কোনো নেতৃত্ৱ নেই, কোনো সহানুভূতি নেই- সংকট মোকাবিলায় ডনাল্ড ট্রাম্পের অদক্ষতার শিকার মার্কিনিরা হতে পারেন না৷ তারপরও মার্কিনিরা আবার ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারেন, মনে করেন ডিডাব্লিউর আলেকজান্দ্রা ফন নামেন৷
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প এখন প্রায় প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করছেন৷ করোনার সময়ে নিজের আত্মবিশ্বাস আর সিদ্ধান্ত নেয়ায় ক্ষমতা দেখানো এর উদ্দেশ্য়৷ কিন্তু যাঁরা প্রকৃত তথ্য় জানতে চান তাঁদের কাছে ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলন দেখা প্রায় অসহনীয়৷ কারণ সেখানে তিনি প্রায়ই অর্ধসত্য়, এমনকি একেবারে মিথ্য়া তথ্য় দিয়ে থাকেন৷ আর যে সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী প্রশ্ন করেন তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ ট্রাম্পের দেয়া তথ্য় পরস্পরবিরোধী এবং তাঁর ক্রাইসিস ম্য়ানেজমেন্ট অনেক মার্কিনির মৃত্য়ুর কারণ হতে পারে৷
গত জানুয়ারিতে তাঁর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা যখন প্রথম করোনা ভাইরাস নিয়ে তাঁকে সতর্ক করেছিলেন তখন ট্রাম্প বিষয়টিতে ততটা গুরুত্ব দেননি৷ এরপর যখন পর্যাপ্ত টেস্ট না করার কারণে বেশি করে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুরু করে তখন তিনি বলতে থাকেন যে, সব তাঁর নিয়ন্ত্রণে আছে৷ আর এখন তিনি নিজেকে 'যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা করেছেন, যিনি এক অদৃশ্য় শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছেন৷
নিউ ইয়র্কসহ দেশের অন্য়ান্য় রাজ্য়ে যখন করোনা সংক্রমণের সংখ্য়া বেড়ে চলেছে, হাসপাতাসগুলো যখন তাদের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে, তখন ট্রাম্প শিগগিরই আবার অর্থনীতিতে গতি আনতে চাইছেন৷ যখন নিউ ইয়র্কের ডাক্তাররা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন যখন ভেন্টিলেটরের অভাব থাকায় কোন রোগীকে বাঁচাবেন আর কাকে মরতে দিবেন, তখনও ট্রাম্প ইস্টারের সময় গির্জা পূর্ণ থাকবে বলে বলছিলেন৷
করোনা সংকটে পপুলিস্ট নেতারা কোণঠাসা
পপুলিজম বা জটিল সমস্যার চটজলদি সমাধান বাতলে দেবার প্রবণতা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু পপুলিস্ট নেতারা করোনা সংকটের সামনে অসহায় হয়ে পড়ছেন৷
ছবি: Imago Images/Media Punch/O. Contreras
ডনাল্ড ট্রাম্পের দুশ্চিন্তা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে সাফল্যের আশায় ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ প্রথমে করোনা সংকট লঘু করে দেখিয়ে চাপের মুখে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি৷তবে বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞদের অবজ্ঞা করে ইস্টারের আগেই পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ করে তুলতে চান ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
বরিস জনসনের উভয় সংকট
সবে ব্রেক্সিট কার্যকর করে জনপ্রিয়তা উপভোগ করছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ করোনা সংকট তাঁর ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে৷ প্রথমদিকে পরস্পরবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর অবস্থান নেবার পর জনসনও কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবকাঠামো পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে জনসনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/I. Vogler
নরেন্দ্র মোদীর বিড়ম্বনা
ভারতে করোনা সংকট এখনো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি৷ কিন্তু সমালোচকরা সরকারের অনেক ‘লোক দেখানো’ পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন৷ তাঁদের মতে, লকডাউন ঘোষণা ও জনমোহিনী ভাষণ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংক্রমণ কমাতে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব ভারতকে সংকটে ফেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
বেপরোয়া বোলসোনারো
অন্যান্য পপুলিস্ট বিশ্বনেতার মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো করোনা সংকট যতটা সম্ভব উপেক্ষা করে চলার চেষ্টা করছেন৷ তিনি বিষয়টিকে নিয়ে ‘অকারণ ত্রাস’ সৃষ্টির সমালোচনা করে থাকেন৷ এমনকি অবিলম্বে দেশে সব বাধানিষেধ তুলে নেবার ডাক দিচ্ছেন তিনি৷ বয়স্কদের ভিত্তিহীন আশ্বাস দিয়ে বলছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/A. Borges
সীমান্ত বন্ধ রাখতে চান ল্য পেন
ইউরোপের পপুলিস্ট নেতারা ভাঙলেও মচকাতে প্রস্তুত নন৷ ফ্রান্সের জাতীয় ফ্রন্ট নেত্রী মারিন ল্য পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের ‘সীমন্তহীনতার ধর্ম’-কে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন৷ তাঁর মতে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই সীমান্ত মানুষকে সুরক্ষা দেয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করার কোনো পরামর্শ যে দেয়নি, ল্য পেনের অনুগামীরা সেই খবর রাখেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
বিশেষজ্ঞদের পছন্দ নয়
ট্রাম্প, জনসন, বোলসোনারোর মতো নেতারা কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রাহ্য করতে চান না৷ বিশেষজ্ঞরাই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠুন, সেটাও তারা চান না৷ নিজেদের ভিত্তিহীন ধারণাকে জনমোহিনী মোড়কে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তাঁরা যথেষ্ট সফল হয়েছেন৷ ফলে করোনা সংকটের সময় সাধারণ মানুষের বিপদের আশঙ্কা আরো যাচ্ছে৷
ছবি: Imago Images/Media Punch/O. Contreras
6 ছবি1 | 6
এত কিছুর পরও অবশ্য় ট্রাম্পের জনসমর্থন বাড়ছে৷ কারণ কিছুদিনের মধ্য়ে অনেক মার্কিন নাগরিক সরকারের কাছ থেকে এক হাজার দুইশ' ডলারের চেক পাবেন৷ শোনা যাচ্ছে, এসব চেকে নিজের স্ৱাক্ষর চান ট্রাম্প৷ ভোটারদের মন পেতে এর চেয়ে ভালো প্রেসিডেন্টের কথা ভাবাই যায় না৷
করোনার প্রভাব কমাতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্টিমুলাস প্য়াকেজ ঘোষণা করা হয়েছে৷ কর্মীদের জন্য় অর্থ সহায়তা ছাড়াও ছোট ব্য়বসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেমন অ্য়াভিয়েশন খাতকে সহায়তা ও ঋণ দেয়া হবে৷
ট্রাম্প মনে করছেন নভেম্বরে নির্বাচনের ঠিক আগে যদি অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায় এবং বেকারের সংখ্য়া কমে তাহলে তাঁর প্রতি ভোটারদের সমর্থন থাকবে৷
যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সংকট মোকাবিলায় সফল হয় তাহলে নভেম্বরে ট্রাম্পের আবারও জয়ী হওয়ার ভালো সম্ভাবনা আছে৷