করোনা-মৃত্যু নিয়ে ডাব্লিউএইচও-মোদী বিতর্ক
৬ মে ২০২২কোভিড ১৯-এ কতজন মারা গেছেন তা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টের অপেক্ষায় ছিল গোটা বিশ্ব। সেই রিপোর্ট অবশেষে এসেছে। আর তারপরই রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, বিভিন্ন দেশ কোরনায় মৃত্যুর যে তথ্য দিয়েছে, তার তুলনায় ওই রিপোর্টে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি।
২০২০-র জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যে বিজ্ঞানীরা এই কাজের দায়িত্বে ছিলেন তারা শুধু করোনার কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা ধরেননি, করোনা হওয়ার পর তার প্রভাবে আক্রান্তদের শরীরে অন্য রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও ধরেছেন। সেজন্যই সরকারি হিসাবের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বিপুল ফারাক দেখা যাচ্ছে। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দেশগুলি যে তথ্য দিয়েছিল, তার সঙ্গে স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেলিং যোগ করে এই সংখ্যা পাওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, এই তথ্য শুধু যে করোনার প্রভাবে বিশ্বে কী হয়েছে তা দেখিয়ে দিচ্ছে তাই নয়, সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাও জোরদার হওয়া দরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাড়তি মৃত্যুর ৮৪ শতাংশ এসেছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও অ্যামেরিকা থেকে। আর ৬৮ শতাংশ বাড়তি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ১০টি দেশে।
ভারতের পরিস্থিতি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ভারতে ওই সময়সীমায় করোনায় ৪৭ লাখ মানুষ মারা গেছেন। কিন্তু ভারত সরকারের তথ্য বলছে, ওই সময় করোনায় মৃত্যু হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার মানুষের। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট ও ভারতের সরকারি অবস্থানের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যায় বিশাল ফারাক দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সরকার যা বলছে, তার থেকে করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় দশগুণ বেশি।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই রিপোর্ট খারিজ করে দিয়ে বলেছে, ''এর সঙ্গে বাস্তব অবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। এই রিপোর্ট সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং বৈজ্ঞানিক দিক থেকেও তা প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য।''
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রক জানিয়েছে, ''যে মেথডলজি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রিপোর্ট তৈরি করেছে, তা ভুল। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেথড বা পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে করোনায় মৃত্যুর নানা ধরনের তথ্য দিয়েছে।'' তাদের দাবি, ''বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই বিষয়ে পুরো তথ্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই তথ্য উপেক্ষা করা হয়েছে। তারা যে সব সূত্র থেকে তথ্য নিয়েছে, যে পদ্ধতিতে মৃতের সংখ্যা গণনা করেছে, এবং তাদের গণনার ফল নিয়ে ভারত প্রশ্ন তুলেছে।''
রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনার সময় ওই রোগের কারণে যে মৃত্যু হয়েছে, তার সঙ্গে প্যানডেমিক না হলে যে মৃত্যু ঘটত না, সেই হিসাবও জোড়া হয়েছে। আগের কয়েকবছরের তথ্যও এজন্য বিচার করা হয়েছে।
কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের দাবি, ''ভারতে জন্ম ও মৃত্যু নথিভুক্ত করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। ফলে ভারতে সরকারি হিসাব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না।''
করোনার সময়ই মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ভারতে প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল। তখন বিভিন্ন রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল, কো-মর্বিটিডি বা করোনা হলেও অন্য গুরুতর রোগের কারণে যে মৃত্যু হয়েছে, তার হিসাব করোনায় মৃতদের মধ্যে ফেলা যাবে না।
জিএইচ/এসজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, পিটিআই, এএনআই)