যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের স্বাস্থ্যবিমা নেই৷ টেক্সাসের বাসিন্দা আমান্ডা (ছদ্ম নাম) তাদের একজন, যিনি ম্যাট্রেস তৈরির কারখানায় কাজ করেন৷ বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস যেভাবে ছড়িয়েছে তাতে চরম উদ্বেগে দিন কাটছে তার৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘খুবই দুঃখের সঙ্গে বলছি, এটা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত নয়৷ আমাদের প্রতিনিয়ত এমন অনেক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়, এটা তার একটা মাত্র৷ আমার বাড়িতে থাকার উপায় নেই, এমনকি ডাক্তারের খরচ যোগানও আমার পক্ষে সম্ভব না৷''
আমান্ডার মত কর্মীরা বছরে মাত্র তিনদিন অসুস্থতার ছুটি পান৷ তারমধ্যে দুইদিন বেতনসহ৷ একবার ডাক্তার দেখালে তাদের কয়েকশ ডলার বিল হয়৷
এরকম একজন ওহায়োর বাসিন্দা শেলডন রিডল৷ ১০ বছর আগে সাধারণ ফ্লু থেকে তার নিউমনিয়া হয়ে গেলও অর্থের অভাবে ডাক্তারের কাছে যেতে পারেননি৷ অনেক দিন আগের কথা হলেও ভয়ঙ্কর সেই দিনগুলো কথা তিনি ভুলতে পারেন না৷
করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার ১০ কারণ
করোনাকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ ফলে এই ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ থাকতেই পারে৷ তবে আতঙ্কিত সম্ভবত না হলেও চলবে, অন্তত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামকে তাই বলেছেন নাভারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইগ্নাসিও লোপেজ গনি৷
ছবি: DW/S. Hossain
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমরা জানি
প্রথম এইডস রোগী ধরা পড়েছিল ১৯৮১ সালের জুন মাসে৷ তবে, সেই রোগের কারণ যে এইচআইভি ভাইরাস সেটা বুঝতে দুই বছরের বেশি সময় লেগেছিল৷ আর মানবদেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর, চীনে৷ আর সেই ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে ভাইরাসটি শনাক্ত সম্ভব হয়৷ শুধু তাই নয়, প্রথম সংক্রমণের দশদিনের মাথায় ভাইরাসটির ধরন, উৎপত্তিসহ প্রায় সব তথ্য জানা সম্ভব হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Soeder
ভাইরাসটি শনাক্তের উপায় জানি আমরা
১৩ জানুয়ারি থেকে ভাইরাসটি শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট সহজলভ্য হয়৷
ছবি: AFP/T. Kienzle
চীনে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে
চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কড়াকড়ি এবং বিচ্ছিন্ন রাখার নীতি কাজ করেছে৷ দেশটিতে প্রতিদিনই নতুন সংক্রমণের হার কমছে৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যেটা পরিষ্কার তা হচ্ছে ভাইরাসটি ছড়ালে তা নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকছে৷ ফলে সেটির সংক্রমণের পরিধি সীমিত রাখা সহজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
আশি শতাংশ সংক্রমণই হালকা ধরনের
৮১ শতাংশক্ষেত্রেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ টের পাওয়া যায়না বা খুব হালকা কিছু লক্ষণ টের পাওয়া যায়৷ তবে, ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রবলভাবে ফুটে ওঠে এবং পাঁচ শতাংশক্ষেত্রে সেটি খুবই জটিল আকার বা প্রাণঘাতি হতে পারে৷ তবে, ভাইরাসটিতে মৃত্যুর সঠিক হার এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ এখন পর্যন্ত মৃত্যুর যে হারের কথা শোনা যাচ্ছে, প্রকৃত হার তারচেয়ে কম হতে পারে৷
ছবি: DW/S. Hossain
মানুষ সুস্থ হয়
এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে মূলত সনাক্তকৃত করোনা ভাইরাস রোগী এবং করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা থাকে৷ এসব সংখ্যা পর্যালোচনা করলে দেয়া যাচ্ছে আক্রান্ত যত মানুষ মারা যাচ্ছেন তারচেয়ে ১৩ গুণ বেশি মানুষ সুস্থ হচ্ছেন৷ আর আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যার মধ্যকার আনুপাতিক হার ক্রমশ বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/S. Supinsky
শিশুদের হালকা সংক্রমণ
এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশের বয়স বিশ বছরের নীচে৷ আর ৪০ বছরের নীচে বয়সিদের মধ্যে মৃত্যুর হার মাত্র শুন্য দশমিক দুই শতাংশ৷ শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের লক্ষণগুলো এতই হালকা হতে পারে যে তা হয়ত অনেকের নজরেই পড়বে না৷
ছবি: Reuters/A. Jalal
সহজেই নিষ্কৃয় করা যায় এই ভাইরাস
এলকোহলযুক্ত জীবানুনাশক ব্যবহার করে মাত্র একমিনিটেই সার্ফেসে থাকা করোনা ভাইরাস নিষ্কৃয় করা যায়৷ পাশাপাশি সাবান এবং পানি ব্যবহার করে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধুয়ে করোনা ভাইরাস থেকে অনেকটাই নিরাপদে থাকা যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Khalil
বিশ্বব্যাপী তৎপর বিজ্ঞানীরা
করোনা ভাইরাস ছড়ানোর একমাসের মধ্যেই বিশ্বের নানা দেশে অবস্থানরত বিজ্ঞানী, গবেষকরা এই বিষয়ে শতাধিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন৷ আরো অনেক নিবন্ধ রিভিউয়ের অপেক্ষায় রয়েছে৷ অতীতে এধরনের মহামারী ছড়ানোর পর সাধারণত সেটা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে আরো অনেক বেশি সময় লাগতো৷
ছবি: picture-alliance/Pressebildagentur Ulmer
ভ্যাকসিনের প্রটোটাইপ প্রস্তুত
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য অন্তত আটটি প্রকল্প কাজ করছে৷ অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম ভ্যাকসিনের একটি প্রোটোটাইপও তৈরি করে ফেলেছে৷ এধরনের প্রোটোটাইপ শীঘ্রই মানবদেহে পরীক্ষা করা হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. McAvoy
এন্টিভাইরালও পরীক্ষা করা হচ্ছে
ভ্যাকসিন দীর্ঘমেয়াদে ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে৷ কিন্তু এই মুহূর্তে যারা আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা প্রদান জরুরী৷ করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে এমন আশিটির বেশি এন্টিভাইরালের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে৷ লেখক: নাভারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানী ইগ্নাসিও লোপেজ গনি
ছবি: picture-alliance/AP/Chinatopix
10 ছবি1 | 10
তিনি একটি কলসেন্টারে কাজ করেন৷ যেখানে প্রায় ৫০ জন কর্মী ছোট্ট একটি কক্ষে গাদাগাদি করে বাস করেন৷ সেখানে ‘অসুস্থাজনিত ছুটি 'নেই৷ চিকিৎসাপত্র ছাড়া অসুস্থ হলেও কেউ কাজে না যাওয়ার অনুমতি পান না৷
তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্যবিমা নেই, তাই অসুস্থ হলে শত শত ডলার খরচ করে আমরা জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে পারি না৷ এটা আমাদের সাধ্যের বাইরে৷'‘
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস যেভাবে বিস্তার করছে তাতে নিজেকে নিয়ে নিদারুণ উদ্বেগে আছেন বলে জানান তিনি৷
বলেন, ‘‘আমার হৃদরোগ আছে৷ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল৷ আমি গাড়িতে বসে পুরাতন চিকিৎসাপত্র দিয়ে কিছু ওষুধ কিনেছি৷ আমাকে এখনো খাবার কিনতে যেতে হবে৷ সেটাও গাড়ি থেকেই কিনব৷ আমি এখন দিনে একবেলা খাচ্ছি৷''
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমের অঙ্গরাজ্য অরেগনের একটি ক্লিনিকের একজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাদের ক্লিনিকে গত বুধবার থেকে (১১ মার্চ) প্রথম করোনা ভাইরাস টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে৷ তার আগে টেস্ট করার ব্যবস্থা ছিল না৷ টেস্ট শুরু পর থেকেই পরিস্থিতি ভয়াবহ রকম পাল্টে গেছে৷
‘‘বৃহস্পতিবার চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল৷ কিভাবে সব চলবে বা কিভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটাই বোঝা যাচ্ছিল না৷''
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ১৬৭৮ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, মারা গেছেন ৪১ জন৷
জুলিয়া মান্ক/এসএনএল/কেএম
প্লেগ থেকে করোনা: রোগের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে নয়, তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের গবেষণাগারে, এমন গুজব হরহামেশাই ছড়াচ্ছে৷ শুধু করোনা নয়, যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সব মরণব্যাধী নিয়েই এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিস্তার লাভ করেছে৷
ছবি: zecken.de
প্লেগের কারণ ইহুদিরা
১৪ শতকে ইউরোপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে৷ কারো জানা ছিল না কোথা থেকে এর উৎপত্তি৷ একটা সময়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে৷ প্লেগের পেছনে আছে ইহুদিরাই; এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়৷ জোরপূর্বক উচ্ছেদও করা হয় অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/National Museum of Health and Medicine
স্প্যানিশ ফ্লু জার্মানির অস্ত্র
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু প্রায় আড়াই কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই ভাইরাসের উদ্ভব রহস্য হয়ে ছিল৷ অনেকে মনে করতেন জার্মান সেনাবাহিনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই জীবাণু আবিষ্কার করে৷
ছবি: picture-alliance / akg
এইডস ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এইডস ছড়িয়ে পড়ে৷ পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এ নিয়ে গুজব ছড়াতে শুরু করে সোভিয়েত গোয়েন্দা বাহিনী কেজিবি৷ বলা হয় ফোর্ট ড্রেট্রিক-এ জীবাণু অস্ত্র হিসেবে মার্কিনিরা এইচআইভি উদ্ভাবন করেছিল, যা পরবর্তীতে প্রয়োগ করা হয় বন্দী, সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায় এবং সমকামীদের উপর৷ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি আজও জনপ্রিয়৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/D. Oliveira
ইবোলার দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের
নব্বইর দশকে এইডস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে৷ কিন্তু এ সময় আফ্রিকায় নতুন করে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র এইডস ছড়িয়েছে এমন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা এবার দাবি করল ইবোলার জন্যও তারাই দায়ী৷ সঙ্গে অবশ্য ব্রিটেনকেও জড়ানো হল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেন্টাগনের এঁটেল পোকা প্রকল্প
২০১৯ সালে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ দাবি করেন পেন্টাগন এঁটেল পোকাসহ বিভিন্ন কীটের মাধ্যমে জীবাণু অস্ত্র তৈরির প্রকল্প চালিয়েছে৷ এই গবেষণা চলেছে ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে৷ স্মিথ সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বইও লিখেছেন৷
ছবি: zecken.de
কোভিড-১৯ কৃত্রিমভাবে ছড়ানো
ডিজিটাল যুগে যেকোন ভুল তথ্য আগের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়৷ বিভিন্ন রোগের কারণ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের গোপন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির কথা বারবার সামনে আসে৷ একইভাবে এবার ষড়যন্ত্র তত্ত্বপ্রেমীদের দাবি নভেল করোনা ভাইরাস চীনের কোন গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে৷ সেখান থেকেই তা পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে৷ কেউ কেউ দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রই জীবাণুটি তৈরি করে চীনে পাঠিয়েছে৷ যদিও এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই৷