করোনায় সবার জীবনে পরিবর্তন এসেছে৷ ম্যানিকিনদের দিয়ে সেটা তুলে ধরছেন জার্মান শিল্পী ডেনিস ইওসেফ মেসেগ৷ ইতিমধ্যে তার ‘ইট ইজ লাইক ইট ইজ' ইনস্টলেশন জার্মানির ৩০টি শহরে প্রদর্শিত হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ডেনিস বলছেন, ‘‘করোনার কারণে আমাদের চলাফেরায় বাধার বিষয়টি এখানে তুলে ধরা হয়েছে৷ আগে আমরা যখন যেভাবে চাইতাম চলাফেরা করতে পারতাম৷ কিন্তু এখন পারছিনা৷ করোনার কারণে আমাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে৷ যা খুশি তা করতে পারার বিষয়টি এখন অতীতের বিষয় হয়ে গেছে৷''
কোলন ক্যাথেড্রাল, বার্লিনে সংসদ ভবন, পটসডাম, লিমবুর্গের পুরনো ব্রিজে ডেনিসের ইনস্টলেশন প্রদর্শিত হয়েছে৷ তিনি কোথা থেকে ম্যানিকিন সংগ্রহ করেছেন? ডেনিস জানালেন, ‘‘অনেক জায়গা থেকে আমি ম্যানিকিন সংগ্রহ করেছি৷ যেমন করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া বুটিক শপ থেকে৷ এছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া শখের হার্ডওয়্যার দোকান থেকেও পেয়েছি৷ কম দামে সেগুলো কিনতে পেরেছি৷''
বন শহরের কাছে আলানুস ইউনিভার্সিটি অফ আর্ট অ্যান্ড সোসাইটিতে পড়ালেখা করেছেন ডেনিস৷ কাঠ দিয়ে ভাস্কর্য তৈরিতে পারদর্শী তিনি৷
‘ইট ইজ লাইক ইট ইজ' তার প্রথম পাবলিক ইনস্টলেশন৷ এ বছরের শেষদিকে তিনি একটি ছবির বই বের করবেন, যেখানে তার ম্যানিকিনদের এমন কিছু করতে দেখা যাবে যেটা মহামারির কারণে অনেকের পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না৷
ম্যানিকিনদের নিয়ে জার্মানিতে বিশেষ প্রদর্শনী
04:02
অতিসম্প্রতি ম্যানিকিনরা কোলনে কার্নেভাল উদযাপন করেছে, করোনার কারণে এবার যেটার আয়োজন বাতিল করতে হয়েছে৷
সাংস্কৃতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ডেনিসের এই ইনস্টলেশন প্রদর্শন করতে পারার বিষয়টি শুধু সৌভাগ্যের নয়, এটা একটা বার্তাও দেয়৷ ‘‘আর্ট ও কালচার বিষয়গুলো মনের উপর প্রভাব ফেলে৷ আপনি হয়ত বুঝতে পারেননা, কিন্তু এগুলো বিভিন্নভাবে আপনাকে মানসিকভাবে উৎসাহ, উদ্দীপনা দিয়ে থাকে৷ করোনার কারণে হয়ত এখন আপনি বুঝতে পারছেন, কী একটা যেন নেই,'' বলেন ডেনিস৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/জেডএইচ
শিল্পীদের কেন টাকা নেই?
বাংলাদেশে শিল্পীরা সঙ্গীত জীবনের শেষ দিকে এসে পড়ছেন আর্থিক সঙ্কটে৷ তাদেরকে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হয় শুভাকাঙ্খী অথবা সরকারের সহযোগিতা নিয়ে৷ কেন এই পরিস্থিতি, কী বলছেন সঙ্গীত শিল্পীরা? পড়ুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
সাবিনা ইয়াসমিন
সঙ্গীতা বলেন, সাউন্ডটেক বলেন, এদের অ্যালবাম বিক্রির উপর কোনো ভাগ আমরা কোনোদিনও পাইনি৷ এককালীন একটা লামসাম দিয়ে দিতো৷ শিল্পীদের কোটি টাকা সবাই লুটেপুটে খাচ্ছে৷ কারা খাচ্ছে আমি জানি না৷ আমাদের আয়ের কিছুই নাই এখন৷ ইউটিউবে আমার হাজার হাজার গান আছে, কোনেকিছুই জানি না কারা আপলোড করছে৷ রয়্যালটির টাকা মেরেকেটে না খেলে কি আমাদের কারো কাছে হাত পাততে হয়?
ছবি: bdnews24.com
আসিফ আকবর
আমাদের দেশে কোন কপিরাইট সোসাইটি নাই, শিল্পীদের কোনো ঐক্য নাই৷ ৪৮ বছরেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি নাই যে কারণেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে৷ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে যে রিয়েলিটি শো হয়, বিভিন্ন এফ এম চ্যানেলে আমাদের গান বাজে সেখান থেকে শিল্পী, সুরকার, গীতিকারের ভাগটা কী, সেটা নিয়ে আমাদের কোন নীতিমালা নাই৷ যতদিন পর্যন্ত শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধ না হবে ততদিন কোন সমাধান হবে না৷
ছবি: bdnews24
নকিব খান
প্রত্যেকটা শিল্পী শেষ বয়সে এসে কষ্ট পায় এবং চিকিৎসার জন্য যখন অর্থ দরকার হয় তখন দুস্থ শিল্পী হয়ে যায়৷ সব শিল্পীরা মিলে তাকে সাহায্য করতে হয়, এটা খুবই দুঃখজনক, করুণ একটা ব্যাপার, আমাদের শিল্পীদের খুবই কষ্টের একটি জায়গা৷ আমাদের সৃষ্ট গানের কিছুই আমরা পাই না৷ কোম্পানিগুলোতে যারা আছে তারা হয়তো কিছু আয় করছে৷ আমাদের পাশের দেশে ভারতে শিল্পীরা রয়্যালটি পায়, সেজন্য তাদের এতো অভাব থাকে না৷
ছবি: Sazzad Hossain
কুদ্দুস বয়াতী
আমাদের শিল্পীরা মরলে পরে শহীদ মিনারে নিয়া ফুলের মালা দেয়৷ থাকলে দেখে না, কেউ নাই৷ এটা এখন প্রমাণিত৷ আমাদের শিল্পীদের এখন আয় নাই৷ মোবাইল, ইউটিউবের জন্য এক একজন আসে (গান রেকর্ড) করে দুই-তিন হাজার টাকা দেয়৷ ক্যামেরা করে তারা রেখে দেয়, তারপর ইউটিউবে চালায়৷ আমাদের লোকশিল্পীরা খুব কষ্টের মধ্যে আছে৷ যন্ত্রশিল্পীরা স্টুডিওতে বাজিয়ে একটা গানের জন্য মাত্র দুই হাজার টাকা পায়৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
প্রীতম আহমেদ
অনুদান নয় বরং অনিয়ম বন্ধ করার কার্যকর নির্দেশ প্রয়োজন৷ অন্তত একটি মামলার আদালতের রায় প্রয়োজন৷ অবৈধ ভাবে অনুমতিহীন গান বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশনা প্রয়োজন৷ তাহলেই অপরাধীরা শিল্পীদের টাকা লুট করা বন্ধ করবে৷ দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিল রেখে শিল্পীদের ৭০% রয়েলিটি নিশ্চিত করতে হবে৷ তবেই একজন শিল্পী সুস্থ ও সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবে৷
ছবি: Pritom Ahmed
খুরশীদ আলম
সিএনজি ওয়ালাদের সংগঠন আছে বলেই যখন ইচ্ছা তখন সিএনজি বন্ধ করে দিচ্ছে৷ বাস মালিকদের সংগঠন আছে, তারা যখন ইচ্ছা বাস বন্ধ করে দিচ্ছে৷ আমাদের সংগঠন নাই, আমরা পারছি না৷ আমাদের এভাবেই চলতে হবে৷ প্রেসিডেন্টের বেতন বাড়ে, প্রধানমন্ত্রীর বেতন বাড়ে, সচিবের বাড়ে, মন্ত্রীর বাড়ে, এমপির বাড়ে, প্রধান বিচারপতির বাড়ে, কিন্তু শিল্পীদের পেমেন্ট বাড়ানো হয় না৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একটা রেট দিয়ে গেছেন সেটাই এখানো চলছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
ব্যরিস্টার তানজীব উল আলম
একজন শিল্পী যখন গানের জন্য স্টুডিও’র সঙ্গে চুক্তি করেন তখন তারা এককালীন পেমেন্ট নিয়ে পুরো গানটাই দিয়ে দেন স্টুডিওকে৷ শিল্পীরা যদি আরেকটু বুদ্ধিমান হতেন তাহলে তারা একবারে টাকা না নিয়ে প্রতিবার প্লে’র জন্য তার সম্মানি চাইতে পারতেন৷ যেটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে হয়৷ ওইসব দেশে কিন্তু পারফর্মিং আর্ট সোসাইটি স্টুডিও’র সঙ্গে শিল্পী নেগোসিয়েশনের কাজটা করে৷ আমাদের দেশের শিল্পীরা এই বিষয়ে অবগত না৷