1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা মহামারি: যৌনকর্মীদের জন্য অভিশাপ না আশীর্বাদ!

৬ আগস্ট ২০২১

করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন৷ উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন যৌনকর্মীরাও৷ যৌনপল্লিগুলো থেকে বের হয়ে অনেকেই ভাসমান যৌনকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন৷

‘‘সরকারের উচিত যারা যৌন পেশা থেকে বেরিয়ে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের অবিলম্বে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া৷’’
‘‘সরকারের উচিত যারা যৌন পেশা থেকে বেরিয়ে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের অবিলম্বে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া৷’’ছবি: Getty Images/AFP/Munir uz ZAMAN

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কলি আর তার ভাই ফুল বিক্রি করতো৷ ওদের মা একটা চায়ের দোকানে বাসন মাজার কাজ করতেন৷ ওদের বাবা কে জানা নেই৷ শুনেছিলাম কলির মা যৌনকর্মী৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে চাকরিতে ঢোকার পর একবার ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি ১২/১৩ বছরের কলির কোলে ছয় মাসের একটি বাচ্চা৷ জিজ্ঞেস করতে ওর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়৷ পরে চায়ের দোকানের বিল্লালকে জিজ্ঞেস করে জানা যায় কলির সন্তান৷ ওখানেই শুনলাম মায়ের মত জীবন যাতে বেছে নিতে না হয় তাই কলির বিয়ে দিয়েছেন তার মা৷

এই একটা ঘটনা আমার মনে যৌনকর্মীদের নিয়ে পূর্ব সব ধারণা পাল্টে দিয়েছিল৷ জানি, কলির মা এত ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ঠিক করেননি৷ কিন্তু একটা ঝুপড়ির মধ্যে তার ব্যবসা আর এই মেয়েকে নিয়ে কীভাবে থাকতেন! সেই থেকে একটা বিষয় আমার কাছে পরিষ্কার-প্রয়োজন না হলে কোন নারী যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে বেছে নেন না৷

হয়ত পরিবারে উপার্জনের কেউ নেই, কোথাও কাজ না পেয়ে এই পথ বেছে নিয়েছেন৷ আর অনেকের ক্ষেত্রে তো জোর করে এই পেশায় নিয়ে আসার ঘটনা কম নয়৷ দালালের খপ্পরে পড়ে এই পেশায় আসতে বাধ্য হন অনেকে৷ অনেকে এই পেশা থেকে বেরিয়ে সমাজে ঠাঁই না পেয়ে আবারো ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন যৌনপল্লীতে৷

করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, দিনমজুর, গৃহকর্মীদের উপার্জন নেই৷ কিন্তু যৌনকর্মীদের অবস্থা কি? করোনা এমন এক রোগ, যা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে এই পেশায়৷ স্বাভাবিক সময়ে অনেকে নিজের জন্য সঞ্চয় রেখে বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারতেন বলে বিভিন্ন এনজিওকে জানিয়েছেন৷ কিন্তু করোনাকালে খদ্দের একেবারে কমে যাওয়ায় নিজেরাই এখন না খেয়ে থাকেন৷

অনেকে বাসা ভাড়া না দিতে পেরে যৌনপল্লি ছেড়ে দিচ্ছেন৷ কিন্তু যারা এই কাজে এতদিন থেকেছেন করোনার এই সময়ে কি কাজ করবেন তারা! তাই তাদের কেউ কেউ হয়েছেন ভাসমান যৌনকর্মী৷

অথচ এই যৌনকর্মীদের মধ্যে যারা আগে এই পেশা থেকে বের হওয়ার জন্য বার বার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, সর্দারনী আর দালাল তাদের ফিরিয়ে এনেছে৷ অন্য সময় এই বেরিয়ে আসাটা এত সহজ ছিলো না৷

তাই করোনা হয়ত তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে৷ বাংলা ট্রিবিউনের গত বছরের ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, পুলিশের সহায়তায় যৌনপল্লি থেকে বেরিয়ে কয়েকজন যৌনকর্মী পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন৷

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল এইডস অ্যান্ড এসটিডি কর্মসূচির আওতায় ২০১৫ সালে এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে নারী যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ২৬০৷ এর পাশাপাশি আছেন লক্ষাধিক পুরুষ ও ট্রান্সজেন্ডার যৌনকর্মী৷ দেশের যৌনপল্লিগুলোতে যৌনকর্মীর সংখ্যা চার হাজারের মতো৷ আর বাকিরা বাইরের যৌনকর্মী৷ তারা ভাসমান বা হোটেল ও বাসাবাড়িতে কাজ করেন৷

দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি দৌলতদিয়ায়৷  এখানে স্বাভাবিক সময় প্রায় দেড় হাজার যৌনকর্মী থাকেন৷ বর্তমানে এক হাজার ৫০ জনের মতো যৌনকর্মী রয়েছেন৷

অমৃতা পারভেজ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

লকডাউনের সময় দেশের ১১ যৌনপল্লির বাসিন্দাদের সরকারি সহযোগিতা দেওয়া হয়েছিল৷ তবে তা ছিল খুবই অপ্রতুল৷

এদিকে, করোনাকালে কাজ হারিয়ে নিম্ন আয়ের নারীদের কেউ কেউ যৌন পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ এ অবস্থা কেবল ঢাকা না, পুরো দেশে৷ আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় খদ্দেররা সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার না করতে চাইলে তাতেও বাধ্য হচ্ছেন যৌনকর্মীরা৷ আর এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে৷

অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং অধিকার নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংগঠন লাইট হাউস৷ প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের জুন মাসে দেশের ২৫টি জেলায় নারী যৌনকর্মী ও ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে৷ সেখানে দেখা যায়, তাঁদের কাজ ৭৭ শতাংশ কমে গেছে৷ নারী যৌনকর্মীদের আয় কমে গেছে ৭৩ শতাংশ৷

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ছোট আকারে ৪০০ যৌনকর্মীর ওপর ফলোআপ জরিপ করে লাইট হাউস৷ সেখানে দেখা যায়, দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর ১৬ শতাংশ নারী যৌনকর্মী একেবারে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন৷ এর আগে পাঁচ শতাংশ যৌনকর্মীর মাসিক আয় এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে ছিল৷ দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ৫২ শতাংশ যৌনকর্মীর আয়ের অবস্থা এমনটা দাঁড়ায়

অন্যদিকে, ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে খুব কমই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত বা চাকরির সুযোগ পান৷ জীবনধারণের জন্য তাদের অধিকাংশের আয়ের অন্যতম উৎস দোকান এবং গণপরিবহন থেকে টাকা আদায়৷ কেউ কেউ আবার যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেন৷

লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় তাদের বর্তমানে আয় প্রায় শূন্য৷ তেমন কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের৷ সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকেও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য কোনো প্রণোদনা বা লকডাউনে বিশেষ কোনো সহযোগিতা না থাকার কথা জানা গেছে৷

তাই সরকারের উচিত অবিলম্বে যৌনকর্মী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা৷ পাশাপাশি যারা যৌন পেশা থেকে বেরিয়ে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ