পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গভীর অর্থনৈতিক সংকটের পূর্বাভাষ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক৷ চরম বেকারত্ব, দারিদ্র্য, মন্দার মতো নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে৷ জি-টোয়েন্টি গোষ্ঠী সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের ফলে অর্থনৈতিক সংকটের নানা দৃষ্টান্ত ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ এবার বিশ্বব্যাংক বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলো৷ চীন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাপক মাত্রায় কমে যাবে বলে বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে৷ সেই মন্দার জের ধরে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যেতে পারে৷ ২০১৯ সালে গড় প্রবৃদ্ধির মাত্রা যেখানে পাঁচ দশমিক আট শতাংশ ছিল, চলতি বছর তা কমে দুই দশমিক এক শতাংশ ছুঁতে পারে৷
করোনা সংকটের মেয়াদ সম্পর্কে এখনো কোনো পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে না৷ অদূর ভবিষ্যতে ওষুধ অথবা টিকার মাধ্যমে করোনার মোকাবিলা করা সম্ভব হলে অর্থনীতি আবার চাঙ্গা করে তোলার প্রচেষ্টা সফল হতে পারে৷ কিন্তু এই সংকট আগামী বছর পর্যন্ত গড়ালে তার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক৷ আপাতত শুধু এশিয়া সম্পর্কে পূর্বাভাষ দিলেও ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের পরিস্থিতিও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে৷ তবে এশিয়ার করুণ পরিস্থিতি যে বিশ্ব অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, যে মন্দা শুরু হয়ে গেছে৷
এমন নেতিবাচক চিত্র সত্ত্বেও কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বিশ্বব্যাংকের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান অর্থনীতিবিদ আদিত্য মাট্টু বলেছেন, প্রত্যেক দেশ শুধু এককভাবে অর্থনীতি চাঙ্গা করে তোলার চেষ্টা করলে লাভ নেই৷ সেইসঙ্গে গভীর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে৷ তবেই এমন হুমকি দূর করা যেতে পারে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে বিশ্বব্যাংক আপাতত এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার অঙ্কের জরুরি আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেছে৷ আগামী ১৫ মাসের মধ্যে সেই অঙ্ক বেড়ে ১৬ হাজার কোটি ছুঁতে পারে৷
চলমান সংকটের মাঝে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে জি-টোয়েন্টি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা একযোগে উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক বৈঠকে তাঁরা পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ অনেক দেশে জাতীয় সীমান্ত বন্ধ থাকায় বাণিজ্যের পথে বাধা সৃষ্টি হলেও বিশেষ করে ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্যান্য অত্যাবশ্যক পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন তাঁরা৷ তাঁরা জানিয়েছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম মেনেই সাময়িক উদ্যোগের মাধ্যমে অবিলম্বে সেই লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ উল্লেখ্য, জি-টোয়েন্টি নেতারা বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা করতে গত সপ্তাহে পাঁচ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয়ের অঙ্গীকার করেছিলেন৷
নীতিগত ঐকমত্য সত্ত্বেও বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে বিভাজন দূর হচ্ছে না৷ যেমন ফ্রান্স, জার্মানি ও ভারত বর্তমানে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের রপ্তানি বন্ধ রেখেছে৷ জি-টোয়েন্টি আনুষ্ঠানিকভাবে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার ডাক দেয় নি৷ মার্কিন প্রশাসনও ‘বাই অ্যামেরিকা’ বিধির আওতায় একমাত্র দেশে তৈরি ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য চাপ দিতে চলেছে৷ অনেক মার্কিন কোম্পানির আশঙ্কা, এর ফলে ওষুধপত্রের অভাব দেখা দেবে৷ উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উৎপাদন ও সরবরাহের পথ বন্ধ হয়ে যাবার ফলে এমনিতেই অভাব-অনটন দেখা যাচ্ছে৷
এসবি/কেএম (এপি, রয়টার্স)
২০ মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷