বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও পোপ ফ্রান্সিস ম্যালেরিয়াসহ অন্যান্য কঠিন রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঢিলেমি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ টিকাদান কর্মসূচি ও চিকিৎসায় অবহেলা হলে সার্বিক গণস্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবণতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের প্রায় সব দেশ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যস্ত৷ সর্বশক্তি প্রয়োগ করে, অর্থ, সম্পদ, সময়, শ্রম ব্যয় করে টিকা ও ওষুধের খোঁজ চলছে৷ লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ এমন অবস্থায় সমস্যায় পড়ছেন ‘সাধারণ' রোগীরা৷ করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যস্ত৷ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবে তাঁরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন৷ ফলে মানুষজন তাঁদের এড়িয়ে চলছেন৷ অনেক হাসপাতালেও বাকি চিকিৎসা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে৷
এমন অবস্থায় বাকি রোগীরা কী করবেন? তাঁদের চিকিৎসা কি করোনা সংকটের শেষ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে? ম্যালেরিয়া, এইডস ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রামও কি থেমে যাবে? অন্যান্য রোগের টিকাদান কর্মসূচিও বর্তমান সংকটের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার সম্মিলত ফল মারাত্মক হতে পারে৷
এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে৷ আফ্রিকা ছাড়াও বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা পরিষেবা চালু না থাকলে নতুন সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ডাব্লিইউএইচও৷ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরো বেশি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান ড. মাৎশেদিসো মোয়েটি বলেন, কোভিড-১৯-এর গুরুত্ব সত্ত্বেও অন্যান্য জরুরি রোগের প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি অবহেলা করলে চলবে না৷ বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ উপলক্ষ্যে তিনি এই মন্তব্য করেন৷ তিনি বলেন, যক্ষ্মারোগ ও ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে টিকা যথেষ্ট সফল হয়েছে৷ তাই এই উদ্যোগে কোনো ঢিলেমি চলবে না৷
পোপ ফ্রান্সিস রবিবারের প্রার্থনার পর করোনা মহামারি সত্ত্বেও ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার ডাক দিয়েছেন৷ অনেক দেশের কোটি কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ার কারণে হুমকির মুখে রয়েছেন বলে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, শনিবার ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রামের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, ২০১৭ সালে গোটা বিশ্বে প্রায় ২১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ার শিকার হয়েছেন৷ সেই রোগের কারণে প্রায় ৪ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ প্রায় ৯০ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা আফ্রিকা মহাদেশে ঘটেছে৷ করোনা সংকটের জের ধরে আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ার কারণে মৃত্যুর ঘটনা দ্বিগুণ হতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
দুই দশকে নতুন যত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
গোটা বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাস বিরুদ্ধে লড়ছে, যার শুরুটা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে৷ গত প্রায় দুই দশকে ছড়িয়ে পড়া নতুন কয়েকটি ভাইরাস নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Center for Disease Control
বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তারপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়৷ ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়৷ পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ৷ এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়৷ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
সার্স
সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে৷ ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে৷ আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় ৭৭৪ জন৷ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয়৷ তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বজুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়৷ শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেওয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন৷ দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: AP
মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস৷ ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়৷ দেশটিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মারা যান৷ উট থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়৷ হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে গত ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস প্রকোপ শুরু হয়৷ পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বৈশ্বিক মহামারি
২০২০ সালের শুরু থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিভিন্ন দেশে৷ এক পর্যায়ে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এশিয়া থেকে ইউরোপ হয়ে এখন অ্যামেরিকা রয়েছে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর শীর্ষে৷ সারা বিশ্বে এরিমধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে রহস্যময় ভাইরাসটি৷
ছবি: Getty Images/L. DeCicca
প্রতিষেধক নেই
এখনও করোনার কোন প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি৷ তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ৷ কয়েকটি উদ্যোগ বেশ খানিকটা এগিয়েছে৷ মানব শরীরে কিছু সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা নিরীক্ষাও শুরু হয়েছে৷ তবে সেগুলো কার্যকারিতা নিশ্চিত হতে আরো বছর খানেক সময় লাগতে পারে৷