করোনা রুখতে কি গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে? ভারতে যে ভাবে সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তের খোঁজ চলছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে এই বিতর্ক।
বিজ্ঞাপন
করোনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। লকডাউনঘোষণা, হট স্পট সিল, করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো, দিল্লিতে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা তারই অঙ্গ। এর পাশাপাশি আরেকটি চেষ্টা চালাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তা হলো, করোনায় কেউ আক্রান্ত হলে, তাঁর সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন তা খুঁজে বের করা। তাঁদেরও করোনা পরীক্ষা করে দেখা এবং দরকার হলে কোয়ারান্টিনে পাঠানো। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, দিল্লিতে করোনায়কেউ আক্রান্ত হলেই তাঁর মোবাইল, ল্যাপ টপ, আই প্যাড নিয়ে এসে তা তুলে দেওয়া হচ্ছে সাইবার ফরেনসিক টিমের হাতে। তাঁরা সেখান থেকে খুঁজে বের করছেন, আক্রান্ত ব্যক্তি কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং দেখা করেছেন। সাইবার ফরেনসিক টিমের কিছু সদস্যকে রাখা হয়েছে দিল্লির একটি হোটেলে। চিকিৎসকদের মতো তাঁদেরও দেওয়া হয়েছে সুরক্ষা-পোশাক। অতি সাবধানে সংক্রমিতের মোবাইল, ল্যাপটপ ঘেঁটে তাঁরা ওই সব তথ্য খুঁজে বের করছেন। তারপর করোনায় আক্রান্তের সঙ্গে যাঁদের দেখা হয়েছিল, তাঁদের খুঁজে বের করছে পুলিশ। পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে অবশ্য অনেকগুলি এজেন্সি জড়িয়ে আছে।
যেখানে করোনা, সেখানেই রোবট আর ড্রোন
জানালায় এসে কথা বলছে ড্রোন। পুলিশের নির্দেশে উড়ে যাচ্ছে যেখানে দরকার। রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, সুপার মার্কেটসহ অনেক জায়গায় করোনা ভাইরাসকে রুখতে রোবটও কাজ করে চলেছে বিরামহীনভাবে। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/China Daily
ড্রোন বলছে, সাবধান!
মালয়েশিয়ার পুলিশ করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচার কথা বলতে পাঠিয়েছে তাকে। রাজধানী কুয়ালালামপুরের এই ঘরটির সামনে এসে সে কথাই বলছে ড্রোন। মন দিয়ে ড্রোনের কথা শুনছেন এক গৃহিণী।
ছবি: Reuters/Lim Huey Teng
শিক্ষার্থীর বেশে রোবট
করোনা ভইরাস থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। জাপানের রাজধানী টোকিওর এক অনুষ্ঠানে তাই সদ্য স্নাতক পাস করা শিক্ষার্থীরা আসতে পারেননি। তাদের জায়গায় গাউন পরে দাঁড়িয়েছে রোবট।
ছবি: Reuters/BBT UNIVERSITY
রোবট যখন ফটোগ্রাফার
ইটালির ভারেসে শহরের এক হাসপাতলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের ছবি তুলে বেড়াচ্ছে রোবট। রোগীদের চিকিৎসায় খুব কাজে লাগছে সেই ছবি। কম্পিউটারের স্ক্রিনে রোবটের তোলা ছবি দেখছেন এক স্বাস্থকর্মী।
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
সচেতন রোবট
করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে একজন সচেতন মানুষের যা যা করা উচিত, সবাই মিলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়া উচিত, সুপার মার্কেটে সেই কথাগুলো বলছে মানুষের আদলে গড়া এক রোবট। জার্মানির লিন্ডিয়ার শহরের এক সুপার মার্কেট থেকে তোলা ছবি।
ছবি: Reuters/W. Rattay
সংবাদ সম্মেলনে রোবট
বেজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে সাংবাদিকদের দেখানো হচ্ছে হাসপাতলে রোবট কিভাবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সহায়তা করে। 'নকল মানুষ' সামনে রেখে রোবটই তা দেখাচ্ছে।
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
শহর জীবাণুমুক্ত করছে ড্রোন
চিলির তালকাহুয়ানা শহরে জীবাণুনাশক ছিটাতে আর মানুষের দরকার হয় না। লকডাউন মেনে মানুষ থাকছে ঘরে আর শহরময় উড়ে উড়ে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছে ড্রোন।
ছবি: Reuters/J. Luis Saavedra
খাবার পরিবেশনে
চীনের সাংহাই শহরের এক রেস্তোরাঁয় চাহিদামতো খাবার পরিবেশন করছে রোবট।
ছবি: Reuters/Aly Song
সিঁড়ি বেয়ে ওঠে স্প্রেয়ার!
চীনের লুসিয়াং হেনান প্রদেশের এক ভবনে জীবাণুনাশক ছিটাতে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে এগিয়ে চলেছে স্প্রেয়ার।
ছবি: Reuters/China Daily
রংমিস্ত্রি রোবট
করোনা ভাইরাসের কারণে ফ্রান্সও এখন বিপর্যস্ত। সব মানুষকে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে। অনেক কাজেই নামতে হয়েছে রোবটকে। করোনায় মৃতদের জন্য বানাতে হচ্ছে নতুন নতুন কফিন। কফিনে রং করছে এক রোবট।
ছবি: Reuters/G. Fuentes
মাস্ক লাগবে?
ভারতের কোচি শহরে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে রোবট। ট্রে-তে আছে মাছ আর স্যানিটাইজার। যার দরকার নিয়ে নিন!
ছবি: Reuters/Sivaram V
বিকল্প স্বাস্থ্যকর্মী
ইতালির ভারেসে শহরের এক হাসপাতলে করোনায় সংক্রমিতদের চিকিৎসায় সহায়তা করছে রোবট।
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
পরম বন্ধু
করোনা-সংকটে সবচেয়ে বিপদে আছেন প্রবীণরা। রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, একাকিত্বের যন্ত্রণাও তাদের জন্য বেশি অসহনীয়। বেলজিয়ামে এমন মানুষদের জন্য ঘরে ঘরে বিনামূল্যে রোবট পাঠাচ্ছে একটি কোম্পানি। রোবটগুলোর কাজই হলো ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলানো।
ছবি: Reuters/Y. Herman
পুলিশ এবং ড্রোন
ইন্দোনেশিয়ার রিয়াউ প্রদেশের পেকানবাউ শহরে
জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজও করতে হচ্ছে পুলিশকে। অবশ্য পুলিশ কাজটা নিজে করছে না। রিমোট হাতে নিয়ে শুধু নির্দেশ দিচ্ছে আর সেই নির্দেশ মেনে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে ড্রোন।
ছবি: Reuters/R. Muharrman
'বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক'
বেজিংয়ের করোনায় সংক্রমিত রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতো নানা উপদেশ দেবে এই রোবট। কিভাবে, কোন ইশারায় কী বোঝাতে হবে তা দেখিয়ে দিচ্ছেন ফাইভ জি প্রযুক্তির রোবটটি তৈরি করা কোম্পানির কর্মীরা।
ছবি: Reuters/China Daily
14 ছবি1 | 14
প্রশ্ন হলো, এতে কি গোপনীয়তার অধিকার খর্ব হচ্ছে? কারণ, সেল ফোনে কার সঙ্গে কথা হয়েছে বা ই-মেইল বা সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগের বিভিন্ন অ্যাপের মারফত কার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেছেন, তা জানার চেষ্টা মানে গোপনীয়তার অধিকারে আঘাত। ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ নিয়ে এর আগে বহুবার সংসদ উত্তাল হয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। সেখানে কি এই ভাবে তথ্য জানা যায়?
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, প্রথমত, অনুমতি নিয়েই তথ্য দেখার চেষ্টা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, করোনার মতো সংকট বিশ্বে আগে কখনও আসেনি। ফলে এটা অস্বাভাবিক সময়। সেই সময়ে এই ধরনের কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। অধিকতর লোকের হিতেই তা করা হচ্ছে। প্রতিটি দেশের কাছেই অগ্রাধিকার হলো করোনা থামানো। একজন করোনা আক্রান্তের কাছ থেকে বহু লোকের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বেপরোয়া ভাব দেখালে কী হয়, তাবলিগই তার উদাহরণ।
মাত্র ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার। এইটুকু ভূমিতেই ১৮ লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষের বাস। করোনার বিস্তার রোধ করা সেখানে তাই খুব কঠিন।
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/A. Amra
২৬ টি অস্থায়ী কোয়ারান্টাইন সেন্টার
বিদেশ থেকে ফেরা ১৮৬০ জন ফিলিস্তিনীকে রাখা হয়েছে কোয়ারান্টাইন সেন্টারে। খোলা হয়েছে মোট ২৬ টি অস্থায়ী কোয়ারান্টাইন সেন্টার। ছবির এই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারটি রাফাহ শহরের।
ছবি: Reuters/WHO in the Occupied Palestinian Territories
অপ্রতুল চিকিৎসা সরঞ্জাম
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য গাজার সম্বল মাত্র ৬৩ টি ভেন্টিলেটর এবং ৭৮ টি আইসিইউ শয্যা।
ছবি: Reuters/WHO in the Occupied Palestinian Territories
মাস্ক পরায় উদ্বুদ্ধ করতে...
সব বয়সের মানুষকে মাস্ক পরায় উদ্বুদ্ধ করতে নিজের হাতে বিশেষ ধরনের মাস্ক বানাচ্ছেন ফিলিস্তিনি শিল্পী-সায়মা সায়েদ এবং দোরগান ক্রাকে। নানা রংয়ের ডিজাইন করা মাস্কগুলো সত্যিই আকর্ষণীয়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Hana
সচেতনতা বৃদ্ধি
খুব ছোট পরিসরের শরণার্থী শিবির এবং সরু সরু গলি সম্বলিত ভূখণ্ডে পরিছন্নতা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো খুব দুরুহ। তবে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। এক গলিতে করোনা ভাইরাসেল মতো সেজে শিশুদের ভাইরাসটি সম্পর্কে সচেতন করছেন সমাজকর্মীরা।
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/M. Ajjour
কাতারের সহায়তা
ইসলামী সংগঠন হামাস এবং কাতার সরকার গাজার পাশে রয়েছে। সম্প্রতি ১০০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে কাতার সরকার।
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/A. Amra
মাস্ক পরানো কেক।
জনসচেতনতা বাড়াতে গাজার এক বেকারিতে বিক্রি হচ্ছে মানুষের চেহারা আঁকা এবং মুখে মাস্ক পরানো বিশেষ ধরনের কেক।
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
7 ছবি1 | 7
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''উন্নত বিশ্বের সঙ্গে ভারতের এ ক্ষেত্রে বরাবরই একটা ফারাক আছে। এখনে সরকার অপরাধ খুঁজে বের করার নাম করে সামাজিক মাধ্যমগুলির ওপর নজরদারিচালায়। ইউপিএ আমলে মন্ত্রী থাকার সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, তাঁর অফিস ঘরে আড়িপাতা হচ্ছে। বিরোধী নেতারা হামেশাই ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ করেন।'' শরদের মতে, ''স্বাভাবিক সময়ে এই ধরনের ঘটনা মানে গোপনীয়তার অধিকারে আঘাত। এখন একটা অস্বাভাবিক সময় চলছে। গায়িকা কণিকা কাপুরের উদাহরণ দেখুন। তিনি বিদেশ থেকে ফিরে কোয়ারান্টিনে না থেকে পার্টি করেছেন। পরে দেখা গিয়েছে তিনি করোনায় আক্রান্ত। তাঁর থেকে অনেকের করোনা হতে পারে। মধ্যপ্রদেশে করোনা আক্রান্ত একজন বেপরোয়া মহিলা আইএএস অফিসারের জন্য অন্তত ৬৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এখন আক্রান্তদের ফোন দেখে অন্যদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করাটা ঠিক কাজ।''
একসময় বেশ কিছু সাংবাদিকের ফোনে আড়িপাতা নিয়ে প্রচুর হইচই হয়েছিল। বিদেশি একটি সংগঠন সেই তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেখানে নাম ছিল অসমীয় প্রতিদিনের প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তের। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''কোনও সময়েই গোপনীয়তার অধিকার ভঙ্গ করা উচিত নয়। সরকারের যেটা উচিত, তা হলো, ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা করা। কেরালায় যেটা এখন শুরু হয়েছে। ভারতের অন্য রাজ্যেও একই পথ নেওয়া উচিত। তা হলেই করোনা ধরা পড়বে ও তা রোধ করা সম্ভব হবে। তা না করে অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো সেল ফোন ইত্যাদি থেকে তা বের করার চেষ্টা অর্থহীন।''