বৃহস্পতিবার জি-টোয়েন্টি ও ইইউ নেতারা পৃথক আলোচনায় করোনা সংকট ও তার অর্থনৈতিক পরিণাম নিয়ে আলোচনা করছেন৷ জাতিসংঘের মহাসচিব গোটা মানবজাতির ঐক্যের ডাক দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় এতদিন সব দেশ মোটামুটি ‘একলা চলো রে' নীতি অনুসরণ করে গেছে৷ এর মধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ লকডাউনের মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এবং একুশ হাজারের বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷ শুধু স্বাস্থ্য সংকটের কারণে নয়, সেই সংকটের জের ধরে বিশ্ব অর্থনীতির অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের ফলেও মানবজাতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ প্রবৃদ্ধির বদলে মন্দার কারণে চরম বেকারত্ব দেখা দিতে পারে৷ এককালীন স্টিমুলাস প্যাকেজ বা অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিয়ে সেই ক্ষতির মাত্রা কিছুটা সামলানো সম্ভব হলেও অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ধারাবাহিক উদ্যোগের প্রয়োজন হবে বলে তাঁরা মনে করছেন৷
এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়াতে এগিয়ে আসছেন বিশ্বনেতারা৷ বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের সভাপতিত্বে জি-টোয়েন্টি গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা অনলাইন আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সংকট নিয়ে আলোচনা করতে চলেছেন৷
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস গোটা বিশ্বের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সংকট মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাঁর মতে, প্রত্যেক দেশের একক প্রচেষ্টা এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়৷ করোনা ভাইরাস সংকটকে কেন্দ্র করে অ্যামেরিকা ও চীনের মধ্যে বর্তমান সংঘাতও কাম্য নয়৷ গুতেরেস বলেন, ‘‘কোভিড-১৯ গোটা মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাই মানবজাতিকেই এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে৷'' তিনি দরিদ্র মানুষের সহায়তার জন্য ২০০ কোটি ডলার সংগ্রহের আবেদন করেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও করোনা সংকটের জের ধরে সংকটের মোকাবিলা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ সংকট শেষ হলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে তাঁরা বৃহস্পতিবার আলোচনা করবেন৷ সেই ভিডিও কনফারেন্সে বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলা নিয়েও আলোচনা হবে৷ আপাতত বেশিরভাগ দেশের সীমান্ত বন্ধ রাখায় যে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, সে বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আাসার কথা৷ ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকটের মোকাবিলা করতে এরই মধ্যে একগুচ্ছ পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে৷ ইটালির মতো করোনায় বিপর্যস্ত দেশ জরুরি অবস্থায় বাড়তি ঋণের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ বেলজিয়াম, ফ্রান্স, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া ও স্পেনও সেই উদ্যোগে ইটালির সঙ্গে যোগ দিয়েছে৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
করোনার ফলে কোথায় কী হচ্ছে?
করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে অভূতপূর্ব সংকট সৃষ্টি করছে৷ ফলে মানুষের জীবনযাত্রাও বদলে যাচ্ছে৷ প্রকৃতিও অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন আচরণ করছে৷ এমনই কিছু দৃষ্টান্তের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
গোলাপের করুণ দশা
গোলাপফুল আবেগ ও বন্ধুত্বের প্রতীক৷ কিন্তু কেনিয়ার ‘ব্লিস ফ্লোরা’ ফার্মের সাদা গোলাপ বিক্রির আগেই জঞ্জালের স্তূপে চলে যেতে পারে৷ কারণ, করোনা সংকটের ফলে ইউরোপের বাজার ধসে পড়েছে৷ সেখানে ফুল পাঠানোর কাজও অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷ শুধু এই একটি ফার্ম থেকেই প্রতিদিন প্রায় এক লাখ বিশ হাজার ফুল রপ্তানি করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Meinhardt
অতিথি ছাড়াই বিয়ে
আগামী কয়েক সপ্তাহে যারা বিয়ের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিলেন, দুঃখজনক হলেও তারা বড় আকারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন না৷ জার্মানির এক হবু দম্পতিও হাল ছেড়ে দিয়ে সপ্তাহান্তে রেজিস্ট্রি সেরে নিয়েছেন৷ সঙ্গে কেউই ছিল না বললেই চলে৷ কারণ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রকাশ্যে দুইয়ের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Arnold
উৎসব ছাড়াই নববর্ষ
ইরানে ‘নওরোজ’ বা পারস্যদেশীয় নববর্ষ উপলক্ষ্যে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব মিলিত হন৷ বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানাতে রাজপথেও উৎসব পালিত হয়৷ কিন্তু করোনা সংকটের কারণে দেশের অনেক মানুষ বাসার মধ্যে পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গেই নববর্ষ উৎসব পালন করছেন৷ কেউ একজন তেহরানের মেলাত পার্কে বসন্তের ছবি তুলেছেন৷
ছবি: Reuters
বসন্তের ফুল
জার্মানিতে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে৷ দেশের প্রায় সব প্রান্তেই চেরি ফুল বসন্তের বার্তা বয়ে আনছে৷ যেমন এই বাগানে গোলাপি ও সাদা রং ছেয়ে গেছে৷ সেখানে গেলে জাপানের এই ফুলের সুগন্ধও উপভোগ করা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
বাসায় থাকুন!
জার্মানিতে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন আপাতত বন্ধ রয়েছে৷ সীমান্তও কার্যত বন্ধ৷ করোনা ভাইরাসের কারণে নাগরিকদের বাধ্য হয়ে অনেক বাধানিষেধ মেনে চলতে হচ্ছে৷ সংক্রমণের গতি কমাতে সরকার, প্রশাসন ও বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে যতটা সম্ভব বাসায় থাকার আবেদন জানাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
করোনার বিরুদ্ধে সংগীত
ইটালির এই নারী বাসনের ঢাকনা নিয়ে পাড়ার বারান্দা কনসার্টে অংশ নিয়েছেন৷ গোটা দেশে এভাবে মানুষ বারান্দা বা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভয়ভীতি, একাকীত্ব ও একঘেয়েমি কাটানোর চেষ্টা করছেন৷ দৈনন্দিন কেনাকাটার মতো অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হবার উপায় নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
করোনা সত্ত্বেও রং খেলা
ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে হোলি উৎসব পালিত হয়েছে৷ এভাবে অশুভ শক্তির বিনাশের মাধ্যমে বসন্তের সূচনাকেও স্বাগত জানানো হয়৷ তবে এ বছর করোনা ভাইরাসকে ঘিরে আতঙ্কের কারণে অনেকেই রং নিয়ে খেলেন নি৷ তবে বিচ্ছিন্নভাবে অবশ্যই রংয়ের উৎসবে মেতে উঠেছে৷
প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী চীনের উহান শহরে অস্থায়ী হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পদ অনুযায়ী ভিন্ন রংয়ের ইউনিফর্ম পরে কাজ করছেন৷ আপাতত চীনের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, বিপদ এখনো পুরোপুরি কেটে যায়নি৷