জার্মানির শিশু এবং তরুণদের এক পঞ্চমাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে৷ করোনা সংকট শিশুদের দারিদ্র্য আরো বাড়িয়ে তোলার হুমকি স্বরূপ- ব্যার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশনের করা এক সমীক্ষায় প্রকাশ৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির অর্থনৈতিকউন্নতি সত্ত্বেও ২,৮ মিলিয়ন শিশু ও তরুণ ক্ষতিগ্রস্ত৷ সম্প্রতি গ্যুটার্সলো শহরে প্রকাশিত ব্যার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশনের করা এক সমীক্ষায় এসব জানানো হয়৷ যেসব শিশুর মা-বাবা করোনা সংকটে চাকরি হারিয়েছেন বা খন্ডকালীন, স্বল্প আয়ের চাকরি কিংবা সরকারী ভাতায় সংসার চালান, তাদের শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায় ফাউন্ডেশন৷ জার্মানিতেসেসব শিশুকে দরিদ্র হিসেবে গণ্য করা হয়, যাদের মা-বাবার আয় মধ্যবিত্ত পরিবারের আয়ের ৬০ শতাংশের চেয়ে কম৷
শিশু সৈনিকরা এখন করোনাযোদ্ধা
আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক- সিএআর৷ বিভিন্ন পক্ষের গৃহযুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল হাজার হাজার শিশু৷ যারা পালাতে সক্ষম হয়েছে তারা এখন মহামারি থেকে জনগণকে রক্ষায় সাহায্য করছে৷
ছবি: Jack Losh
নতুন শত্রু করোনা ভাইরাস
সিএআর এর রাজধানী বাংগুইয়ে একদল সাবেক শিশু সৈনিক ও পথশিশুদের সহায়তায় একটি অনুন্নত এলাকায় কুয়া খনন করছে৷ ইউনিসেফ প্রকল্পের আওতায় একটি ঘনবসতি এলাকায় তারা কাজ করছে৷ এরই মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের জন্য কুয়া খনন করেছে তারা৷ প্রকল্পটি অবশ্য মহামারি শুরুর আগেই গ্রহণ করা হয়৷ কিন্তু এখন এটি মানুষের অনেক কাজে লাগছে৷
ছবি: Jack Losh
শান্তির জন্য খনন
এক বালককে দেখা যাচ্ছে খননযন্ত্রের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে৷ তার সহকর্মীরা হাত দিয়ে যন্ত্রটি ঘোরাচ্ছেন৷ এই প্রকল্পটিকে সাবেক শিশু সৈনিকদের জন্য একপ্রকার পুনর্বাসনের সুযোগও সৃষ্টি করেছে৷ একদিকে পালিয়ে আসা সৈনিকদের কাজের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকছে, অন্যদিকে সমাজেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে৷ ২০১৫ সালে এই প্রকল্প চালু হলেও এখন তা সিএআর এর করোনা ভাইরাস মোকাবিলা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Jack Losh
পরিশ্রমের কাজ
পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে খালি হাতেই মাটি তুলে আনতে হয়৷ সিএআর-এ প্রায় চার হাজারের মতো মানুষ করোনায় আক্রান্ত৷ তবে টেস্টিং স্বল্পতার কারণে ধারণা করা হয় এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে৷ কুয়া খননের জন্য এখন দেশজুড়ে পাইপ ও অন্যান্য যন্ত্র বসানোর কাজ চলছে৷ দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের বাড়িতেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই৷
ছবি: Jack Losh
মানুষের মন জয়
এই কাজ দেখতে জড়ো হয়েছে আরো অনেক শিশু৷ বেশিরভাগ সময় সাবেক শিশু সৈনিকরা সমাজে নিগৃহীত হয়৷ ফলে সমাজে তাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দেয়৷ তবে এমন কাজের মাধ্যমে তারা মানুষের মন জয় করতে পারছেন৷ একজন সাবেক শিশু সৈনিক বলছিলেন, ‘‘এই কাজ আমার জীবন পালটে দিতে পারে৷ এখন আমার কিছু টাকা হয়েছে৷ পাশাপাশি আমি আমার সমাজ ও দেশের জন্যও কিছু করতে পারছি৷’’
ছবি: Jack Losh
ক্ষত-বিক্ষত দেশ
গৃহযুদ্ধের স্মৃতি হয়ে এখনও সিএআর এর অনেক জায়গায় মানুষের গণকবর ছড়িয়ে রয়েছে৷ কয়েক দশকের অস্থিরতার পর ২০১৩ সালে মুসলিম বিদ্রোহীদের সংগঠন সেলেকা যুদ্ধ শুরু করে এবং প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করে৷ প্রতিক্রিয়ায় খ্রিস্টান ও অ্যানিমিস্ট যোদ্ধারা পাঠায় অ্যান্টি-বালাক মিলিশিয়া৷
ছবি: Jack Losh
ঠুনকো শান্তি
বিদ্রোহী গোষ্ঠী এফপিআরসি এর এক বিদ্রোহী সেনাকে একটি চেকপয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ দেশটির বড় একটি অংশ দখল করে আছে বিদ্রোহীরা৷ গত ফেব্রুয়ারিতে সরকার এবং ১৪টি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি চুক্তি হলেও বাস্তবে শান্তি ফিরে আসেনি৷ খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ এলাকার দখল নিতে মরিয়া বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছেই৷
ছবি: Jack Losh
‘শিশুরা সৈনিক নয়’
বোসাংগোয়ায় রাস্তার পাশে এক সাইনবোর্ডে শিশুদের হাতে অস্ত্র দেয়ার বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে৷ ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মিলিশিয়াদের হাত থেকে সাড়ে ১৪ হাজার শিশু সৈনিক মুক্তি পায়৷ তবে এখনও সাড়ে পাঁচ হাজার শিশু সৈনিক মিলিশিয়ার হাতে জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ এদের অনেককেই সহিংসতা ও যৌন নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়৷ এদের কেউ সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়, বাকিরা বার্তাবাহক, বাবুর্চি বা পাহারাদারের কাজ করে৷
ছবি: Jack Losh
শিক্ষার অভাব
অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষে শিশুরা জড়ো হয়েছে৷ শরণার্থী শিবিরটিতে বিদ্রোহকবলিত কাগা বান্দোরো এলাকা থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে৷ দেশটিতে গৃহযুদ্ধে অন্তত ১৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছেন৷ দেশটিতে গড়ে প্রতি পাঁচ জনে একজন শিশু স্কুলে যায় না৷ কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এ হার পাঁচ জনে চার জন৷
ছবি: Jack Losh
বেসামরিক নাগরিকদের বন্দিদশা
জাতিসংঘের এক শান্তিরক্ষীকে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা ব্রিয়া শহরে এক শরণার্থী শিবিরে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে৷ সাইনবোর্ডে মিলিশিয়াদের অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে৷ গাদাগাদি করে থাকায় এসব শিবিরে করোনা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: Jack Losh
যুদ্ধের সময়ে করোনা
বিদ্রোহী এফপিআরসি গেরিলাদের দখলে থাকা অঞ্চলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একটি বেসামরিক নাগরিকবাহী ট্রাক৷ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটি একেবারেই প্রস্তুত না বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ৷ দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে৷ স্বাস্থ্যসেবীরাও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ বর্তমানে দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করেন৷
ছবি: Jack Losh
জীবনযুদ্ধ
ছবিতে এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে শরণার্থী ক্যাম্পে জল বয়ে নিয়ে যেতে৷ ইউএনএইচসিআর ক্যাম্পেগুলোতে আরো বেশি জলের আধার তৈরির চেষ্টা করছে৷ পাশাপাশি বাসিন্দাদের মধ্যেও নিয়মিত হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ কিন্তু অস্বাভাবিক জনসংখ্যার চাপ সে সমস্ত চেষ্টাকে বিফল করে দিতে পারে৷
ছবি: Jack Losh
শান্তি রক্ষার সংগ্রাম
জাতিসংঘের সাঁজোয়া যানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী৷ কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে সতর্কতার ফলে চাপা পড়ে যেতে পারে দ্রব্যমূল্য এবং খাদ্যপণ্যের সংকট৷ ডিসেম্বরে দেশটিতে নির্বাচন৷ এর আগে সহিংসতা বাড়ার শঙ্কা রয়েছে বিশ্লেষদের৷
ছবি: Jack Losh
শিশু অধিকার
কাগা বান্দোরোর শরণার্থী শিবিরে কিছু বালককে ফুটবল খেলতে দেখা যাচ্ছে৷ গত বছরই পাঁচ শতাধিক শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা জানা গেছে৷ তবে আসল সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হলেও সর্বব্যাপী দুর্নীতির ফলে তা ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷
ছবি: Jack Losh
আশার আলো
একদল সাবেক শিশু যোদ্ধা বাংগুইয়ে নতুন কুয়া খননের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে৷ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এই অঞ্চলে নেই বললেই চলে৷ কিন্তু এ ধরনের প্রকল্প তাদের লজ্জা ও অপরাধবোধ থেকে বের হয়ে আসতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে৷ এটা যদিও সংকটের সেরা সমাধান নয়, কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে এমন প্রকল্প সবার মনেই অন্তত কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাতে পারছে৷
ছবি: Jack Losh
14 ছবি1 | 14
করোনা সংকটে হোমস্কুলিং-এর ক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারের ২৪ শতাংশ শিশুরইন্টারনেট সুবিধা নেই , ১৩ শতাংশ শিশুর ফ্ল্যাটে নিরিবিলিতে পড়াশোনার জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও নেই৷ তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছে ফাউন্ডেশন৷ তবে জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন পরিবার কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মুখপাত্র উলরিকে ডেমার৷