বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় যেসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন, তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
তারা ছাড়াও এই বিপদের সময়ে সাধারণ মানুষের সেবায় মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করে চলা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীর জন্য বিশেষ বিমার ব্যবস্থা করার ঘোষণাও দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু ধন্যবাদ নয়, আমি তাদের উৎসাহিত করতে চাই। তাদের পুরস্কৃত করতে চাই।’’
‘‘এছাড়া, করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে মানুষের সেবা করতে গিয়ে যদি কেউ আক্রান্ত হন তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ভার সরকার নেবে। এজন্য পদমর্যাদা অনুযায়ী পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমা করে দেওয়া হবে। এ কাজে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে, তাই যদি কেউ মারা যান তবে এই বিমা পাঁচ গুণ করা হবে।’’
সংক্রমণের শুরু থেকে মানুষকে সেবা দিয়ে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে লড়াই করে যাওয়া সব সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর তালিকা করার নির্দেশ দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এসব ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে যা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
যারা বাঁচিয়ে রাখছেন তাদের ধন্যবাদ
তারা না থাকলে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতো অনেক বেশি মানুষ৷ করোনার কারণে ঘরবন্দি জীবনও হয়ে যেতো অচল৷ সারা বিশ্ব ধন্যবাদ জানাচ্ছে তাদের৷ দেখুন ছবি ঘরে...
ছবি: Reuters/H. McKay
ভবনজুড়ে ধন্য ধন্য
ব্রাজিলের সাও পাওলোর একটি ভবন৷ ভবনজুড়ে লেখা, সংহতি, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, ঐক্য এবং স্নেহ৷ এসবই দেশের সব নার্স, ডাক্তার এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য লেখা৷
খুব বড় অক্ষরে ধন্যবাদও জানানো হয়েছে তাদের
ছবি: Reuters/A. Perobelli
চিকিৎসাকর্মীদের ধন্যবাদ
করোন ভাইরাসের কবলে যুক্তরাষ্ট্রও বিপর্যস্ত৷ নিউ ইয়র্কের এক হাসপাতালে সংক্রমিতদের বাঁচানোর জন্য দিনরাত কাজ করছেন ডাক্তার-নার্সরা৷ বিশাল অক্ষরে তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন এক নিউইয়র্কবাসী৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
কৃতজ্ঞ পাব
কদিন আগেও নিউইয়র্কের উইন্টার বিয়ার নামের পাবটির বাইরে লেখা থাকতো মেনু, খোলার সময় আর বন্ধের সময়৷ এখন সেই বোর্ড জুড়ে শুধু ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মীদের ধন্যবাদ জানানোর বার্তা৷
ছবি: Reuters/A. Couldridge
'গুরুত্বপূর্ণ' কর্মীদের ধন্যবাদ
সমাজে ডাক্তার-নার্সদের গুরুত্ব কে না বোঝে৷ তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মুদি বা ঔষধের দোকানদার, কিংবা নিরাপত্তাকর্মীদের গুরুত্বের কথা স্বাভাবিক সময়ে ক''জনইবা মনে রাখে৷ করোনা সংকটের সময় তাদের গুরুত্ব খুব উপলব্ধি করছে সবাই৷ বৃটেনের ম্যানচেস্টার শহরের এক রাস্তায় তাদের ধন্যবাদ জানানো ব্যানার৷
ছবি: Reuters/P. Noble
নীল 'লন্ডন আই'
বৃটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মীদের প্রতি সমর্থন ও কৃতজ্ঞতা জানাতে নীল রঙে সেজেছে লন্ডন আই৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কিশোরীর কৃতজ্ঞতা
বৃটেনের হাই উইকম্ব শহরের এক দেয়ালে লিখেকরোনার বিরুদ্ধে যারা সামনে থেকে লড়ছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছে এক কিশোরী৷
ছবি: Reuters/E. Keogh
মুম্বাইয়ের ধন্যবাদ
হাততালি দিয়ে, থালাবাসন বাজিয়ে আর পতাকা নেড়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইরত অগ্রসৈনিকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে ভারতের মুম্বাইয়ের এক ভবনের মানুষ৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
যারা যত্ন নাও...
প্যারিসের এক বাড়ির ব্যালকনিতে সাদা কাপড়ে লেখা, ‘‘যারা আমাদের যত্ন নাও, তাদের অনেক ধন্যবাদ’’
ছবি: Reuters/B. Tessier
'তোমাদের জন্য হাততালি'
তখন সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জুরিখ হাততালি দিয়ে করোনা-সংকটের সময়ও যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে৷ এক নারীও যোগ দিলেন তাতে৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
খেলার মাঠেও...
ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামেও এখন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে ধন্যবাদ জানানোর বার্তা৷
ছবি: Reuters/M. Childs
10 ছবি1 | 10
কনফারেন্সের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের উপর করোনা ভাইরাসের বড় ধাক্কা আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সংকট মোকাবেলায় সামাজিক সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তার আওতার বাইরে থাকা নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য ওএমএস'র চালের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন তিনি।
বলেন, ‘‘যারা আমাদের কোনো ভাতা পান না বা যাদের কাছে রেশন কার্ড নেই। যারা নিজেরা কাজ করে খেতেন, কিন্তু এখন উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা অনুদান চাইতে পারছেন না বা নেবেন না। তাদের যেন সন্তানদের নিয়ে কষ্ট করতে না হয়। তাদের খুঁজে বের করে তালিকা করে রেশন কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরের চালের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।’’
এই দুঃসময়ের সুযোগ যদি কেউ নেয় এবং মানুষকে ঠকিয়ে ধনী হতে চায় তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
করোনা ভাইরাস মারাত্মক সংক্রামক হওয়া এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় অন্যান্য রোগ নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা না পাওয়ার অনেক অভিযোগ আসছে। কয়েকজন মারাও গেছেন।
শেখ হাসিনা এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘‘যারা নিজেদের রক্ষা করার জন্য পালিয়েছেন, রোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা পায়নি, অন্য সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা পায়নি। যাদের মধ্যে মানবতা বোধটুকু নেই তেমন চিকিৎসকদের বাংলাদেশের দরকার নেই। তারা ভবিষ্যতে চিকিৎসা দিতে পারবেন কিনা সেটাই তাদের চিন্তা করা উচিত।’’
এসএনএল/কেএম
জার্মানিতে নার্স: হাততালি বেশি, বেতন কম
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন বলে বিভিন্ন দেশের মতো জার্মানির নার্সরাও এখন হাততালি পাচ্ছেন৷ কিন্তু কয়েক বছর ধরে বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসা এই স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করেন তাদের জন্য শুধু হাততালি যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Filip Romanovskij
কাজের চাপ
জার্মানির হাসপাতাগুলোতে আগে থেকেই নার্সের সংকট আছে। এই সংকট সামাল দিতে যারা আছেন তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়, অথচ সে অনুযায়ী অর্থ পান না। ফলে বাড়তি চাপ সামলাতে না পেরে অনেকে চাকরি ছাড়েন। ২৭ বছরের জ্যান একই কারণে ছয়মাস আগে চাকরি ছেড়েছিলেন।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা
করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের বলা হচ্ছে ‘সৈনিক’। সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ইয়ানের মত অনেক সাবেক নার্স আবার হাসপাতালে কাজ শুরু করেছেন। ২০১৮ সালে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, জার্মানিতে ৪০ হাজার নার্সের সংকট রয়েছে। বাস্তব চিত্র আরো খারাপ বলে ধারণা করা হয়। এতদিন এ বিষয়ে জনগণের আগ্রহ ছিল না।
ছবি: Filip Romanovskij
সংকট সবখানে
বার্লিনে একটি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স বলেন, “আমি সম্মানিত, কিন্তু হাততালি কোনো কাজে আসবে না। শুধু নার্স নয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, থেরাপিস্ট এবং অন্যান্য যারা এই প্রক্রিয়ার অংশ, তাদের সব জায়গায় সংকট রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এতদিনে সবাই বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।’’
ছবি: Reuters/W. Rattay
‘হাততালি বাড়ি ভাড়া জোগাবে না’
হামবুর্গের একটি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স বলেন, ‘‘লোকজন আমাদের জন্য হাততালি দিচ্ছে, এটা সত্যি দারুণ। কিন্তু এটা আমাদের বাড়ি ভাড়া দেবে না।’’ তিনি মনে করেন,
“মানুষের প্রশংসা এবং স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটা আরো বেশি দরকার ছিল যখন আমরা ভালো বেতন ও কর্মপরিবেশের জন্য লড়াই করছিলাম।’’
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
প্রটেক্টিভ গিয়ারের সংকট
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছে সুরক্ষা পোশাক ও অন্যান্য জিনিসের অভাব। উন্নত দেশগুলোতেও এই সংকট চোখে পড়ার মতো। এর ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। জার্মানিতে প্রায় ২,৩০০ হাসপাতালকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rietschel
আস্থাহীনতা
নার্স সংকটের কারণে যারা এ পেশায় আছেন তাদের উপর কাজের চাপ অনেক বেশি। জার্মানির নার্সিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ইয়োহানা ক্নুপেল বলেন, ‘‘কাজের অতিরিক্ত চাপের কারণে শিক্ষানবীশ নার্সদের অনেকে প্রথম বছরেই চাকরি ছেড়ে দেন।’’
ছবি: Imago-Images/7aktuell
অবস্থার উন্নতির আশা
জার্মানিতে নার্সদের সংগঠনগুলো আশা করছে, করোনা সংকটে তাদের প্রকৃত অবস্থা সবার সামনে চলে এসেছে। ভালো বেতন ও কর্ম পরিবেশের জন্য তাদের আন্দোলন এ থেকে লাভবান হবে। জার্মানিতে নার্সরা সাধারণত ঘণ্টায় ১৫ ইউরো বেতন পান।