কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ লকডাউনের কারণে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে৷ দৈনন্দিন জীবন এলোমেলো, সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে৷
বিজ্ঞাপন
অদৃশ্য এই ভাইরাস পুরো বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছে৷ এই সময়ে মানুষ স্বাভাকিভাবেই পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না৷
তবে সংকটময় এই পরিস্থিতিতে আমরা যদি আমাদের পরিবেশবান্ধব অভ্যাসগুলো ত্যাগ না করি, সেটা বরং আমাদের উপকারেই আসবে৷ বিশ্বের কাছে একেবারে নতুন এই ভাইরাসের ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি৷ তাই আমাদের ঘরে থেকে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নীতি মেনে চলে এই ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হবে৷ এই ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় সেটাও আমাদের জানতে হবে৷ পরিবেশ নিয়েও হতে হবে সচেতন৷
প্লাস্টিকে মোড়ানো খাবার কি নিরাপদ?
লোকজন সাধারণত দোকানে প্লাস্টিকে মোড়ানো খাবার পরিষ্কার ও নিরাপদ মনে করে৷ মার্চের মাঝামাঝিতে ব্লুমবার্গএনইএফ-র এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের কারণে জীবাণুমুক্ত খাবার নিয়ে মানুষের মধ্যে যে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তাতে খাবার প্লাস্টিকে মোড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে৷ কারণ, ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা যেসব সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার করছেন সেগুলো সব একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক৷ কাজেই খাবারের ক্ষেত্রেও মানুষ এই পথ অনুসরণ করতে পারে৷
পরিবেশ রক্ষায় আপনি যে আটটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন
নতুন বছরে বিভিন্নজন বিভিন্ন সঙ্কল্প করে৷ পরিবেশ রক্ষায় কি আপনার কোন পরিকল্পনা রয়েছে? ২০২১ সালে আপনার এই আটটি সিদ্ধান্ত কমাতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব৷
ছবি: Imago/Westend61
ভ্রমণে দায়িত্বশীলতা
যেখানে সম্ভব সাইকেল বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করুন৷ কার্বণ নিঃসরণে আপনার দায় কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় এটি৷ দূরপাল্লায় যতটা পারেন ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করুন৷ উড়োজাহাজ বাদ দিয়ে সম্ভব হলে ভ্রমণ করুন ট্রেনে৷
ছবি: Reuters/E. Su
কেনাকাটায় সচেতনতা
ভোক্তা হিসেবে এই পরিবেশ রক্ষার অভাবনীয় শক্তি রয়েছে আপনার হাতে৷ এজন্য কেনাকাটায় বাড়তি সচেতন থাকুন৷ পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করুন৷ কোনকিছু কেনার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনার সত্যিই প্রয়োজন আছে কীনা৷ সম্ভব হলে ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ পণ্য কিনুন৷ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষই এই অভ্যাস গড়ে তুলছে৷
ছবি: Imago/Westend61
খাদ্যের অপচয় নয়
আপনি জানেন কি, বিশ্বে যত খাদ্য উৎপাদন হয় তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়? এই অপচয় কমাতে আপনিও কিন্তু ভূমিকা রাখতে পারেন৷ যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খাবার নিন, পুরোটা খেতে চেষ্টা করুন৷ তারপরও থেকে গেলে তা সার হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করুন৷ বাগানে, গাছে রাসায়নিক সারের বদলে এ ধরনের জৈব বর্জ্য ব্যবহার করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
যন্ত্রের ব্যবহার
পৃথিবীতে এখন মানুষ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ইলেকট্রনিক্স কিংবা প্রযুক্তি পণ্যের সঙ্গে বেশি যুক্ত থাকে৷ পাখা, বাতি থেকে শুরু করে বহনযোগ্য ল্যাপটপ, মোবাইল কী নেই৷ এইসব যন্ত্র অপ্রয়োজনে বন্ধ রাখুন৷ দীর্ঘসময়ের বিবেচনায় আপনি একাই তাতে বিপুল জ্বালানী সাশ্রয় করবেন৷ সহজ এই অভ্যাসটি উপকার করবে পৃথিবীরও৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
আওয়াজ তুলুন
বিশ্বের সরকারগুলোকে জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে বাধ্য করুন৷ এজন্য আন্দোলনে সামিল হন, আওয়াজ তুলুন৷ শুধু রাস্তায়ই নামতে হবে এমনটা নয়৷ বন্ধু, প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়েও পরিকল্পনা করুন কীভাবে আপনি স্থানীয় রাজনীতিবিদদের এই বিষয়ে চাপ দিতে পারেন৷ যেভাবেই হোক আওয়াজ তোলার বিকল্প নেই৷
ছবি: Reuters/K. Pempel
খাদ্যাভ্যাস বদলান
স্বাস্থ্যের বিষয়ে বেশিরভাগ মানুষই সচেতন৷ খাদ্যগ্রহণে পৃথিবীর স্বাস্থ্যের বিষয়টিও মাথায় রাখুন৷ মাংসের চাহিদা মেটানোর জন্য যে খামার গড়ে উঠছে তা বনভূমি উচ্ছেদ ও কার্বন নিঃসরণের অন্যতম কারণ৷ প্রাণীজের বদলে তাই উদ্ভিজ্জ খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ুন৷ এতে পরিবেশের উপর আপনার নেতিবাচক ভূমিকা হ্রাস পাবে৷
ছবি: Colourbox
পুনর্ব্যবহারের বিকল্প নেই
বিশ্বে প্লাস্টিকের ব্যবহার ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে৷ এর মারাত্বক দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে সমুদ্রে৷ প্রকৃতিকে বাঁচাতে হলে এইসব প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই৷ প্লাস্টিকের ব্যবহার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন৷ অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক যেখানে সেখানে না ফেলে তার নতুন ব্যবহার বের করুন৷
ছবি: picture-alliance/ZB/S. Stache
ফিরে যান প্রকৃতির কাছে
নিজের কাজের থেকে সময় বের করে চলে যান প্রকৃতির কোলে৷ আশেপাশে অথবা সম্ভব হলে দূরে, দেখে নিন পৃথিবীর সৌন্দর্যকে৷ এই প্রকৃতিকে রক্ষা করা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই ভ্রমণ আপনাকে সেই কথাই মনে করিয়ে দিবে৷
ছবি: Imago/All Canada Photos
8 ছবি1 | 8
যদিও ‘প্লাস্টিক কোনো কিছুকে পরিষ্কার ও নিরাপদ রাখতে পারে না’ বলে মনে করেন গ্রিনপিস ইউএসএ-র গবেষক আইভি স্লেগালের৷
তিনি বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত গবেষণাগারে করা নানা পরীক্ষায় দেখা গেছে অন্য যেকোনো উপাদানের থেকে প্লাস্টিকে করোনা ভাইরাস সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকে৷’’
করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সুপারমার্কেটগুলোতে দরজার হাতল, শপিং ট্রলি বা চেকআউট কার্ড টার্মিনাল কিছুক্ষণ পরপর মোছা এবং জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে৷ কিন্তু দোকানের প্রতিটি পাস্তার প্যাকেট, ক্যান বা প্লাস্টিকে মোড়ানো অন্যান্য খাবারের প্যাকেট কিছুক্ষণ পরপর পরিষ্কার করা এক কথায় অসম্ভব৷
বোতলজাত পানি কি প্রয়োজন?
পলিথিনের বিকল্প পাটের ব্যাগ
05:22
এ সময় প্লাস্টিকের বোতলজাত পানি খাওয়ারও প্রয়োজন নেই৷ বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে৷ কারণ, ইউরোপিয়ান ফুড ইনফর্মেশন কাউন্সিল জানিয়েছে, যেহেতু ভাইরাস পানিতে কিছু সময় বেঁচে থাকতে পারে তাই বসতবাড়ির লাইনে পানি যাওয়ার আগে সেগুলো ফিল্টার করা ও জীবাণুমুক্ত করা হয়৷ ওই পানিতে করোনা ভাইরাস থাকে না৷
পুনঃব্যবহারযোগ্য ব্যাগ বা কন্টেইনার কি ভাইরাস ছড়ায়?
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুনঃব্যবহার যোগ্য কন্টেইনার ও ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়৷ কোথাও কোথাও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আপাতত তুলে নেওয়া হয় বা স্থগিত করা হয়৷
কিন্তু আসলেই কি এটা সঠিক সিদ্ধান্ত? এর পরিবেশবান্ধব বিকল্পই বা কি হতে পারে? কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, পুনঃব্যবহার যোগ্য ব্যাগ বা কাপড়ের ব্যাগের মাধ্যমে ভাইরাস হয়তো ছড়াতে পারে৷ সেক্ষেত্রে সংক্রামণ এড়াতে আপনি সহজেই এ ধরণের ব্যাগ প্রত্যেকবার ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন৷ এমনকি বাজার করার পর বাড়িতে ফিরে ব্যাগ খালি করে সেটি দূরে বাড়ির কোনো কোণে সরিয়েও রাখতে পারেন৷ দুই-তিন দিনে ভাইরাস আপনা থেকেই মরে যাবে৷
কাঁচা বাজার এড়াতে খাবার কিনে খাওয়া কি উচিত?
লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ অবস্থায় হোম ডেলিভারি দেওয়া খাবারের ব্যবসা বেশ ফুলেফেঁপে উঠেছে৷ বিশেষ করে ইউরোপে৷
ইউরোপের খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ বলেছে, এখনো বিষয়টি প্রমাণিত না হলেও কাঁচা খাদ্য পণ্যের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ কিন্তু আগুনের তাপে এই ভাইরাস মরে যায়৷ তাই ভালোভাবে রান্না করা খাবারে ভাইরাস থাকে না৷ তাছাড়া খাবার সঠিক নিয়মে প্যাকেট করলে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকিও অনেক কম৷ খাবারের দামও আগে দেওয়া যায় এবং দূরত্ব বজায় রাখতে খাবার দরজার সামনে রেখে যাওয়াও সম্ভব৷
তাই এভাবে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি খুবই কম৷ কিন্তু সেইসব প্লাস্টিকের বাক্স বা পিজা বক্সগুলোর কি হবে? রিসাইকেল করা যায় এমন উপাদান দিয়ে সেগুলো বানানো হলেও পরিবেশে তো জঞ্জাল বাড়ছে৷
মার্টিন কুয়েবলার/এসএনএল/কেএম
করোনা আতঙ্ক থেকে নিরাপদ থাকতে যা করতে পারেন
করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত হয়েছে বটে, কিন্তু এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে বা নিজে আতঙ্কিত হয়ে কোনো লাভ নেই৷ বরং এই মুহূর্তে নিজেকে ফিট রাখা এবং সচেতন থাকাটাই বেশি জরুরি৷
ছবি: Imago Images/photothek/U. Grabowsky
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি
শারীরিকভাবে যারা দুর্বল এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরকে যে কোনো ধরনের ভাইরাস খুব সহজে আক্রমণ করতে পারে৷ তাই সকলেরই এখন নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, লেবু এবং বিভিন্ন ফল খাওয়া প্রয়োজন৷
ছবি: Fotolia/Dino Osmic
আদা ও লেবু পানি
এক গ্লাস গরম পানিতে দুই টুকরো আদা এবং একটু লেবুর রস দিয়ে দিন৷ তারপর ধীরে ধীরে তা পান করুন৷ এভাবে দিনে কয়েক গ্লাস পানি পান করতে পারেন৷ তাছাড়া অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন বেশি পানি পান করা জরুরি৷
ছবি: Imago Images/Rüdiger Wölk
জিঙ্ক
এখন জরুরি ভিটামিন ডি-৩ এবং জিঙ্ক যা, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখে৷ রাতে ১৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন৷ তাছাড়া বীজ জাতীয় খাবারে জিঙ্কের উপস্থিতি যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনা ভাইরাসকে দূরে রাখতে এই পরামর্শগুলো দিয়েছেন জার্মান চিকিৎসক ডা. আনে ফ্লেক৷
ছবি: imago images/McPHOTO
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন
জার্মানির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ডা. লোথার এইচ ভিলার এক টিভি সাক্ষাৎকারে জনগণকে যে কোনো ধরনের জনসমাগম থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করেছেন৷ যে কোনো মানুষের কাছ থেকে কমপক্ষে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
জীবাণু থেকে সাবধান
এই মুহূর্তে ভালোভাবে হাত ধোয়া খুবই জরুরি, তবে তা শুধু নিজের বাড়ি, অফিস বা কাছাকাছি কোনো বাথরুম থাকলেই সম্ভব৷ তাই বাইরে থাকাকালীন সময়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন আরেক জার্মান ডাক্তার ডা. এরন্সট টাবোরি৷
ছবি: AFP/S. Bozon
পয়সা বা কয়েন থেকে সাবধান!
হাজারো হাত ঘুরে পয়সা আমাদের হাতে আসে৷ আর সেকারণেই কয়েন বা ভাঙতি পয়সায় যে জীবাণু থাকে তা হয়তো অনেকেরই জানা৷ তাই কেনাকাটার সময় এদিকেও সচেতন থাকার পরামর্শ রয়েছে ডা. টাবোরি৷