বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে করোনার মহামারী মোকাবেলায় সহায়তার জন্য পশুচিকিৎসকেরাও এগিয়ে এসেছে৷ ফ্রান্সে ১৮,০০০ পশুচিকিৎসকদের মধ্যে পাঁচ হাজার চিকিত্সক স্বেচ্ছায় কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
ফরাসি ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্রুনো টেশিয়ার বলেন, " আমরা এতদিন কেবল উপকরণ সরবরাহ করেছি, এখনও রোগীদের সেবায় সক্রিয়ভাবে জড়িত হইনি।" করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সাহায্য করতে বা তাদের কাজের বোঝা কিছুটা কমাতেই পশুচিকিৎসকদের এই উদ্যোগ৷
জার্মানিতে নার্স: হাততালি বেশি, বেতন কম
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন বলে বিভিন্ন দেশের মতো জার্মানির নার্সরাও এখন হাততালি পাচ্ছেন৷ কিন্তু কয়েক বছর ধরে বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসা এই স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করেন তাদের জন্য শুধু হাততালি যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Filip Romanovskij
কাজের চাপ
জার্মানির হাসপাতাগুলোতে আগে থেকেই নার্সের সংকট আছে। এই সংকট সামাল দিতে যারা আছেন তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়, অথচ সে অনুযায়ী অর্থ পান না। ফলে বাড়তি চাপ সামলাতে না পেরে অনেকে চাকরি ছাড়েন। ২৭ বছরের জ্যান একই কারণে ছয়মাস আগে চাকরি ছেড়েছিলেন।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা
করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের বলা হচ্ছে ‘সৈনিক’। সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ইয়ানের মত অনেক সাবেক নার্স আবার হাসপাতালে কাজ শুরু করেছেন। ২০১৮ সালে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, জার্মানিতে ৪০ হাজার নার্সের সংকট রয়েছে। বাস্তব চিত্র আরো খারাপ বলে ধারণা করা হয়। এতদিন এ বিষয়ে জনগণের আগ্রহ ছিল না।
ছবি: Filip Romanovskij
সংকট সবখানে
বার্লিনে একটি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স বলেন, “আমি সম্মানিত, কিন্তু হাততালি কোনো কাজে আসবে না। শুধু নার্স নয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, থেরাপিস্ট এবং অন্যান্য যারা এই প্রক্রিয়ার অংশ, তাদের সব জায়গায় সংকট রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এতদিনে সবাই বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।’’
ছবি: Reuters/W. Rattay
‘হাততালি বাড়ি ভাড়া জোগাবে না’
হামবুর্গের একটি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স বলেন, ‘‘লোকজন আমাদের জন্য হাততালি দিচ্ছে, এটা সত্যি দারুণ। কিন্তু এটা আমাদের বাড়ি ভাড়া দেবে না।’’ তিনি মনে করেন,
“মানুষের প্রশংসা এবং স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটা আরো বেশি দরকার ছিল যখন আমরা ভালো বেতন ও কর্মপরিবেশের জন্য লড়াই করছিলাম।’’
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
প্রটেক্টিভ গিয়ারের সংকট
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছে সুরক্ষা পোশাক ও অন্যান্য জিনিসের অভাব। উন্নত দেশগুলোতেও এই সংকট চোখে পড়ার মতো। এর ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। জার্মানিতে প্রায় ২,৩০০ হাসপাতালকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rietschel
আস্থাহীনতা
নার্স সংকটের কারণে যারা এ পেশায় আছেন তাদের উপর কাজের চাপ অনেক বেশি। জার্মানির নার্সিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ইয়োহানা ক্নুপেল বলেন, ‘‘কাজের অতিরিক্ত চাপের কারণে শিক্ষানবীশ নার্সদের অনেকে প্রথম বছরেই চাকরি ছেড়ে দেন।’’
ছবি: Imago-Images/7aktuell
অবস্থার উন্নতির আশা
জার্মানিতে নার্সদের সংগঠনগুলো আশা করছে, করোনা সংকটে তাদের প্রকৃত অবস্থা সবার সামনে চলে এসেছে। ভালো বেতন ও কর্ম পরিবেশের জন্য তাদের আন্দোলন এ থেকে লাভবান হবে। জার্মানিতে নার্সরা সাধারণত ঘণ্টায় ১৫ ইউরো বেতন পান।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Heimken
7 ছবি1 | 7
পশুচিকিৎসকদের অবশ্য সিরিয়াস করোনা রোগীদের সাহায্য করতে দেওয়া হবেনা, কারণ এর জন্য তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন নেই, বলেন টেশিয়ার।
সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় পশুচিকিৎসকদের অক্সিজেন নেওয়ার যন্ত্রও ব্যবহার করা যাবে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে সুইস ভেটেরিনারি সোসাইটির সভাপতি অলিভিয়ার গ্লার্ডন বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগিদের পশুচিকিৎসকেরা সাহায্য করতে প্রস্তুত কিনা জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, এতে হয়তো সমস্যা দেখা দিতে পারে, কারণ পশু চিকিৎসকেরা তাদের চেম্বার বন্ধ রাখতে পারে না, সেজন্য ছাত্রদের কাজে লাগানোর কথা এখন থেকেই ভাবা উচিত৷
তবে চেক প্রজাতন্ত্রের জিহলাভা শহরে ইতোমধ্যেই পশুচিকিৎসকেরা করোনা ভাইরাস টেস্ট করার কাজটি করছেন৷ এতে চিকিৎসকদের কাজের সুবিধা হচ্ছে বলে জানান চেক প্রজাতন্ত্রের কৃষিমন্ত্রী মিরোস্লাভ টোমান৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্যান্য অঞ্চলও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারে৷