করোনায় ভারতে সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ এই সময়ে দেশটির স্বাস্থ্যখাতের দুর্দশা সমালোচিত হয়েছে৷ পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে৷
বিজ্ঞাপন
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির ২.৫ শতাংশ জনস্বাস্থ্যে ব্যয় করতে চায় সরকার৷ চলতি অর্থবছরে দেশটি ব্যয় করছে মাত্র ১.২ শতাংশ৷
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৭৭ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে অনেকগুলো নতুন হাসপাতাল নির্মাণের অঙ্গীকার করা হয়েছে৷ এই সময়ে বর্তমান হাসপাতালগুলোরও মানোন্নয়ন করা হবে৷
করোনা শুরুর পর সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার ইতিমধ্যে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর জন্য অর্থ সরবরাহ করেছে৷ লক্ষ্য, পুরো দেশের প্রায় সাড়ে সাতশ জেলায় অন্তত একটি করে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা৷ ইতিমধ্যে গত কয়েক মাসে প্রায় চার হাজার প্ল্যান্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে৷
হাসপাতালের ভাগ্য পরিবর্তন
গতবছর ভারতে যখন করোনার প্রথম ঢেউ শুরু হয়েছিল তখন বিহারের ভাগলপুরের জওহরলাল নেহেরু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী দেখার সময় ডাক্তারদের সঙ্গে নিরাপত্তা প্রহরী থাকতেন৷ পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে রোগীদের আত্মীয়স্বজনেরা যেন ডাক্তারদের উপর হামলা না করে সেটা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
এখন সেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে৷ করোনা শুরুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে টাকা পেয়েছেন৷ সেটা দিয়ে নিজস্ব অক্সিজেন জেনারেটর বসানো হয়েছে, নতুন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে, আইসিইউ বেডের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং কয়েকশ বেডে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে৷
চিকিৎসা পর্যটনে ভারতের সেরা হাসপাতালগুলো
প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি কেবল চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখানকার চিকিৎসা পর্যটনে সেরা কয়েকটি হাসপাতালের কথা জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
ভারতে মেডিক্যাল ভিসা
প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি কেবল চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ২০১৯ সালে মেডিক্যাল ভিসায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিলেন দুই লাখ ২৫ হাজার ৬৬৮ জন।
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
কলকাতায় ভিড় নেই
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রোগী কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসেন। এছাড়া আসেন বিপুল পরিমাণ আফগান রোগী। যে কারণে চিকিৎসা পর্যটনে কলকাতা দেশের মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ ভারতেও বহু রোগী চিকিৎসা করাতে যান।
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
চিকিৎসা পর্যটনের তালিকা
ভারতে বেশ কিছু সংস্থা চিকিৎসা পর্যটনের ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন হাসপাতাল চেইনের সঙ্গে তাদের টাই আপ করা থাকে। তারই ভিত্তিতে বিদেশি রোগীদের কোন হাসপাতালে যাওয়া উচিত, তার পরামর্শ দেয় তারা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.Nath
এক নম্বরে অ্যাপোলো
কলকাতায় সবচেয়ে বেশি বিদেশি রোগী, বিশেষ করে বাংলাদেশের রোগী আসেন অ্যাপোলো হাসপাতালে। মাসে প্রায় ছয় হাজার রোগী গড়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা করান।
ছবি: DW/P. Samanta
এএমআরআই হাসপাতাল
অ্যাপোলোর পরেই রয়েছে এএমআরআই হাসপাতাল। সাধারণত এই হাসপাতালেও মাসে গড়ে পাঁচ হাজার বাংলাদেশের রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। এএমআরআই হাসপাতালের একাধিক ব্রাঞ্চ আছে। সল্টলেকের ব্রাঞ্চে বিদেশি রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে এই মুহূর্তে কার্যত কোনও বিদেশি রোগী নেই এই হাসপাতালগুলিতে।
ছবি: DW/P.Samanta
রবীন্দ্রনাথ টেগোর হাসপাতাল
হার্টের চিকিৎসার জন্য বহু রোগী বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবী শেঠির তৈরি রবীন্দ্রনাথ টেগোর হাসপাতালে যান। এছাড়াও ফোর্টিস, মেডিকা, রুবি জেনারেল হাসপাতালেও বহু বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসেন।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
দ্বিতীয় সারির হাসপাতাল
অ্যাপোলো বা এএমআরআই হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ যাঁরা সামলাতে পারেন না, তাঁদের জন্য রয়েছে দ্বিতীয় সারির হাসপাতাল। ভিআইপি রোড এবং বাইপাসের ধারে এমন আরও অসংখ্য হাসপাতাল রয়েছে। রয়েছে চোখের হাসপাতালও। অপেক্ষাকৃত কম খরচে এই হাসপাতালগুলিতে বহু মধ্যবিত্ত বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসেন।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
ক্যান্সার চিকিৎসা
ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অবশ্য সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুম্বইয়ে যান, টাটার ক্যান্সার হাসপাতালে। তবে কলকাতাতেও টাটা ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি করেছে। এখন সেখানেও বহু বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসছেন।
ছবি: Murali Krishnan
ভেলোর এখনও প্রথম
যাদের হাতে অর্থ বেশি, তাঁরা এখনও দক্ষিণ ভারতের ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পছন্দ করেন। দক্ষিণ ভারতের ভেলোর অত্যন্ত নামকরা চিকিৎসা কেন্দ্র। বহু মানুষ মাসের পর মাস থেকে সেখানে চিকিৎসা করান। বিশেষ করে ক্রনিক অসুখের চিকিৎসায় ভেলোর এক নম্বরে।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Vatsyayana
দক্ষিণের অ্যাপোলো, মিঅট
দক্ষিণ ভারতেও অ্যাপোলো হাসপাতালের চেইন রয়েছে। চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে বহু বিদেশি চিকিৎসার জন্য যান। দিল্লির অ্যাপলো হাসপাতালেও প্রচুর বিদেশি রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। এ ছাড়াও দক্ষিণ ভারতে রয়েছে মিঅট হাসপাতাল চেইন।
ছবি: Adnan Abidi/Reuters
নেত্রালয়ে চোখ
চোখের চিকিৎসার জন্য কয়েক দশক ধরে এক নম্বর দক্ষিণ ভারতের নেত্রালয়। তবে গত কয়েক বছরে কলকাতাতেও বেশ কিছু ভালো চোখের হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। দিশা, প্রিয়ম্বদা বিড়লা এর মধ্যে অন্যতম। নেত্রালয়ের ব্রাঞ্চ তৈরি হয়েছে কলকাতায়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Anand
সরকারি হাসপাতাল
বিদেশি রোগীরা ভারতের সরকারি হাসপাতালে খুব বেশি যান না। তবে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সে (এইমস) কিছু কিছু বিদেশি রোগী দেখা যায়। অন্য হাসপাতাল থেকে রেফার করলে তবেই তারা এইমসে আসেন।
সরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা পর্যটনে নেই
চিকিৎসা পর্যটনের সঙ্গে বিশাল অঙ্কের ব্যবসা জড়িত। ফলে বিদেশি রোগীদের ভারতের সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় না। বস্তুত, ভারতের সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেড পাওয়াও খুব কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, এখনও দেশের সরকারি হাসপাতালগুলি যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
ছবি: picture-alliance/dpa
13 ছবি1 | 13
হাসপাতালের মেডিকেল তত্ত্বাবধায়ক অসীম কমুার দাস রয়টার্সকে বলেন, ‘‘করোনা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে৷ যদিও এটা মানবজাতিকে ধ্বংস করেছে, অনেকের অনেক ক্ষতি করেছে, এটা আমাদের হাসপাতালের অবকাঠামোতে অনেক পরিবর্তন এনেছে৷''
আগামী বছরের মধ্যে চার হাজার তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১,৬০০ নতুন হাসপাতাল নির্মাণের অঙ্গীকার করেছে বিহার সরকার৷
তবে এসব হাসপাতাল পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ পাবলিক হেল্থ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কার্ডিওলজিস্ট ও এপিডেমিওলজিস্ট কে. শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, ‘‘শুরুটা ভালো হয়েছে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু জনবল ছাড়া শুধু অবকাঠামো দিয়ে হবে না৷ সুতরাং এই বিষয়টিও যত শিগগির সম্ভব ভেবে দেখতে হবে৷''
ভাগলপুরের জওহরলাল নেহেরু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ৬০টি আইসিইউ বেড আছে৷ কিন্তু রয়টার্সের প্রতিবেদক সম্প্রতি সেখানে গিয়ে কয়েকটি রুম বন্ধ বা খালি দেখতে পান৷ ঐ বিভাগের ডাক্তার-ইন-চার্জ মহেশ কুমার বলেন, ‘‘আমাদের জনবলের অভাব আছে৷ আমরা যদি প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও প্যারমেডিকস পাই তাহলে সহজেই সব আইসিইউ রুম চালু রাখতে পারব৷''
গতমাসে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে একসঙ্গে নয়টি মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সেখানে তিনি বলেন, আগামী ১০-১২ বছরে ভারতে এত ডাক্তার তৈরি হবে, যা স্বাধীনতার প্রথম ৭০ বছরের চেয়ে বেশি৷