করোনা নিয়ে জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিবাদ
২ সেপ্টেম্বর ২০২০
করোনা সংকট মোকাবিলায় জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে মতের অমিল দেখা যাচ্ছে৷ কোথাও রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে তো কোথাও কেন্দ্রীয় সরকারের৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে প্রায়ই আসছে এমন সংবাদ: জার্মানির একটি রাজ্যে স্কুলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, আবার অন্য একটি রাজ্যে মাস্ক ছাড়াই স্কুল করছে শিক্ষার্থীরা৷ জার্মানির সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও প্রভাবশালী দুই রাজ্য বাভেরিয়া এবং নর্থ রাইন ওয়েস্ট ফালিয়া করোনা সংকট মোকাবিলায় একেবারে ভিন্ন পথে হাঁটছে৷ দক্ষিণের রাজ্য বাভেরিয়ার স্কুলে মাস্ক বাধ্যতামূলক, কিন্তু উত্তর-পশ্চিমের রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্ট ফালিয়ায় স্কুলে মাস্কের বাধ্যবাধকতা নেই৷
বাভেরিয়ার নিয়ম
বাভেরিয়ার শিক্ষা ও সংস্কৃতিমন্ত্রী মঙ্গলবার স্কুলে মাস্ক পরা সংক্রান্ত নিয়মাবলী ঘোষণা করেছেন৷ ৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খুলে যাচ্ছে৷ প্রথম দুই সপ্তাহ শিক্ষার্থীদের সব সময় মাস্ক পরে থাকতে হবে৷ যদি শ্রেণিকক্ষে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল হতে পারে৷ ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সংক্রমণের সংখ্যার উপর নির্ভর করবে মাস্কের প্রয়োজন আছে কিনা৷
করোনা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে নেয়া সব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে৷ সপ্তাহান্তে রাজধানী বার্লিনের বিক্ষোভ সমাবেশে ছিলেন ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Reuters/A. Schmidt
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে মরিচের গুঁড়া
বিক্ষোভে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে পুলিশ একসময় খুব কাছ থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর পানিতে মেশানো মরিচের গুঁড়া স্প্রে করতে শুরু করে৷
ছবি: Reuters/C. Mang
অভিনব প্রতিবাদ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সবার প্রতিবাদ দৃষ্টিকটু ছিল না৷ ছবির এই বিক্ষোভকারীর মতো কেউ কেউ ফুল হাতেও নেমেছিলেন বিক্ষোভে৷
ছবি: Reuters/C. Mang
মুখোমুখি
বার্লিনের বিক্ষোভ একসময় রাইশটাগ পর্যন্ত পৌঁছে যায়৷ পুলিশের বাধার মুখে কারো পক্ষেই অবশ্য ভবনে ঢোকা সম্ভব হয়নি৷
ছবি: Reuters/C. Mang
কোথায় সামাজিক দূরত্ব?
বিক্ষোভে স্বাস্থবিধি অগ্রাহ্য করতে সম্ভব সব কিছুই করেছেন বিক্ষোভকারীরা৷ অনেকে তো রাস্তা দখল করে হাতে হাত ধরে রীতিমতো নাচ শুরু করে দেন!
ছবি: Reuters/A. Schmidt
তিন শতাধিক গ্রেপ্তার
বিক্ষোভ মিছিল থেকে তিনশ’রও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ছবিতে এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারের আগে মাটিতে চেপে ধরেছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/C. Mang
দেশজুড়ে বিক্ষোভ
শনিবার রাজধানীতে হলেও তার আগে জার্মানির অনেক শহরেই হয়েছে স্বাস্থ্যবিধিবিরোধী বিক্ষোভ৷ একজনের হাতের প্ল্যাকার্ডে তারই বিবরণ৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
সব ষড়যন্ত্র!
বিক্ষোভকারীদের অনেকেরই বিশ্বাস স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা আসলে এক ষড়যন্ত্রের অংশ৷ এক বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে তাই লেখা, ‘‘ বড় ভাইয়েরা আপনাকে মুখোশ পরিয়ে দিচ্ছে৷’’
ছবি: Reuters/A. Schmidt
মুখোশ যখন অন্তর্বাস
স্বাস্থ্যবিধিকে কটাক্ষ করতে এক বিক্ষোভকারী এসেছিলে অন্তর্বাসে নাক-মুখ ঢেকে৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
ম্যার্কেলবিরোধিতা
বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, করোনা সংক্রমণের ভয় দেখানো এক ধরনের মিথ্যাচার৷ম্যার্কেল সরকার এর মাধ্যমে মানুষকে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য করছে বলেও মনে করেন তারা৷ এই মিথ্যাচার বন্ধ করে ম্যার্কেলকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতেও বলেছেন বিক্ষোভকারীদের অনেকে৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
ম্যার্কেল অপরাধী!
‘করোনার নামে’ মানুষের চলাফেরা, কাজকর্মে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করায় জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকের শাস্তি দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা
বিক্ষোভ সমাবেশে ভারতকে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশশাসনমুক্ত করা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ তার এক বিশাল পোস্টারে লেখা ছিল ‘স্বাধীনতা + আন্তনিয়ন্ত্রণ৷’
ছবি: Reuters/A. Schmidt
সংবাদ মাধ্যমকে ধিক্কার
করোনাকালে জার্মানির সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন অনেকে৷ এক বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যকার্ডে লেখা, ‘‘ প্রেস, ছি লজ্জা!’’
ছবি: Reuters/A. Schmidt
12 ছবি1 | 12
অন্যদিকে, সোমবার নর্থ রাইন ওয়েস্ট ফালিয়ার শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুলে মাস্ক পরার আর প্রয়োজন নেই৷
মাস্ক না পরলে জরিমানার ক্ষেত্রেও স্থানভেদে পার্থক্য আছে৷ গত সপ্তাহে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে বৈঠকে ১৬টি রাজ্যের ১৫টি মাস্ক না পরলে ৫০ ইউরো জরিমানার ব্যাপারে একমত হয়, যা পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর৷ তবে সাক্সনি আনহাল্ট এতে দ্বিমত পোষণ করে৷ তাদের দাবি, গণপরিবহণে মাস্ক না পরলে দেড়শ টাকা জরিমানা গুণতে হবে৷ সমস্যা হলো, কেউ যদি ট্রেনে ভ্রমণ করে, তাহলে কোন রাজ্যে কী নিয়ম বহাল, যাত্রী জানবে কী করে? ফলে তার বিরুদ্ধে কিভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে?
এক দেশ, ১৭ সরকার
জার্মানিতে প্রত্যেকটা রাজ্যের স্বতন্ত্র ক্ষমতা রয়েছে৷ স্বাস্থ্য, শিক্ষা নীতি, সংস্কৃতি নীতি, নির্মাণ ও সংস্কার নীতি-এসব ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা রাজ্য নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ এমনকি প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিচার ব্যবস্থা আছে৷
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিয়ে ১৬টি রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই দ্বিমত দেখা যাচ্ছে চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের৷ ম্যার্কেল যেখানে পুরো দেশেই একই ধরনের কড়াকড়ি আরোপে আগ্রহী, সেখানে সাক্সনি আনহাল্ট সহ কয়েকটি রাজ্য কোনো ধরনের কড়াকড়ি আরোপের বিপক্ষে৷ তাদের বক্তব্য, এসব রাজ্যে করোনা সংক্রমণের ঘটনা খুবই কম, ফলে কড়াকড়ির কোনো প্রয়োজন নেই৷
করোনা সংক্রমণের চূড়ায় থাকার সময়, অর্থাৎ গত এপ্রিলেও যেন ক্রিসমাসের মতো কেনাকাটার হিড়িক পড়েছিল জার্মানিতে৷ মূল কারণ, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জারি হওয়া বিভিন্ন বিধিনিষেধ, যার ফলে বেশির ভাগ জার্মান ক্রেতা ভরসা রাখছেন অনলাইন বাজারে৷ মাসের কাঁচামাল থেকে শখের জামাজুতো - অনলাইনে কেনা সবকিছু বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে বেশ কিছু ডাক পরিষেবা সংস্থা, যাদের মধ্যে অন্যতম ডয়চে পোস্ট-ডিএইচএল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
যতটা বেড়েছে অনলাইন কেনাকাটা
ডয়চে পোস্ট ও অংশীদারদের ২০১৯-২০২০ সালের পারফর্মান্স বলছে, এপ্রিল মাসে, বিশেষ করে, ইস্টারের সময় থেকে, অন্যান্যবারের তুলনায় ডাকের মাধ্যমে প্যাকেজ পাঠানো ২১ শতাংশ বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
করোনাকালেও লাভ
এপ্রিল থেকে জুন মাসের পরিসংখ্যান বলছে, অন্যান্য বছর এই তিন মাসের তুলনায় ২০২০ সালে এই সময়ে ডয়চে পোস্ট-ডিএইচএল ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি আয় করেছে৷ এই আয়ের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ইউরোর ( বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৬১০ কোটি টাকা) সমান৷এই তিন মাসে সংস্থাটি লাভ করেছে মোট ৫২৫ মিলিয়ন ইউরো (৫২৮ কোটি টাকা)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
কর্মীদের জন্যে বিশেষ সুবিধা
করোনাকালে জনসাধারণের জীবন সহজ করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ডেলিভারিকর্মীরা৷ ডিএইচএল ও ডয়চে পোস্টে কর্মরত কর্মীদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ লাখ জন বছর শেষে ৩০০ ইউরো বোনাস পাবেন বলে বৃহস্পতিবার একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall
পরিবেশবান্ধব ডেলিভারি পরিষেবা
ডয়চে পোস্ট-ডিএইচএল ২০৫০ সালের মধ্যে নিজেদের ডেলিভারি পরিষেবা ১০০ শতাংশ কার্বন-মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে৷ সেই লক্ষ্যে এগোতে এখন থেকেই সাইকেল ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের সাহায্যে নিচ্ছে তারা৷ যদিও এখনও তাদের পরিষেবার কাজ বেশির ভাগই সারা হয় আকাশপথে ও জাহাজে৷ কিন্তু ডিএইচএলের মাধ্যমে পাঠানো চিঠি ও প্যাকেজের এক-তৃতীয়াংশ কার্বন নিঃসরণ-মুক্ত৷