চীনে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৬৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে৷ তবে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমে আসছে৷
বিজ্ঞাপন
তৃতীয় দিনের মতো চীনে করোনা ভাইরাসের নতুন রোগীর সংখ্যা কমেছে৷ দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী রোববার নতুন করে দুই হাজার নয়জন রোগী শনাক্ত হয়েছে৷ যেখানে আগের দিন এই সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৪৬১ জন৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৫০০ জন৷ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে এক হাজার ৬৬৫ জনে৷
এর বাইরে শনিবার ফ্রান্সে একজনের মৃত্যু হয়েছে, যা ইউরোপের মধ্যে করোনা ভাইরাসে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা৷ এছাড়াও হংকং, তাইওয়ান, জাপান, ফিলিপাইন্সেও একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে৷
বিচ্ছিন্ন-অবিচ্ছিন্নের চীন
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর অনেক দেশ এবং এয়ারলাইন চীনের সঙ্গে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে৷ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাতিল হয়েছে ১০ হাজারের বেশি ফ্লাইট৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Coffrini
চীন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন
ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ ফেব্রুয়ারিতে চীনে সব ধরনের বিমান চলাচল স্থগিত করেছে৷
ছবি: Imago/R. Zensen
অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা
মিশর, কেনিয়া ও কাতারসহ কয়েকটি দেশ বাড়তি ব্যবস্থা হিসেবে চীনের সঙ্গে বিমান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷ ইতালি ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷
ছবি: Getty Images/L. Dray
বিদেশিদেরও ঢুকতে দেওয়া দেওয়া হচ্ছে না
অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল শুধু চীনা নাগরিকদের নয় বরং চীন ভ্রমণ করা বিদেশিদেরও ঢুকতে দিচ্ছে না৷
ছবি: Reuters/Antara Foto
ফ্রি ভিসা ও অন এরাইভাল ভিসা প্রদাণ স্থগিত
চীনা বা চীনে বসবাস করা ব্যক্তিদের জন্য ফ্রি ভিসা বা অন এরাইভাল ভিসা দেওয়া কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে এই ব্যবস্থা বন্ধ রাখছে৷ এরমধ্যে অন্যতম মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও রাশিয়া৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. Ramany
চীনা নাগরিকদের ভিসা বাতিল
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ভারত ও সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ চীনা নাগরিকদের বা চীনে বসবাস করেন এমন ব্যক্তিদের বর্তমান ভিসাও বাতিল করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Chung-ren
হংকং ও তাইওয়ান
চীনের মূলখণ্ড হুবেই প্রদেশ থেকে লোকজনকে হংকংয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ স্থানীয় প্রশাসন মূলভূখণ্ড থেকে প্রবেশে আরো কড়াকড়ি আরোপের ব্যবস্থার অনুমতিও চেয়েছে৷ তাইওয়ানও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷
ছবি: Reuters/T. Siu
সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়নি চীন
এখনো কয়েকটি দেশ চীনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করেনি৷ যদিও আগের তুলনায় তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমে গেছে৷ নিউ জিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান এ দলে রয়েছে৷
ছবি: AFP/A. Wallace
ব্যতিক্রমী পাকিস্তান
অন্যান্য দেশের মত পাকিস্তানও চীনের উহান (এই নগরীতেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়) এবং হুবেই প্রদেশে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে৷ কিন্তু দেশটি তাদের অন্যতম মিত্র দেশ চীনের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ যদিও উহানে অবস্থান করা নাগরিকদের দেশে ফেরাতে রাজি না৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Retamal
চীনারা প্রবাসে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারছেন না
বিদেশে থাকা অনেক চীনা নাগরিক পরিবারের সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন করতে দেশে ফিরেছিলেন৷ নববর্ষ উৎসবের মধ্যই করোনা ভাইরাস মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় রাশিয়া, ভিয়েতনামসহ আরো কয়েকটি দেশ এখন তাদের ফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷
ছবি: pictur-alliance/Yonhab
চীন ভ্রমণে সর্বোচ্চ জরুরি সতর্কতা
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ নাগরিকদের আপাতত চীন ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Aljibe
এখনই এত কড়াকড়ির প্রয়োজন নেই
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশের কড়াকড়িতে নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি চীনের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এখনই এত কড়াকড়ি আরোপের কোনো কারণ নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Coffrini
11 ছবি1 | 11
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জাপানে৷ দেশটিতে ৪১৩ জন শনাক্ত করা হয়েছে৷ তার মধ্যে ইয়োকোহামাতে একটি প্রমোদতরীতে রয়েছেন ৩৫৫ জন৷ সিঙ্গাপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ৭২, থাইল্যান্ডে ৩৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৯, মালয়েশিয়ায় ২২ ও তাইওয়ানে রোগীর সংখ্যা ২০ জন৷ পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতে ১৬ জন, ফ্রান্সে ১২ জন ক্যানাডায় আটজন, স্পেনে ২ জন ও বেলজিয়ামে একজন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে৷
এদিকে টাকার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে যাতে না পারে তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ তারা বাজার থেকে পুরনো টাকা সংগ্রহ করেছে৷ সেগুলো সংক্রমণমুক্ত করে ১৪ দিন রেখে তারপর বাজারে ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে৷
এফএস/এআই (রয়টার্স, এএফপি, এপি)
একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ যে মহামারি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১ হাজার ৩০৭টি মহামারি ঘটেছে৷ সবচেয়ে বিপজ্জনক মহামারিগুলি জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Imago/W. Quanchao
প্লেগ
একুশ শতকেও ফিরে এসেছে প্লেগ রোগ৷ ২০১৭ সালে আফ্রিকার মাদাগাস্কারে প্লেগে আক্রান্ত হন দুই হাজার ৪১৭জন৷ প্রাণ হারান ২০৯জন৷ শুধু তাই নয়, মাদাগাস্কারে যাওয়া বা সেখান থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রেও জারি হয় বিশেষ সতর্কতা৷ মোট নয়টি দেশে প্লেগ মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷
২০১৫ সালে ব্রাজিলে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ছড়ায় এই বিশেষ ধরনের ভাইরাস৷ সদ্যোজাত শিশুদের মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে এই সংক্রমণ৷ ব্রাজিল ছাড়া আরো ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি৷ মারা যান ১৩৭ জন৷
ছবি: Reuters/J.-C. Ulate
ইবোলা
২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনিতে নতুন করে ছড়ায় ইবোলা ভাইরাস৷ এর আগে ১৯৭৬ সালে এই সংক্রমণ লক্ষ্য করা হলেও সেইবার তা একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমিত ছিল৷ কিন্তু একুশ শতকে এই সংক্রমণ আটকানো যায়নি৷ এই তিনটি দেশ ছাড়াও তিনটি মহাদেশের আরো ছয়টি দেশে পৌঁছে যায় ইবোলা, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে৷ এই সংক্রমণ ছড়ানোর প্রথম দুই মাস তা ধরা না পড়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Wamenya
মেনিনজাইটিস
২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মেনিনজাইটিস রোগে মারা যান ১৩৭জন৷ এর কারণ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে অপর্যাপ্ত টিকার কথা৷ শুধু তাই নয়, পরিচিত সংক্রমণ কয়েক দশক পরপরই নতুনভাবে ফিরে আসতে পারে, যা উন্নত পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে ধরা খুব কঠিন৷
ছবি: Imago Images/Science Photo Library
চিকুনগুনিয়া
যে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ডেঙ্গ ছড়ায়, সেই একই মশার কামড়ে হতে পারে চিকুনগুনিয়া৷ মূলত শহরাঞ্চলে দেখা যাওয়া এই সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ১৯৫২ সালে৷ কিন্তু ২০০৭ সালে নতুন করে গাবনে তা ভয়াবহ আকার ধারন করে৷ এরপর থেকে, আফ্রিকার পাশাপাশি ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ সারা বিশ্বে ধরা পড়ে৷ শুধু ২০১৬ সালেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন সাড়ে তিন লাখ মানুষ৷ ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই রোগে প্রাণ হারান ১৩৭জন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মের্স)
২০১৩ সালের জুলাই মাসে পারব আমিরাতে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম বা মের্স৷ তারপর থেকে সেই দেশে মোট ১২জন মারা গেলেও তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি৷ এখন পর্যন্ত, দুই হাজার ৫০৬টি কেস ধরা পড়েছে এবং মারা গেছেন ৮৬২টিজন, জানাচ্ছে হু৷ মের্স ঠেকাতে অন্যান্য পরামর্শের পাশাপাশি হু এর অন্যতম পরামর্শ হচ্ছে উটের দুধ বা মূত্র পান না করা৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Kittiwongsakul
কলেরা, ইয়েলো ফিভার
হু জানাচ্ছে, বছরে অন্তত ৪০টি কলেরার ঘটনা ধরা পড়ছে গত দশ বছরে৷ কলেরা বা ইয়েলো ফিভারের মতো পুরোনো রোগ ঘুরেফিরে আসছে কারণ আক্রান্ত দেশগুলিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ ২০০৯ সালে একুশ শতকের প্রথম ইনফ্লুয়েনজা ভাইরাস (এইচ১এন১) মহামারী ধরা পড়ে৷ ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কলেরার কারণে মারা গেছেন ৩০৮জন, ইয়েলো ফিভারে ৫৭জন ও ইনফ্লুয়েনজায় ৫১জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
সার্স
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী ছিল সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম৷ ২০০৩ সালে চীনে এই ভাইরাস দেখা যায়৷ প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন ল্যাব থেকে ছড়িয়েছিল এই ভাইরাস৷ মোট ২৬টি দেশে ছড়ানো এই সংক্রমণে আক্রান্ত হন প্রায় ৮ হাজার জন৷ মূলত চীনে ছড়ানো এই ভাইরাস আবার ফিরে আসতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন৷ সেক্ষেত্রে নতুন করে চীনে যাওয়া বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে হু৷