করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি বাড়তে থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুধবার এক বৈঠক ডেকেছে৷ সেখানে এই ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হবে৷
বিজ্ঞাপন
এদিকে, চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪৭৩ হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত মারা গেছেন নয় জন৷ তাঁরা সবাই চীনের হুবেই রাজ্যের উহান শহরের বাসিন্দা৷ সেখানেই প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে৷
চীন ছাড়াও এখন পর্যন্ত তাইওয়ান, ফিলিপাইন্স, থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রেও একজন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে৷
চীনের উহান শহর থেকে ম্যাকাও যাওয়া একজন পর্যটকের দেহেও এই ভাইরাস পাওয়া গেছে৷
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে উহান থেকে ফেরা এক ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে পরীক্ষা করা হয়৷ তবে তাঁর শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়নি৷
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের উপ-পরিচালক লি বিন বলেন, করোনা ভাইরাসের উৎস এবং এটি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা জানতে গবেষণার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে৷
এদিকে, সপ্তাহান্তে চীনের নববর্ষকে ঘিরে বিদেশে থাকা অনেক চীনা নাগরিক দেশে ফিরছেন৷ তাঁরা যখন আবার ফিরে যাবেন তখন তাঁদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
এছাড়া চীনের ভেতরেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে৷ তাই বিমানবন্দরসহ রেল ও বাস স্টেশনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷
২০০২ -২০০৩ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল৷ সেই সময় প্রায় আটশ জন মারা গিয়েছিলেন৷ করনো ভাইরাস নিয়েও সেরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
দুই দশকে নতুন যত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
গোটা বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাস বিরুদ্ধে লড়ছে, যার শুরুটা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে৷ গত প্রায় দুই দশকে ছড়িয়ে পড়া নতুন কয়েকটি ভাইরাস নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Center for Disease Control
বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তারপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়৷ ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়৷ পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ৷ এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়৷ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
সার্স
সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে৷ ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে৷ আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় ৭৭৪ জন৷ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয়৷ তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বজুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়৷ শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেওয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন৷ দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: AP
মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস৷ ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়৷ দেশটিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মারা যান৷ উট থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়৷ হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে গত ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস প্রকোপ শুরু হয়৷ পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বৈশ্বিক মহামারি
২০২০ সালের শুরু থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিভিন্ন দেশে৷ এক পর্যায়ে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এশিয়া থেকে ইউরোপ হয়ে এখন অ্যামেরিকা রয়েছে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর শীর্ষে৷ সারা বিশ্বে এরিমধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে রহস্যময় ভাইরাসটি৷
ছবি: Getty Images/L. DeCicca
প্রতিষেধক নেই
এখনও করোনার কোন প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি৷ তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ৷ কয়েকটি উদ্যোগ বেশ খানিকটা এগিয়েছে৷ মানব শরীরে কিছু সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা নিরীক্ষাও শুরু হয়েছে৷ তবে সেগুলো কার্যকারিতা নিশ্চিত হতে আরো বছর খানেক সময় লাগতে পারে৷