1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা প্রতিরোধে কেমন মডেল শিবচর ?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ এপ্রিল ২০২০

বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার শিবচর ‘করোনা প্রতিরোধের মডেল' বলে স্থানীয় প্রশাসন প্রচার চালাচ্ছে৷ তাদের উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও প্রতিবেদন প্রকাশ করছে৷ কিন্তু বাস্তব অবস্থা কি আসলেই সেরকম?

ছবি: DW/R. Raza

কর্তৃপক্ষ এবং মিডিয়ার একাংশ শিবচরকে যখন ‘মডেল’ দাবি করছে তখনই সেখানে আরেকজন করোনায় মারা গেছেন৷ আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন একজন৷ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ‘‘একজন নারী চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়ে মারা গেছেন ২২ এপ্রিল৷ মৃত্যুর পর তার করোনা পজিটিভ এসেছে৷ তার বাড়ি শিবচরের কাঁঠালবাড়ি এলাকায়৷ আর নতুন করে যে নারী আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি থাকতেন মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে৷ তার গ্রামের বাড়ি শিবচরের কুতুবপুরে৷ বাড়ি এলে তার করোনা পজিটিভ হয়৷’’

নতুন একজন নিয়ে করোনায় এ পর্যন্ত শিবচরে দুই জন মারা গেছেন৷ মোট ১৯ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন৷ তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, ছয়জন সুস্থ হওয়ার পর আবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাহলে এই উপজেলাটি করোনা প্রতিরোধে মডেল হয় কিভাবে- জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এমপি সাহেবের নির্দেশনায় আমরা চেষ্টা করছি৷ তিনি অনেক পরিশ্রম করছেন৷’’ তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘‘শিবচরসহ পুরো জেলা লকডাউন হলেও এখানে বাইরে থেকে লোকজন আসা-যাওয়া করছে, ঠোকানো যাচ্ছে না৷’’ 

শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ

This browser does not support the audio element.

শিবচরে প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয় গত ১৩ মার্চ এক ইটালিফেরত প্রবাসীর মাধ্যমে৷ ২৫ মার্চ প্রথম একজন মারা যান৷ তিনি ওই ইটালিফেরত প্রবাসীর বাবা৷ ইটালিফেরত ওই প্রবাসীর মাধ্যমে তার ঘনিষ্ঠ আরো সাতজন সংক্রমিত হন৷ বাংলাদেশে প্রথম শিবচর ১৯ মার্চ লকডাউন করা হয়৷ ইটালিসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী ৬৮৪ জন তখন শিবচরে ফিরে আসায় উপজেলাটি লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন৷ 

আইইডিডিসিআর-এর একটি টিমও সেসময় শিবচরে গিয়েছিল৷ আর উপজেলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য অতিরিক্ত প্রায় তিনশ' পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল৷

এ পর্যন্ত মোট ১৯ জন করোনা পজিটিভ হয়েছে৷ তাদের মধ্যে চার জন এখনো আইসোলেশনে আছেন৷ একজন মারা গেছেন এবং বাকিরা সুস্থ হয়েছেন৷ এ পর্যন্ত ১১৩ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে৷ আর ছয়জন পুনরায় আক্রান্ত হয়েছেন৷  

ঢাকা মেডিক্যালে যে নারী ২২ এপ্রিল মারা যান তাকে ২৩ এপ্রিল তার গ্রামের বাড়ি শিবচরের কুতুবপুর ইউনিয়নের হোসেন মাতবরের কান্দি এলাকায় দাফন করা হয়৷ নমুনা পাঠানোর পর তার করোনা পজিটিভ আসে ২৬ এপ্রিল৷ এরপর ওই এলাকা লকডাউন করা হয়৷ 

আর কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাবুমোল্লাকান্দি গ্রামে যে নারীর করোনা পজিটিভ এসেছে তিনি কয়েকদিন আগে মুন্সিগঞ্জ থেকে আসেন৷ ২৭ এপ্রিল তার পজিটিভ রেজাল্ট আসে৷ কিন্তু এর আগে তিনি এলাকায় ঘোরাফেরা করেছেন৷ তার অটোরিকশা চালক ছেলেও অটোরিকশা চালিয়েছেন৷ তবে এখন ওই এলাকা লকডাউন করা হয়েছে৷ 

প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক দূরত্ব নিয়ে৷ ছয়জন পুনরায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন৷ স্থানীয়দের কেউ কেউ দাবি করেন, পৌর এলাকায় ইটালিফেরতদের আত্মীয়-স্বজন ঘোরাফেরা করেছেন৷ মসজিদে গিয়ে তখন নামাজও পড়েছেন৷ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, ‘‘তারা তাদের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমেই ফের আক্রান্ত হয়েছেন৷’’ তাহলে এটা নিশ্চিত যে আক্রান্তদের অনেককে চিহ্নিত করা যায়নি৷ একই সঙ্গে তাদের স্বজনরা সামাজিক দূরত্ব মানেননি৷ এর জবাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘‘সবাইকে তো আর চিহ্নিত করা সম্ভব না৷ আর সামাজিক দূরত্ব না মানলে আমরা কী করতে পারি?’’

মুন্সিগঞ্জ থেকে একজন এসে করোনা পজিটিভ হলেন কিভাবে? উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘‘লোকজন তো বাইরে থেকে আসছে৷ সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়৷’’

তাহলে শিবচর করোনা প্রতিরোধের মডেল হয় কিভাবে?  উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার জবাব, ‘‘ ১১ এপ্রিলের পর নতুন কেউ আক্রান্ত না হওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা এ কথা বলেছিলাম৷’’

শিবচর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘লোকজন এখনো বাইরে থেকে আসছেন৷ কাঁঠালবাড়ি ফেরি চালু আছে জরুরি পণ্য পরিবহণের জন্য৷ কেউ নদী পার হয়ে আমাদের উপজেলায় এলে তাকে তো আর ফেরত পাঠাতে পারি না৷’’ 

আবুল কালাম আজাদ

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘শিবচর করোনা প্রতিরোধে মডেল হয়েছে- এটা যারা বলে তাদের ব্যাপার৷ আমি বলি না৷ তবে আমরা চেষ্টা করি যে খারাপ পরিস্থিতি হতে পারতো তা হয়তো থামাতে পেরেছি৷ এখানে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে ঠিকমতো৷ আমরাও চেষ্টা করছি লোকজনকে ঘরে রাখতে৷ এখন শুধু শিবচর নয়, পুরো মাদারীপুর জেলাই লকডাউন৷ আমাদের এমপি নুরে আলম চৌধুরী লিটন সাহেব সবাইকে সমন্বিত করে কাজ করছেন৷’’ 

শিবচরকে করোনা প্রতিরোধে মডেল দাবিকারীদের আরেকজন হলেন মাদারীপুর জোন সুজন-এর সভাপতি রাজন মাহমুদ৷ তিনি বলেন, ‘‘১১ এপ্রিলের পর শিবচরে কেউ আক্রান্ত হয়নি৷ তাই ভেবেছিলাম শিবচর করোনা প্রতিরোধে সফল হয়েছে৷ কিন্তু এখন দেখছিতো আবার আক্রান্ত হচ্ছে৷’’

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করেন প্রশাসন বা কোনো রাজনৈতিক মহল মহামারির সময় কোনো এলাকাকে ‘প্রতিরোধের মডেল’ ঘোষণা করতে পারে না৷ তার মতে, ‘‘এটা করতে পারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ এর বাইরে  করোনা নিয়ে যে শিবচরকে মডেল বলছে স্থানীয় প্রশাসন, তাতে ক্ষতি হচ্ছে৷’’ এর মধ্যে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও তিনি মনে করেন৷

বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি কথা বলতে রাজি হননি৷ তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা বাংলাদেশের কোনো এলাকাকে ‘করোনা প্রতিরোধে মডেল’ বলে এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ