আতঙ্কিত নই, তেমনি আসুন এটি নিয়েও আতঙ্কিত না হই৷ শুধু একটু বাড়তি সতর্ক হই৷ জীবনাভ্যাস পরিবর্তন করি৷ তবেই হবে জয়, আবারো! 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ