করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে একের পর এক দেশ লকডাউন করা হচ্ছে৷ আতঙ্কিত মানুষজন দোকান খালি করে পণ্য কিনে বাড়িতে মজুদ করছেন৷ সবার আগে ফুরিয়ে যাওয়া পণ্যগুলোর একটি টয়লেট পেপার৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়৷ ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি কাউন্টার থেকে কফি নেয়ার পর দাম দিতে মানিব্যাগ নয় বরং টয়লেট পেপারের একটি রোল বের করে সেখান থেকে শিট ছিঁড়ে দাম দিচ্ছেন৷
কৌতুক করে ভিডিওটি বানানো হলেও বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হওয়া করোনা ভাইরাস সংকটের মধ্যে এটাই এখন সত্যে পরিণত হয়েছে৷ টয়লেট পেপার আজ এতটাই দুর্মূল্য বস্তু৷ কেন মানুষ পাগলের মত টয়লেট পেপার কিনছে?
বন-রাইন-জিগ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপলাইড সাইন্সের অধ্যাপক ব্রিটা কান বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ অনিয়ন্ত্রিত, সর্বোচ্চ অনিশ্চয়তা এবং অজানা শঙ্কার সর্বোচ্চ মাত্রা থেকে এটা হচ্ছে৷ কেউ জানে না কি ঘটতে যাচ্ছে৷ কিন্তু মানুষ স্বভাবগতভবে সব সময় পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবার চেষ্টা করে৷ তাই যখন মাস্ক আর জীবাণুনাশক শেষ হয়ে গেল তখন মানুষ এমন জিনিস কিনতে শুরু করলো যেটা পচনশীল নয়৷’’
‘‘এ পরিস্থিতে টয়লেট পেপার তাদের সামনে নিরাপত্তার প্রতীক রূপে ধরা দিল৷’’
প্রথম টয়লেট পেপার ব্যবহার শুরু হয়
ষষ্ঠ শতাব্দীর নানা কাহিনীতে চীনে প্রথম টয়লেট পেপার ব্যবহারে কথা জানা যায়৷ ব্রিটিশ সিনোলোজিস্ট জোসেফ নিডহাম চীনের পণ্ডিত ইয়ান ঝিতুইয়ের ৫৮৯ সালে লেখা একটি বইয়ে কথা উল্লেখ করেন৷ যেখানে টয়লেটের পর কাগজ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে৷
৮৫১ সালে লেখা একটি ভ্রমণ কাহিনীতে বলা হয়, ‘‘তারা (চীনা) পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না৷ কাজ শেষে (মলত্যাগ) তারা পানি দিয়ে ধৌত না করে শুধু কাগজ দিয়ে নিজেদের মুছে নেয়৷’’
ইউরোপে টয়লেট পেপার
মধ্যযুগে ইউরোপের মানুষ মলত্যাগের পর নিজেদের পরিষ্কার করতে পুরাতন কাপড় বা উল ব্যবহার করতেন৷ কখনো কখনো শ্যাওলা, পাতা এমনকি খড়ও ব্যবহার করতেন৷ ধনীরা অবশ্য সিল্কসহ নানা দামী কাপড় ব্যবহার করতেন৷
ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপে টয়লেট পেপার হিসেবে কাগজের টুকরা ব্যবহার শুরু হয়৷ ধীরে ধীরে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাধ্যমে যা আজকের টয়লেট পেপারে পরিণত হয়েছে৷
এসএনএল/কেএম
ইন্দোনেশিয়ার ‘টয়লেট ক্যাফে’
জাতিসংঘের হিসেবে, ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি চারজনের একজন এখনও প্রকাশ্যে মলত্যাগ করেন৷ এ ব্যাপারে ইন্দোনেশীয়দের সচেতন করতে অভিনব এক উপায় বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Wibowo
বিশ্বে দ্বিতীয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ-এর এক যৌথ প্রতিবেদন বলছে, ইন্দোনেশিয়ার প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে থাকেন৷ অর্থাৎ প্রতি চারজনের একজন৷ প্রকাশ্যে মলত্যাগকারীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে সবার উপরে আছে ভারত, তারপরেই ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অভিনব উদ্যোগ
প্রকাশ্যে মলত্যাগ বিষয়টি স্বাস্থ্যসম্মত নয়৷ তাই টয়লেট ব্যবহারে সবাইকে সচেতন করতে দেশটির এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বুডি লাকসোনো ‘টয়লেট ক্যাফে’ চালু করেছেন৷ নাম ‘জামবান ক্যাফে’৷ ইন্দোনেশীয় শব্দ ‘জামবান’-এর অর্থ টয়লেট৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Wibowo
এপ্রিলে চালু
জাভা দ্বীপের সেমারাং এলাকায় চলতি বছরের এপ্রিলে ক্যাফেটি চালু হয়৷ ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন, কোথায় খাবার পরিবেশন করা হয়েছে আর কোথায় বসে ক্রেতারা খাওয়া দাওয়া করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Wibowo
তবে এটিই প্রথম নয়
ইন্দোনেশিয়ার আগে তাইওয়ান ও রাশিয়াতে টয়লেট ক্যাফে চালু হয়েছে৷ ছবিতে রাশিয়ার ক্যাফেটি দেখতে পাচ্ছেন৷ তবে পার্থক্য হচ্ছে, ঐ দুই দেশে অভিনব ডিজাইনের কথা বিবেচনা করে ওরকম ক্যাফে চালু হয়েছে৷ আর ইন্দোনেশিয়ারটি চালু হয়েছে জনগণকে সচেতন করতে৷
ছবি: Imago
ক্রেতাদের ভাবনা
২৭ বছরের মুকুদাস বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘প্রথমে এই ব্যাপারটায় আমি দারুণ বিরক্ত ছিলাম৷ তবে কৌতূহলের কারণে শেষ পর্যন্ত কিছু খাবার খেয়েছি৷ আমার মনে হয়, প্রচারণা সফল করতে এই পরিকল্পনাটি দারুণ৷’’ ১৫ বছরের আনিশা বলেন, ‘‘ক্যাফের মালিক আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, যে খাবার স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার উপায়ে রান্না করা হয়েছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/S. Wibowo
সমালোচনা
জামবান ক্যাফের মালিক লাকসোনো জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার অনেক মানুষের যে এখনও টয়লেট নেই এই ক্যাফের মাধ্যমে সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে৷ তবে কেউ কেউ যে এই ক্যাফেকে ইসলামি আইনের পরিপন্থি ও অনুপোযোগী বলে এর সমালোচনা করছেন সেই বিষয়টিও জানিয়েছেন তিনি৷