করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সবার অংশগ্রহণ চান ম্যার্কেল
১৮ মার্চ ২০২০
জাতীর উদ্দেশ্যে বিরল ভাষণে জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরেন৷ দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলার আবেদন জানান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সহজে নাটকীয়তা পছন্দ করেন না৷ বছরের শেষে জাতির উদ্দেশ্যে প্রথাগত ভাষণ ছাড়া তিনি সরাসরি দেশের মানুষের প্রতি কোনো বার্তা দেন না৷ বুধবার সন্ধ্যায় তিনি জার্মানির মানুষের উদ্দেশ্যে এক টেলিভিশন ভাষণে করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরেন৷ গত ১৫ বছরের শাসনকালে এই প্রথম এমন ভাষণ দিলেন তিনি৷
ম্যার্কেল বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় নি৷ তাঁর মতে, এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে জার্মানিতে বসবাসরত প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্বজ্ঞানের প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, প্রত্যেককে সংক্রমণ এড়াতে সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে৷ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে কর্তৃপক্ষ যে নিয়ম বেঁধে দিচ্ছে, তা মেনে চলার আবেদন জানান তিনি৷ তবে এখনই দেশজুড়ে কারফিউ ঘোষণার কোনো সম্ভাবনার উল্লেখ করেন নি ম্যার্কেল৷ আগামী সপ্তাহে আরও কড়া নিয়মের পূর্বাভাষ দেন তিনি৷
দেশের এমন কঠিন অবস্থা সত্ত্বেও ডাক্তার, নার্স-সহ চিকিৎসাক্ষেত্রে যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন, তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ দেশের অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব সম্পর্কেও সতর্ক করে দেন ম্যার্কেল৷ তিনি বলেন, সরকার বেকারত্ব ও অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ করতে সবরকম পদক্ষেপ নেবে৷
মার্কেল আশ্বাস দেন, জার্মান সরকার ও মন্ত্রিসভা যতটা সম্ভব স্বচ্ছতা বজায় রেখে সবরকম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ বিশেষ করে স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামো চালু রাখতে করোনা ভাইরাসের প্রসারের গতি কমাতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷
এভাবে সমাজের মধ্যে বিচ্ছিন্ন থাকা কতটা কঠিন, সে বিষয়ে ম্যার্কেল সচেতন৷ এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখতে সৃজনশীল পদ্ধতির কথা ভাবা প্রয়োজন৷ যেমন নাতি-নাতনিরা দাদা-নানাদের একাকিত্ব ঘোচাতে পডকাস্ট তৈরি করছে৷ অতীতের মতো চিঠি লেখার পরামর্শও দেন তিনি৷
জার্মানির জীবনযাত্রায় করোনার প্রভাব
জার্মানিতে করোনার সংক্রমণ হাজার ছাড়িয়েছে৷ যার প্রভাবে দৈনন্দিন জীবনে আনতে হচ্ছে নানা পরিবর্তন৷ দর্শকহীন ফুটবল ম্যাচ বা ফ্লাইট বাতিল, অনুষ্ঠান বা মেলা স্থগিত কিংবা গাড়ি উৎপাদন কমে যাওয়া, সবই হচ্ছে করোনার প্রভাবে৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
খাদ্য সহায়তা বন্ধ
জার্মানিতে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর সুপারশপ ও খাবারের দোকানগুলোতে লম্বা লাইন ধরে লোকজন নিত্যপণ্য কেনা শুরু করে৷ টিনজাত খাবার এবং টয়লেট পেপারের তাক তো খালিই থাকছে৷ এ অবস্থায় দেশটিতে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ অথচ দেশটিতে ১৫ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Matzka
ফাঁকা স্টেডিয়াম
করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় ভিড় এড়িয়ে চলা৷ যে কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক আয়োজন বাতিল হয়ে গেছে৷ স্বাস্থ্য ‘সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ‘ বিবেচনা করে খালি স্টেডিয়ামে জার্মান ফুটবল লীগের ম্যাচ আয়োজন করতে ক্লাব ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/O. Berg
একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল
করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর জার্মানিতে একের পর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা স্থগিত বা বাতিল করা হচ্ছে৷ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাইপৎশিশ বইমেলা, মুজিকম্যাসে ফ্রাঙ্কফুর্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
এখনো খোলা স্কুল
ইটালিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ জার্মান সরকার এখনো এই সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ যদিও দেশটির অন্তত ১০০টি স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার করোনার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ বাডেন-ভ্যুটের্নবের্গ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিতের কথা ভাবছেন৷
ছবি: picture-alliance/SvenSimon/F. Hoermann
এশীয়রা বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন
চীনের উহান নগরীতে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়৷ যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ করোনা আতঙ্কে পশ্চিমা দেশগুলোতে লোকজন শুধু চীন নয় বরং এশীয় রেঁস্তোরা ও দোকান এড়িয়ে চলছেন৷ এশীয় চেহারার কারণে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷ লাইপৎশিশে বুন্দেস লিগার ম্যাচ দেখতে যাওয়া একদল জাপানিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
এয়ারলাইন ব্যবসায় ভাটা
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে; বিশেষ করে এয়ারলাইনগুলোর৷ জার্মানির এয়ারলাইন লুফথান্সার ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তাদের প্রায় ১৫০ উড়োজাহাজ বসে আছে, বাতিল হয়েছে সাত হাজার ১০০র বেশি ফ্লাইট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
গাড়ি উৎপাদনে ধস
ডিসেম্বরের শেষ দিকে উহানে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর জানুয়ারি থেকে চীনে গাড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ আছে৷ জার্মানির গাড়ি উৎপাদন শিল্পেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/J. Meyer
পর্যটক নেই
জার্মানির পর্যটন খাতে করোনার প্রভাব ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন৷ সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ৭৬ শতাংশের বেশি হোটেল ও রেঁস্তোরা তাদের বুকিং বাতিল হওয়ার কথা জানিয়েছে৷ আয়ও একইভাবে হ্রাস পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Wurtscheid
সীমান্তে পরীক্ষা
ইটালি ও ফ্রান্সের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতেই সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে৷ সোমবার পর্যন্ত সেখানে ১১৩৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন৷ যার প্রেক্ষিতে জার্মান সীমান্ত দিয়ে আসা গাড়ির যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা শুরু করেছে পোল্যান্ড ও চেকপ্রজাতন্ত্র৷