করোনা মৃত্যুর জন্য ট্রাম্প দায়ী থাকবেন, কটাক্ষ বাইডেনের
১৭ নভেম্বর ২০২০
সোমবার ডনাল্ড ট্রাম্পকে এক হাত নিলেন অ্যামেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ট্রাম্প ক্ষমতা না ছাড়লে করোনা-মৃত্যু বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন।
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প ক্ষমতা না ছাড়লে অ্যামেরিকায় করোনা মৃত্যু আরো বাড়বে। সোমবার এ ভাবেই ডনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করলেন ভাবী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর বক্তব্য, ট্রাম্পের জন্য তাঁর করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের পরিকল্পনার রূপায়ণ সম্ভব হচ্ছে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অঙ্কের হিসেবে জিতেছেন তিনি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিযোগ জো বাইডেন ভোট কারচুপি করে জিতেছেন। ফলে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে চাইছেন না। সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। সরকারি ভাবে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলও ঘোষণা করা হয়নি। শুধু তাই নয়, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সরকারি অফিসাররা ধীরে ধীরে পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে কাজ বুঝিয়ে দেন। সরকারি খবরাখবর তাঁকে দেওয়া হয়। নতুন প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন পরিকল্পনা কী ভাবে রূপায়িত করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন অফিসররা। অ্যামেরিকায় এই সময়টিকে বলা হয় ট্রানজিশন ফেস। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সেই সময় চলার কথা। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করবেন।
টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে কে কত এগিয়ে
করোনা ভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অন্তত দশটি দেশে চলছে ১৭০টিরও বেশি প্রচেষ্টা৷ তবে এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়টি পৌঁছাতে পেরেছে পরীক্ষার শেষ ধাপে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
পৌনে দুইশ’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে ১৭০ টির বেশি উদ্যোগ৷ একেকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-পর্ব সারতেই সাধারণত বছরের পর বছর সময় লাগে৷ তবে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে তা ১২ থেকে ১৮ মাসে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Reuters/B. Guan
প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্ব
বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই এখনো প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে৷ এই ধাপে বিজ্ঞানীরা ভাইরাস বা তার কোনো একটি অংশ তৈরি করেন৷ সেটি অন্য প্রাণীদের উপর প্রয়োগ করে দেখেন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকঠাক সাড়া দিচ্ছে কিনা৷ ১৩৯ টি প্রচেষ্টা এখনো এই ধাপে আটকে আছে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
প্রথম ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রথম ধাপে সীমিত সংখ্যক মানুষের মধ্যে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়৷ দেখা হয়, প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্বে পশুর দেহে যেভাবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, মানুষের শরীরেও তা একইভাবে কাজ করছে কিনা৷ বর্তমানে ২৫টি টিকা রয়েছে এই ধাপে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Gobet
দ্বিতীয় ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে আছে ১৫টি ভ্যাকসিন৷ সম্ভাব্য টিকাটি কতটা নিরাপদ আর তা কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, এই ধাপে মূলত সেটি দেখেন বিজ্ঞানীরা৷ এজন্য কয়েকশ’ মানুষের শরীরে টিকাটি পরীক্ষা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/University of Oxford
তৃতীয় ধাপ
তৃতীয় ধাপে ভ্যাকসিন পরীক্ষার আওতায় আসেন কয়েক হাজার মানুষ৷ কার্যকরীতা, শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকগুলোতে এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা মনযোগ দেন৷ এই ধাপটিতে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর মাত্র সাতটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পৌঁছাতে পেরেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pochard-Casabianca
অনুমোদন
পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন বাজারজাতের অনুমোদন দেয় দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ৷ গত জুনে ক্যানসিনো বায়োলোজিক্স এর ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে চীনের সামরিক বাহিনী৷ অন্যদিকে পরীক্ষায় সফল হয়েছে দাবি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান গামালিয়া ইন্সটিটিউটের ভ্যাকসিনের অনুমোদন করেছে রাশিয়া৷ যদিও তাদের এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতে নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
শেষ ছয়
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে পৌঁছানো সাতটি ভ্যাকসিনের তিনটি চীনের৷ এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে টিকা তৈরি করেছে সাইনোভেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ জুলাইতে আরব আমিরাতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু করেছে সাইনোফার্ম নামে দেশটির আরেকটি কোম্পানি৷ শেষ ধাপের এই দৌড়ে আরো আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিও৷
ছবি: Reuters/J. Akena
আলোচনায় অক্সফোর্ড
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু থেকে আলোচনায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷ ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে তারা৷ পৌঁছে গেছে তাদের উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষার শেষ ধাপে৷ দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্রাজিলে চলছে তার ট্রায়াল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Sibeko
8 ছবি1 | 8
ভোটে জিতেই বাইডেন এবং ভাবী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিলেন। কী ভাবে ভ্যাকসিন বন্টন হবে, তা নিয়েও নানা পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। কিন্তু সরকারি অফিসাররা এখনো তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। সরকারি ব্রিফিংও পাচ্ছেন না বাইডেন। কারণ, সরকারি ভাবে ফলাফল ঘোষণা হয়নি। ট্রাম্প অফিস ছাড়তে চাইছেন না। ফলে এক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
বাইডেনের অভিযোগ, ট্রাম্পের এই একগুঁয়েমির জন্য করোনা নিয়ে তাঁর সমস্ত পরিকল্পনা থমকে গিয়েছে। ভ্যাকসিন বন্টনের পরিকল্পনাও কার্যকরী করা যাচ্ছে না। এর ফলে আরো মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। যার দায় নিতে হবে ডনাল্ড ট্রাম্পকে।
ট্রাম্প অবশ্য রোববারেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ভোটের ফলাফল তিনি মেনে নিচ্ছেন না। এখনো রিগিং করে বাইডেন জিতেছেন বলে অভিযোগ করছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন। বাইডেনের অভিযোগ, এর ফলে তাঁর কাজ প্রায় দেড় মাস পিছিয়ে যাবে। করোনার এই ভয়াবহ সময়ে দেড় মাসে অনেক কাজ করা যেত, যা ট্রাম্পের জন্য সম্ভব হচ্ছে না।
সোমবার অবশ্য বাইডেন এবং হ্যারিস দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলির প্রধানদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে মার্কিন অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। আগামী দিনে আরো খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই অবস্থায় কী ভাবে সংস্থাগুলি কাজ করবে, কী ভাবে তাদের অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়া যায় এই বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।