করোনা সংকটের সময় বিশ্বের প্রায় সব ছোটবড় শহরের পথঘাট অনেক খালি হয়ে গেছে৷ বার্লিনে সাইকেলচালকদের পথ আরও চওড়া করে সামাজিক ব্যবধান নিশ্চিত করা গেছে৷ পরিবহণ ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন স্থায়ী করার স্বপ্ন দেখছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা মহামারির শুরু থেকে বার্লিনের রাজপথে গাড়িঘোড়া নাটকীয় মাত্রায় কমে গেছে৷ ৪০ শতাংশ কম গাড়ি পথে নামছে৷ অন্যদিকে সাইকেলই যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে৷ খালি রাস্তায় সাইকেল চালানোর জায়গাও বেড়ে গেছে৷ বার্লিন পৌরসভার কর্মকর্তা ফেলিক্স ভাইসব্রিশ পথের উপর নতুন রেখার প্রতি নজর আকর্ষণ করে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে সাইকেলের জন্য নির্দিষ্ট পথ আগে কত সংকীর্ণ ছিল৷
বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ ও সংলগ্ন এলাকার পথঘাট ও পার্ক দফতরের প্রধান ফেলিক্স ভাইসব্রিশ করোনা মহামারির শুরু থেকে সাইকেলের জন্য নতুন ও আরও চওড়া পথ খুলে চলেছেন৷ মানুষের সুরক্ষার জন্য এমন পদক্ষেপ জরুরি বলে তিনি মনে করেন৷ ভাইসব্রিশ বলেন, ‘‘ভেবে দেখুন, কেউ যদি এখানে ধীরে সাইকেল চালিয়ে যেতে যেতে অন্য একজনকে ওভারটেক করে, তখন আর দেড় মিটার ব্যবধান রাখা সম্ভব নয়৷ অর্থাৎ বর্তমান অবস্থায় চওড়া সাইকেলের পথ চাই৷''
মহামারির কারণে পৌর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়েছে, এমনকি স্থানীয় পৌর পরিষদেরও অনুমোদন নেওয়া সম্ভব হয় নি৷ তবে এ ক্ষেত্রে কোনো আইন ভাঙা হয় নি৷
করোনায় জনপ্রিয় হচ্ছে সাইকেল
03:19
কিন্তু গাড়ির দেশ জার্মানিতে সবাই এমন পদক্ষেপে মোটেই সন্তুষ্ট নয়৷ বিশেষ করে সিডিইউ দলের স্থানীয় শাখা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ দলের স্থানীয় নেতা টিমুর হুসেইন মনে করেন, ‘‘আমার কাছে এই পদক্ষেপ একেবারেই উপযুক্ত নয়৷ গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপের ফলে সাইকেল চালকদেরও আদৌ কোনো উপকার হচ্ছে না৷ এটা সবুজ দলের ভাবাদর্শ মাত্র৷ তারা গাড়ি ঘৃণা করে৷''
আন্টিয়ে হাইনরিশের মতো সাইকেল চালক অবশ্য এমন পদক্ষেপের কারণে খুব খুশি৷ তিনি বহুকাল ধরে পরিবহণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ সাইকেল চালক হিসেবে কত কম জায়গায় কেরামতি করতে হয়, প্রতিবার তিনি তা হাড়ে হাড়ে টের পান৷ আন্টিয়ে বলেন, ‘‘ঠিক এটাই বলতে চাই৷ বার্লিনে এমনটা প্রায়ই ঘটে৷ খুবই বিপজ্জনক, কারণ আমাকে বাইক লেনের উপর রাখা গাড়ির পাশ কাটিয়ে সাইকেল চালাতে হয়৷''
করোনা সংকটের জের ধরে পরিবহণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর সুযোগ দেখছেন আন্টিয়ে৷ গাড়ি কমিয়ে পথচারি ও সাইকেল চালকদের জন্য আরও জায়গা চান তিনি৷ আন্টিয়ে হাইনরিশ বলেন, ‘‘কম গাড়ি থাকলে কী হবে, আমি সারাক্ষণ সে কথা ভেবে চলেছি৷ যেমন এখানে গাড়ির পার্কিংয়ের বদলে আমরা ফুলগাছ লাগাতে পারি, ক্যাফের চেয়ার রাখতে পারি, শিশুদের খেলার জায়গা তৈরি করতে পারি৷''
এমন স্বপ্ন এখনো বাস্তব হয়ে ওঠে নি বটে, তবে সংকটের সময় বার্লিন শহর জুড়ে সাইকেল চালকদের জন্য বেশ চওড়া পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এসেন ও স্টুটগার্টের মতো শহরেও মহামারি সামলাতে সাইকেলের পথ চওড়া করা হয়েছে৷
লিন্ডা ফিয়ারএকে/এসবি
২০১৯ সালের ছবিঘরটি দেখুন
ইউরোপের সাইকেল-বান্ধব শহর
পরিবেশ-বান্ধব, স্বাস্থ্যকর আর সাশ্রয়ী- সব দিক দিয়েই বাহন হিসাবে এগিয়ে বাইসাইকেল৷ সেই চিন্তা মাথায় রেখে নিজেদের এলাকাকে সাইকেল-বান্ধব করেছে ইউরোপের বিভিন্ন শহর৷ সাইকেল-বান্ধব এমন কয়েকটি শহর সম্পর্কে জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
কোপেনহেগেন
ডেনমার্কের রাজধানী শহরে রয়েছে ৩৫০ কিলোমিটারের সাইকেল নেটওয়ার্ক৷ সাইকেলকে মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাও ৷ সিগন্যালে সাইকেল নিয়ে অপেক্ষার জন্য আছে সুন্দর ব্যবস্থা৷ কোপেনহেগেনে ৬২ শতাংশ মানুষ সাইকেল চড়ে কাজে যান৷ সাইকেল-বান্ধব নগর গড়ার উদাহরণ হিসাবে ‘কোপেনহেগেনাইজ’ শব্দটি তাই জায়গা করে নিয়েছে ইংরেজি অভিধানে৷
সাইকেল-বান্ধব শহরগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম৷ এখানকার সাইকেল-চালকেরা প্রতিদিন প্রায় দুই মিলিয়ন কিলোমিটার পথ চলেন৷ উটরেস্ট এলাকায় রয়েছে সবচেয়ে বড় সাইকেল পার্কিং, যেখানে সাড়ে ১২ হাজার সাইকেল রাখা যায়৷ ২০২০ সালের মধ্যে এটাকে ৩৩ হাজারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আন্টভের্প
বেলজিয়ামের আন্টভের্প শহরের সাইকেল পার্কিং অগণিত আর সেগুলোর অবকাঠামো অভিভূত করে সবাইকে৷ সাইকেলের পথ বাড়ানোর পাশাপাশি কেবল সাইকেল আর পথচারীদের জন্য তিনটি সেতু তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/P. Schickert
প্যারিস
কয়েক বছর ধরে সাইকেল নেটওয়ার্ক বাড়াচ্ছে প্যারিসের নগর কর্তৃপক্ষ৷ শহরের নানা জায়গায় রয়েছে বাইসাইকেল স্টেশন৷ পর্যটকেরাও সাইকেল নিয়ে ঘুরতে পারেন পুরো শহর৷ অন্যদিকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাইকেল ভাড়া নেওয়া সেখানে বেশ জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/S. Dee
মালমো
সাইকেলের জন্য অবকাঠামো বাড়াতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে সুইডেনের মালমো শহর৷ এখানে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সাইকেলের রাস্তা রয়েছে৷ মালমো আর কোপেনহেগেনের মধ্যে ফেরি পারাপার সেখানকার বাইসাইকেল পর্যটনকে বেশ জনপ্রিয়তা দিয়েছে৷ কোথাও কোথাও হোটেলের সামনেই মিলবে সাইকেল স্টেশন আর ওয়ার্কশপ৷
ছবি: Ohboy
ট্রন্ডহেইম
নরওয়ের শহর ট্রন্ডহেইম৷ পাহাড়ি এই নগরে চালু আছে ‘ট্রাম্পে’ নামে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাইসাইকেল উঠানামার ব্যবস্থা৷ প্রতি ঘন্টায় সেখানে ৩০০ সাইক্লিস্টকে ১৩০ মিটার উচ্চতায় আনা-নেওয়া করা হয়৷ পাহাড়ি পথেও সাইকেল নিয়ে চিন্তা নেই, এর চেয়ে স্বস্তির আর কি হতে পারে!
ছবি: public domain
ম্যুনস্টার
জার্মানির ওয়েস্টফালিয়ার ম্যুনস্টার এলাকায় মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি৷ সাইকেলের জন্য চওড়া রাস্তা, পর্যাপ্ত পার্কিং আর সমতল ভূমির কারণে সেখানে এই দ্বিচক্রযান এতো জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
বার্সেলোনা
২০০২ সালেও ভাড়ায় বাইসাইকেল পাওয়া যেত স্পেনের বার্সেলোনা শহরে৷ কেবল সাইকেলের জন্য রয়েছে ১৫৮ কিলোমিটার রাস্তা৷ অনেক জায়গায় গাড়ির গতি ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখায় সাইক্লিস্টদের জন্য এলাকাটি বেশ নিরাপদ৷ পর্যটকেরা যাতে বাইসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারেন, আছে সেই ব্যবস্থাও৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/G. Guarino
বাসেল
সুইজারল্যান্ডের বাসেল অনেকটা সমতল এবং দর্শনীয় স্থানগুলোও কাছাকাছি৷ গ্রীষ্মে ‘স্লো আপ’ নামে গাড়িমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয় সেটিকে৷ প্রচুর লোকের সমাগম হওয়ায় তখন ৩০ কিলোমিটার এলাকা নির্ধারিত রাখা হয় কেবল সাইক্লিস্টদের জন্য৷ একইসঙ্গে সাইক্লিস্টদের আনন্দ দিতে থাকে বহু আয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/M. Dr. Schulte-Kellinghaus