করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি আজ হুমকির মুখে৷ ইউরোপের বড় দুই এয়ারলাইন লুফথান্সা ও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এরই মধ্যে কর্মীবাহিনীতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তাদের এ পরিকল্পনায় এক লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ করোনা ভাইরাসের কারণে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে৷ অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জার্মানির লুফথান্সা ও যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে৷
এ ধকল সামলে উঠতে বৃহস্পতিবার এয়ারলাইন দুটি এক লাখের বেশি কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে৷
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, তারা এর মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার কর্মীর চুক্তি মে মাস পর্যন্ত স্থগিতের বিষয়ে তাদের শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলেছে৷
এয়ারলাইনটির পাইলটদের বেতন আগেই অর্ধেক করে ফেলা হয়েছে৷ এবার ব্রিটিশ সরকারের ঘোষণা করা ফারলো স্কিম এর অধীনে কেবিন ও গ্রাউন্ড ক্রু, প্রকৌশলী এবং অফিস কর্মীদের চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা৷ করোনা সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যই ব্রিটিশ সরকার ফারলো স্কিম ঘোষণা করেছে৷ স্কিমের অধীনে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরা বেতনের ৮০ শতাংশ পাবেন৷
এদিকে, জার্মানির ফ্ল্যাগক্যারিয়ার লুফথান্সা বিশ্বজুড়ে তাদের ৮৭ হাজার কর্মীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিয়েছে৷ সরকারের সমর্থন নিয়েই তারা এটা করেছে৷
যার ফলে তাদের ৬০ শতাংশ কর্মীর আয় ব্যাপকভাবে কমে যাবে৷ এই সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজার, যাদের মধ্যে কেবিন ক্রু, গ্রাউন্ড ক্রু এবং পাইলটসহ সবাই আছেন৷
লুফথান্সার ৭৬৩টি উড়োজাহাজের মধ্যে প্রায় ৭০০টি বসে আছে৷
কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কারস্টেন স্পোয়া গত মাসেই সতর্ক করে বলেছিলেন, "সংকট যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, বিমানপরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যত তত খারাপ হবে৷ রাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া এই খাতের অস্তিত্ব রক্ষা তত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে৷ ”
বৈশ্বিকসংকট
করোনা ভাইরাসের কারণে শুধু জার্মানি বা যুক্তরাজ্যের বিমান পরিবহণ খাতেরই নাজুক অবস্থা নয়৷ বরং পুরো বিশ্বজুড়ে একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে৷
গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার ‘কোয়ান্টাস এয়ারওয়েজ' ২০ হাজার কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে৷ যা তাদের মোট কর্মীবাহিনীর দুইতৃতীয়াংশ৷ ব্রিটেন ভিত্তিক আরেক এয়ারলাইন ‘ইজিজেট' যুক্তরাজ্যে তাদের চার হাজার কেবিন ক্রুকে লে-অফে পাঠিয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইনগুলো আগামী ছয় মাস কর্মীদের বেতন দিতে সরকারের কাছ থেকে আড়াই হাজার কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে৷ তারপরও কোম্পানিগুলো কর্মীবাহিনী হ্রাস করতে চাইছে৷ বিনা বেতনে ছুটি এবং আগেভাগে অবসরে পাঠানোর পরিকল্পনাও আছে তাদের৷
এসএনএল/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷