জি-টোয়েন্টি শীর্ষ নেতারা করোনা সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে আর্থিক ও অন্যান্য পদক্ষেপের অঙ্গীকার করেছেন৷ জাতিসংঘের মহাসচিব ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানুষের পরাজয় সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের সেরা অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলির গোষ্ঠী জি-টোয়েন্টির শীর্ষ নেতারা করোনা সংকট থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে পাঁচ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করার অঙ্গীকার করেছেন৷ বেকারত্ব ও আয়ের ঘাটতি প্রতিরোধ করাই হবে মূল লক্ষ্য৷ করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বনেতারা ‘যা কিছু প্রয়োজন' সেসব করতে প্রস্তুত৷ বৃহস্পতিবার এক ভিডিও কনফারেন্সে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ সেইসঙ্গে করোনা সংক্রমণের মোকাবিলা করতেও তাঁরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সবরকম পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন৷
২০০৮-২০০৯ সালের আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের পর জি-টোয়েন্টি স্তরে এমন ঐক্য দেখা যায়নি৷ সেই সংকটের পর থেকে কোনো শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে এমন মৈত্রী ও সমঝোতার বার্তা শোনা যায়নি৷ বর্তমান সংকটের সময় বিশ্ব বাণিজ্যের পথে যেসব বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, সেগুলি দূর করতে যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে চান এই গোষ্ঠীর নেতারা৷ তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক দেশ ওষুধ ও চিকিৎসার সরঞ্জাম রপ্তানি বন্ধ রেখে যে সমস্যা সৃষ্টি করেছে, তা দূর করার কোনো ডাক দেননি তাঁরা৷ শুধু পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ‘অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ' দূর করার অঙ্গীকার করেছেন তাঁরা৷ সেইসঙ্গে বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশ ও শরণার্থীদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলেছেন তাঁরা৷ বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের উদ্দেশ্যে বিশ্বনেতারা বিশেষ ব্যবস্থা নেবার আহ্বান জানিয়েছেন৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এই সম্মেলন সম্পর্কে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সংকট মোকাবিলায় অসাধারণ ঐক্যবোধ দেখা গেছে৷ তাঁর মতে, প্রত্যেক দেশের ভিন্ন মনোভাব সত্ত্বেও অনেক বিষয়ে যথেষ্ট মিল রয়েছে৷
সরকারি স্তরে উৎসাহ-উদ্দীপনা সত্ত্বেও অনেক বিশেষজ্ঞ জি-টোয়েন্টি নেতাদের অঙ্গীকারের মধ্যে আশার আলো দেখছেন না৷ জাতীয় স্তরে ঘোষিত পদক্ষেপগুলিই নতুন মোড়কে তুলে ধরা হয়েছে বলে সমালোচনা উঠছে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস জি-টোয়েন্টি নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা এক ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছি এবং মোটেই জিতছি না৷'' তাঁর মতে, এই মুহূর্তে যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে ভাইরাস মোকাবিলার পরিকল্পনা করা উচিত৷ সেই লক্ষ্যে পারস্পরিক সমন্বয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন৷
সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতারা নিজেদের দেশের কঠিন পরিস্থিতির উল্লেখ করেন৷ বিশেষ করে ইটালি ও স্পেনের গুরুতর অবস্থা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ কিন্তু একই দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের টেলিফোন কনফারেন্সে কোনো ফলাফল উঠে আসে নি৷ বিশেষ করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতে সরকারি ব্যয়ভার বাড়ানোর বিষয়ে তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি৷ ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীদের হাতেই তাঁরা বিষয়টি তুলে দিয়েছেন৷
করোনা সংকটে পপুলিস্ট নেতারা কোণঠাসা
পপুলিজম বা জটিল সমস্যার চটজলদি সমাধান বাতলে দেবার প্রবণতা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু পপুলিস্ট নেতারা করোনা সংকটের সামনে অসহায় হয়ে পড়ছেন৷
ছবি: Imago Images/Media Punch/O. Contreras
ডনাল্ড ট্রাম্পের দুশ্চিন্তা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে সাফল্যের আশায় ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ প্রথমে করোনা সংকট লঘু করে দেখিয়ে চাপের মুখে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি৷তবে বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞদের অবজ্ঞা করে ইস্টারের আগেই পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ করে তুলতে চান ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
বরিস জনসনের উভয় সংকট
সবে ব্রেক্সিট কার্যকর করে জনপ্রিয়তা উপভোগ করছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ করোনা সংকট তাঁর ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে৷ প্রথমদিকে পরস্পরবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর অবস্থান নেবার পর জনসনও কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবকাঠামো পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে জনসনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/I. Vogler
নরেন্দ্র মোদীর বিড়ম্বনা
ভারতে করোনা সংকট এখনো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি৷ কিন্তু সমালোচকরা সরকারের অনেক ‘লোক দেখানো’ পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন৷ তাঁদের মতে, লকডাউন ঘোষণা ও জনমোহিনী ভাষণ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংক্রমণ কমাতে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব ভারতকে সংকটে ফেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
বেপরোয়া বোলসোনারো
অন্যান্য পপুলিস্ট বিশ্বনেতার মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো করোনা সংকট যতটা সম্ভব উপেক্ষা করে চলার চেষ্টা করছেন৷ তিনি বিষয়টিকে নিয়ে ‘অকারণ ত্রাস’ সৃষ্টির সমালোচনা করে থাকেন৷ এমনকি অবিলম্বে দেশে সব বাধানিষেধ তুলে নেবার ডাক দিচ্ছেন তিনি৷ বয়স্কদের ভিত্তিহীন আশ্বাস দিয়ে বলছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/A. Borges
সীমান্ত বন্ধ রাখতে চান ল্য পেন
ইউরোপের পপুলিস্ট নেতারা ভাঙলেও মচকাতে প্রস্তুত নন৷ ফ্রান্সের জাতীয় ফ্রন্ট নেত্রী মারিন ল্য পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের ‘সীমন্তহীনতার ধর্ম’-কে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন৷ তাঁর মতে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই সীমান্ত মানুষকে সুরক্ষা দেয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করার কোনো পরামর্শ যে দেয়নি, ল্য পেনের অনুগামীরা সেই খবর রাখেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
বিশেষজ্ঞদের পছন্দ নয়
ট্রাম্প, জনসন, বোলসোনারোর মতো নেতারা কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রাহ্য করতে চান না৷ বিশেষজ্ঞরাই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠুন, সেটাও তারা চান না৷ নিজেদের ভিত্তিহীন ধারণাকে জনমোহিনী মোড়কে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তাঁরা যথেষ্ট সফল হয়েছেন৷ ফলে করোনা সংকটের সময় সাধারণ মানুষের বিপদের আশঙ্কা আরো যাচ্ছে৷