জার্মানিতে করোনার বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে শনিবার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ৷ ড্রেসডেনে পুলিশের উপর হামলা হয়েছে৷ আরেকটি শহরে সাংবাদিকদের উপরও আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির পূর্ব অঞ্চলের শহর ড্রেসডেনে ১২ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে৷ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ডানপন্থি ক্যোয়ারডেনকেন এর সদস্যরাও ছিলেন, যারা করোনা আছে এমনটাই অস্বীকার করেন৷ সেই সঙ্গে টিকা বিরোধী হিসেবেও পরিচিত তারা৷
ড্রেসডেন শহরে প্রায় এক হাজার মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন৷ তাদের র্যালিতে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি সহিংস আচরণের মতো ৪৭টি আইন ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে৷ ৩৬ বছর বয়সি একজনকে সাময়িকভাবে আটক করা হয়৷ আরো তিনজনকে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অপরাধমূলক আচরণের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
রাজধানী বার্লিনেও হাজার খানেক মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন৷ তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন৷ এসময় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধি না মানায় ৫০ জনকে বাধা দেয় পুলিশ৷ সেখানে করোনার নিয়মকানুন বজায় রাখার পক্ষে পাল্টা বিক্ষোভ করেছেন অনেকে৷
দক্ষিণের শহর স্টুটগার্টে ৭৫০ জনের বেশি প্রতিবাদে অংশ নেন৷ তাদের অনেকেরই মুখে ছিল না মাস্ক, মানেননি সামাজিক দূরত্ব৷ এসময় তারা স্লোগান দেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে৷'
স্টুটগার্টে বিক্ষোভকারীদের আক্রমনের শিকার হয়েছেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সম্প্রচার মাধ্যমে এসভেআরএর সাংবাদিকরা৷ তবে কেউ আহত হননি৷ সাংবাদিকদের একটি ইউনিয়ন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷
মিউনিখে আড়াই হাজার আন্দোলনকারী বাভারিয়া রাজ্যের সংসদের সামনে জড়ো হন৷ তবে পুলিশ শেষ পর্যন্ত ৫০০ জনকে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়৷ এছাড়াও ড্যুসেলডর্ফেদুই হাজার জন ও হানোফারেকয়েকশো মানুষ প্রতিবাদ করেন৷
এদিকে, জার্মানির সরকার অন্তত ২৮ মার্চ পর্যন্ত করোনা বিধিনিষেধের সময়সীমা বর্ধিত করেছে৷ রেস্টুরেন্ট, বার, খেলাধুলা ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকবে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত৷ তবে স্থানীয় সংক্রমণ হারের উপর নির্ভর করে দোকান খোলা যাবে৷
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত আবারো বাড়তে শুরু করেছে৷ শনিবার প্রতি লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাপ্তাহিক আক্রান্তের হার ছিল ৭৬ দশমিক এক জন, যা একদিন আগে ছিল ৭২ দশমিক চার৷ জার্মানির সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট এর আশঙ্কা এই হার আরো দ্রুত বাড়বে৷ মধ্য এপ্রিল নাগাদ যা ৩৫০ জনে পৌঁছাতে পারে৷
এফএস/এআই (এপি, ডিপিএ)
প্লেগ থেকে করোনা: রোগের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে নয়, তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের গবেষণাগারে, এমন গুজব হরহামেশাই ছড়াচ্ছে৷ শুধু করোনা নয়, যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সব মরণব্যাধী নিয়েই এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিস্তার লাভ করেছে৷
ছবি: zecken.de
প্লেগের কারণ ইহুদিরা
১৪ শতকে ইউরোপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে৷ কারো জানা ছিল না কোথা থেকে এর উৎপত্তি৷ একটা সময়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে৷ প্লেগের পেছনে আছে ইহুদিরাই; এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়৷ জোরপূর্বক উচ্ছেদও করা হয় অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/National Museum of Health and Medicine
স্প্যানিশ ফ্লু জার্মানির অস্ত্র
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু প্রায় আড়াই কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই ভাইরাসের উদ্ভব রহস্য হয়ে ছিল৷ অনেকে মনে করতেন জার্মান সেনাবাহিনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই জীবাণু আবিষ্কার করে৷
ছবি: picture-alliance / akg
এইডস ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এইডস ছড়িয়ে পড়ে৷ পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এ নিয়ে গুজব ছড়াতে শুরু করে সোভিয়েত গোয়েন্দা বাহিনী কেজিবি৷ বলা হয় ফোর্ট ড্রেট্রিক-এ জীবাণু অস্ত্র হিসেবে মার্কিনিরা এইচআইভি উদ্ভাবন করেছিল, যা পরবর্তীতে প্রয়োগ করা হয় বন্দী, সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায় এবং সমকামীদের উপর৷ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি আজও জনপ্রিয়৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/D. Oliveira
ইবোলার দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের
নব্বইর দশকে এইডস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে৷ কিন্তু এ সময় আফ্রিকায় নতুন করে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র এইডস ছড়িয়েছে এমন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা এবার দাবি করল ইবোলার জন্যও তারাই দায়ী৷ সঙ্গে অবশ্য ব্রিটেনকেও জড়ানো হল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেন্টাগনের এঁটেল পোকা প্রকল্প
২০১৯ সালে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ দাবি করেন পেন্টাগন এঁটেল পোকাসহ বিভিন্ন কীটের মাধ্যমে জীবাণু অস্ত্র তৈরির প্রকল্প চালিয়েছে৷ এই গবেষণা চলেছে ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে৷ স্মিথ সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বইও লিখেছেন৷
ছবি: zecken.de
কোভিড-১৯ কৃত্রিমভাবে ছড়ানো
ডিজিটাল যুগে যেকোন ভুল তথ্য আগের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়৷ বিভিন্ন রোগের কারণ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের গোপন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির কথা বারবার সামনে আসে৷ একইভাবে এবার ষড়যন্ত্র তত্ত্বপ্রেমীদের দাবি নভেল করোনা ভাইরাস চীনের কোন গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে৷ সেখান থেকেই তা পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে৷ কেউ কেউ দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রই জীবাণুটি তৈরি করে চীনে পাঠিয়েছে৷ যদিও এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই৷