গত কয়েক সপ্তাহে লেবাননে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়েছে। যার জেরে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন বাড়িয়েছে সরকার। ২৪ ঘণ্টা কারফিউ জারি হয়েছে। তারপরেই শুরু হয়েছে প্রতিবাদ।

করোনাকালে অর্থনৈতিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লেবানন। চাকরি হারিয়েছেন দেশের যুব সমাজ। সে জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। লকডাউন বাড়তেই তাঁরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন।

বুধবার রাতে পুলিশের গুলিতে এক বিক্ষভকারীর মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকেই ত্রিপোলির রাস্তায় উত্তেজনা আরো বেড়েছে। বৃহস্পতিবার দিনভর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

ত্রিপোলিতে একাধিক নেতা-মন্ত্রীর বাড়ি ঘিরে ফেলেছেন বিক্ষোভকারীরা। বাড়ির সামনে ময়লা স্তূপ করে তাতে আগুন ধরানো হয়েছে। বেশ কিছু গাড়িও জ্বালানো হয়েছে।

করোনার কারফিউ নিয়ে নেদারল্যান্ডসে দাঙ্গা চলছে। লেবাননের দাঙ্গাও সেই চেহারাই নিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা কারো বাধা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, করোনা মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ শনিবার ঘোষণা করে নেদারল্যান্ডসে সংক্রমণের নতুন ঢেউ আসন্ন এবং তা দ্রুত ছড়াবে৷ এরপরই দেশজুড়ে রাতে কারফিউয়ের ঘোষণা করে সরকার৷ অন্যদিকে, লকডাউন অব্যাহত আছে৷ বার, রেস্তোরাঁ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট সব বন্ধ ডিসেম্বর থেকে৷

নেদারল্যান্ডসের সব শহরে রাত ৯টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে৷  কারফিউ ভাঙলে ৯৫ ইউরো জরিমানা৷ শনিবার থেকে এ পর্যন্ত কয়েকশ’ মানুষকে জরিমানা করা হয়েছে৷ ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকবে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম নেদারল্যান্ডসে রাতে কারফিউ জারি হয়েছে৷ 

সোমবার রাতে রাজধানী হেগ, অ্যামস্টারডাম, রটারডামসহ নেদারল্যান্ডসের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নামে৷ বেশ কয়েকটি দোকানে ভাংচুর চালায়৷ আগুন দেয় কয়েকটি দোকানে৷ চলে লুটপাট৷ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এসব শহরে৷

বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই তরুণ৷ তাদের দাবি, অবিলম্বে রাতের কারফিউ তুলে দিতে হবে, নাহলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ৷ সোমবার রাতে যারা তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের বয়স ১৩ থেকে ৩০-এর মধ্যে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত ১৮৪ জনকে৷

শনিবার রাত থেকেই অ্যামস্টারডাম, রটারডামসহ বেশ কয়েকটি শহরে রাতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে বিক্ষোভকারীরা৷ পুলিশ প্রতিরোধ করতে গেলে কয়েকটি জায়গায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়৷ সোমবারের দাঙ্গা প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত হয়েছে ১০ জন পুলিশ৷

সোমবার করোনা টেস্টিং সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা৷ এছাড়া কেএফসিসহ আমস্টারডামের বেশ কয়েকটি দোকানে ভাংচুর চালায়৷ গণমাধ্যমগুলো বলছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন শহরে দাঙ্গা ছড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে৷

রটারডামে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দাঙ্গা পুলিশ নামানো হয়েছে৷ মেয়র আহমেদ আবু তালেব জরুরি ডিক্রি জারি করেছেন৷ এই ডিক্রির ফলে পুলিশ বিশেষ ক্ষমতায় সহজেই কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে৷ 

নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে এই বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে এটাকে ‘অপরাধমূলক সহিংসতা’ বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি বলেন, এর ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷ পুলিশ কর্মকর্তারা একে উল্লেখ করছেন ‘৪০ বছরের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গা’ হিসেবে৷ 

এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৫০ হাজার৷ মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৬০০ মানুষের৷