ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ ফেব্রুয়ারিতে চীনে সব ধরনের বিমান চলাচল স্থগিত করেছে৷

মিশর, কেনিয়া ও কাতারসহ কয়েকটি দেশ বাড়তি ব্যবস্থা হিসেবে চীনের সঙ্গে বিমান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷ ইতালি ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷

অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল শুধু চীনা নাগরিকদের নয় বরং চীন ভ্রমণ করা বিদেশিদেরও ঢুকতে দিচ্ছে না৷

চীনা বা চীনে বসবাস করা ব্যক্তিদের জন্য ফ্রি ভিসা বা অন এরাইভাল ভিসা দেওয়া কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে এই ব্যবস্থা বন্ধ রাখছে৷ এরমধ্যে অন্যতম মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও রাশিয়া৷

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ভারত ও সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ চীনা নাগরিকদের বা চীনে বসবাস করেন এমন ব্যক্তিদের বর্তমান ভিসাও বাতিল করেছে৷

চীনের মূলখণ্ড হুবেই প্রদেশ থেকে লোকজনকে হংকংয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ স্থানীয় প্রশাসন মূলভূখণ্ড থেকে প্রবেশে আরো কড়াকড়ি আরোপের ব্যবস্থার অনুমতিও চেয়েছে৷ তাইওয়ানও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷

এখনো কয়েকটি দেশ চীনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করেনি৷ যদিও আগের তুলনায় তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমে গেছে৷ নিউ জিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান এ দলে রয়েছে৷

অন্যান্য দেশের মত পাকিস্তানও চীনের উহান (এই নগরীতেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়) এবং হুবেই প্রদেশে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে৷ কিন্তু দেশটি তাদের অন্যতম মিত্র দেশ চীনের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ যদিও উহানে অবস্থান করা নাগরিকদের দেশে ফেরাতে রাজি না৷

বিদেশে থাকা অনেক চীনা নাগরিক পরিবারের সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন করতে দেশে ফিরেছিলেন৷ নববর্ষ উৎসবের মধ্যই করোনা ভাইরাস মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় রাশিয়া, ভিয়েতনামসহ আরো কয়েকটি দেশ এখন তাদের ফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ নাগরিকদের আপাতত চীন ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে৷

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশের কড়াকড়িতে নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি চীনের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এখনই এত কড়াকড়ি আরোপের কোনো কারণ নেই৷

শনিবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছায়৷ তাদের নিরাপত্তায় নেয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা৷

বিমান বন্দরে সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর- করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করছে৷

শুধু যাত্রী নয় কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা৷

দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাত্রীদের সবাইকে পরীক্ষা করা হয়৷ সিভিল এভিয়েশনের বিশেষ ব্যবস্থায় বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালের গেট দিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসা হয়৷

উহান ফেরতদের পরিবহনে বিআরটিসির আটটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস এবং কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স এনে রাখা হয়৷ যাত্রীদের মালামাল নেওয়ার জন্য আনা হয় চারটি ট্রাক৷

বিআরটিসির বাসে করেই আশকোনায় ‘কোয়ারেন্টাইনে’ নিয়ে যাওয়া হয় তাদের৷

উহান থেকে ফেরত ৩১২ জনের মধ্যে মধ্যে ২৯৭ জন পূর্ণবয়স্ক, ১২ জনের বয়স এক বছরের ওপরে ৷ তিনজনের বয়স এক বছরের নীচে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রথমে ৩৬১ জনের আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৩১৬ আসবে বলে ঠিক হয়৷ এরা বিমানবন্দরে আসার পর চারজন আসে নাই৷ সেখানে থার্মাল স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে যখন এসেছে তখন তাদের গায়ে জ্বর আছে বলে জানা গেছে৷ অবজারভেশনের জন্য তাদের বলা হয়েছে এই ফ্লাইটে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে যাওয়া ঠিক হবে না৷’’

বিমানবন্দর থেকে আটজনকে দুটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘‘তাদের মধ্যে তিনজনের ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো জ্বর আছে৷ বাকিদের শরীরেও জ্বর থাকায় তাদের এখানে না এনে সরাসরি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে এখনই সন্দেহ করা হচ্ছে না৷’’ অসুস্থদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল৷

আশকোনা হাজী ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিন তলার ৪টি ডরমেটরিতে ৩৬১ জনকে রাখা হবে৷ প্রতিটি ডরমেটরিতে ১০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হবে৷ সেখানে বিছানা, চাদর, বালিশ, মশারি, মেডিসিন, পানি, লাইট, টয়লেট থাকবে৷ সকাল ও বিকেলের নাস্তাসহ ৫ বেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকবে৷ শিশু ও নারীদের জন্যও থাকবে আলাদা খাবার ও থাকার ব্যবস্থা৷’’