করোনা সংকটে শুধু মানুষ নয়, অনেক চিড়িয়াখানাও সংকটে পড়েছে৷ দর্শকদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় প্রাণীদের খোরাক ও কর্মীদের পারিশ্রমিক অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশ বেলিজের একটি চিড়িয়াখানা এরই মধ্যে আশার আলো দেখেছে৷
বিজ্ঞাপন
কর্মী হিসেবে রক্সি লেমাস বেলিজের চিড়িয়াখানয় সেই সব জাগুয়ারদের দেখাশোনা করেন, যাদের নিয়ে সমস্যা রয়েছে৷ এই সব প্রাণী প্রকৃতির কোলে মানুষের কাছাকাছি চলে এসে কুকুর বা মুরগি শিকার করেছিল৷ মানুষের বুলেটের হাত থেকে এমন সব জাগুয়ার বাঁচাতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সেগুলিকে আশ্রয় দেয়৷ রক্সিকে ভালোভাবে চিনলেও আজ প্রাণীগুলি খুব একটা গ্রাহ্য করছে না৷ আসলে মুখের উপর মাস্ক মোটেই পছন্দ নয়৷
জাগুয়ারগুলিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতেই রক্সিকে মাস্ক পরতে হয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিড়িয়াখানায় কয়েকটি বাঘ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পর এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ রক্সি জানালেন, ‘‘মাস্ক পরলে প্রথমদিকে প্রাণীগুলি চিনতেই পারে না৷ আসলে দুই পক্ষকেই এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে৷ আমাদের মাস্ক পরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে হচ্ছে, প্রাণীদেরও এমন দৃশ্যে অভ্যস্ত হতে হচ্ছে৷’’
শুধু দেশ হিসেবে বেলিজ নয়, চিড়িয়াখানার মধ্যেও জরুরি অবস্থা চলেছে৷ জাতীয় স্তরে লকডাইন শিথিল করা পর্যন্ত আইন করে চিড়িয়াখানায় দর্শকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷
দুঃস্থ প্রাণীদের চিড়িয়াখানা!
03:44
এই চিড়িয়াখানা আসলে একটি এনজিও৷ সেখানে শুধু দেশের নিজস্ব প্রাণী দেখা যায়৷ সেগুলির মধ্যে বেশিরভাগকেই প্রতিকূল অবস্থা থেকে বাঁচানো হয়েছে৷ অনেক প্রাণী বিভিন্ন কারণে প্রকৃতির মধ্যে আর স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে না৷ রক্সি লেমাস বলেন, ‘‘কোভিড ১৯ ভাইরাস শুধু চিড়িয়াখানার আয়ের ক্ষতি করেনি, এখানকার কর্মীদেরও ক্ষতি হয়েছে৷ কারণ অর্থের অভাবে আমাদের কর্মীদের কাজের দিন কমাতে হয়েছে৷''
চিড়িয়াখানার সবচেয়ে নতুন আকর্ষণ হলো রেঞ্জার নামের টকটকে লাল রঙের আরা প্রজাতির টিয়াপাখি৷ সেটি আর উড়তে পারে না৷ এটিই সম্ভবত একমাত্র প্রাণী, মাস্ক দেখলে যার কিছু যায় আসে না৷
প্রায় ৪০ বছর আগে শ্যারন মাটোলা এই চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ তবে তিনি এখনকার মতো কখনো এত নিঃসঙ্গ বোধ করেননি৷ শ্যারন বলেন, ‘‘যা ঘটছে, সে বিষয়ে প্রাণীদের কোনো ধারণা নেই, যা সত্যি মজার বিষয়৷ কিন্তু আমাদের তো পরোয়া করতেই হয়৷ কারণ সব প্রাণীকে খোরাক দিয়ে সেগুলির স্বাস্থ্য ভালো রাখা অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ৷ বেলিজের মানুষকে ধন্যবাদ৷ তারা জাগুয়ারদের পছন্দের খোরাক হিসেবে শুকরের মাথা দান করেছে৷''
স্থানীয় কসাইরা মাংসের বর্জ্য অংশগুলি চিড়িয়াখানায় দান করেছেন৷ জাগুয়ারদের কাছে যে খোরাক খুবই সুস্বাদু৷ শুধু মাংস নয়, দান হিসেবে আখ ও ঘাসপাতাও চিড়িয়াখানায় এসেছে, যা দিয়ে একটি টেপিরের প্রায় ৩০ কিলো দৈনিক খোরাক জোগান দেওয়া সম্ভব৷
কাটিয়া ড্যোনে/এসবি
ইউরোপের দারুণ কিছু চিড়িয়াখানা
দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবস্থাপনার গুণে সব কিছুই ভিন্ন মাত্রা পায়৷ ইউরোপের কিছু চিড়িয়াখানা দেখলেও সে-কথা মনে হয়৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু চিড়িয়াখানার কথা, যেগুলো বারবার দেখতে ইচ্ছে করে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/A. Lander
টিয়ারপার্ক হাগেনবেক
জার্মানির হামবুর্গের এই চিড়িয়াখানাটির প্রতিষ্ঠাতা কার্ল হাগেনবেক৷ তাই এর নামও টিয়ারপার্ক হাগেনবেক৷ জার্মান ভাষায় টিয়ার মানে প্রাণী৷ এক সময় বিশ্বের সব চিড়িয়াখানাতেই খাঁচায় পুরে রাখা হতো প্রাণীদের৷ ১৯০৭ সালে হাগেনবেকই প্রথম বেষ্টনীতে ঘেরা পরিখায় প্রাণীদের রাখা শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Bockwoldt
জুম এরলেবনিসভেল্ট
জার্মানির আরেক শহর গেলজেনকির্শেনের এই চিড়িয়াখানাটিতে রয়েছে একদিনে আলাস্কা, আফ্রিকা বা এশিয়ার আদলে গড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে অনেক প্রাণী দেখার সুযোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
বার্লিনের জুয়োলজিক্যাল গার্ডেন
জার্মানির এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে এক হাজার তিনশ প্রজাতির ২০ হাজারেরও বেশি প্রাণী৷ ওপরের ছবির মেরু ভালুকের ছানাটি এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ৷ ওর নাম হ্যার্থা৷ বার্লিনের ফুটবল ক্লাব হ্যার্থা বার্লিন থেকেই ওর নাম রাখা হয়েছে হ্যার্থা৷ ওর স্পন্সরও হ্যার্থা বার্লিন৷ ভালুক ছানা হ্যার্থাও এখন ফুটবল খেলে৷ চিড়িয়াখানায় গেলেই দেখবেন ও ফুটবলে লাথি মেরে মেরে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: Imago/A. Hilse
আলভেটার জু
জার্মান ভাষায় আলভেটার মানে সব আবহাওয়া৷ মিউনিখের এই চিড়িয়াখানা শীত-গ্রীষ্ম সব মৌসুমেই ঘুরে দেখার সুব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
হাইমাট-টিয়ারপার্ক ওল্ডারডিসেন
এই চিড়িয়াখানাটিও জার্মানিতে৷ বিলেফেল্ডের এই চিড়িয়াখানা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এবং এর ভেতরে যেতে কোনো টিকিট কাটতে হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
টিয়ারগার্টেন শ্যোনব্রুন
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন চিড়িয়াখানা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের এই টিয়ারগার্টেন শ্যোনব্রুন৷ ১৭৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানা প্রথম দর্শনার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলেছিল ১৮২৮ সালে৷ সে বছরই প্রথম নিয়ে আসা হয় জিরাফ৷ শীতের দেশ বলে কোনো প্রাণীকে সারা বছর খোলা জায়গায় রাখা যায় না৷ তাই জিরাফের উপযুক্ত উচ্চতার আবাস গড়তে নিতে হয়েছিল বিশেষ উদ্যোগ৷ জিরাফ দেখতে রীতিমতো দর্শনার্থীর ঢল নেমেছিল তখন৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/G. Flegar
এডিনবার্গ জু
এডিনবার্গের এই চিড়িয়াখানার বড় আকর্ষণ নানা ধরনের পেঙ্গুইন৷এই চিড়িয়াখানাই প্রথম পেঙ্গুইন রাখা শুরু করে৷ এখনো সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তারা৷পেঙ্গুইনদের প্যারেড দেখতে প্রতি বছর প্রচুর দর্শক ভিড় করে সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Barlow
লোরো প্রাক টেনেরিফ
স্পেনের টেনেরিফ দ্বীপের এই চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা জার্মানির ভল্ফগাং কিসলিং৷ শুরুতে সেখানে শুধু তোতা পাখি রাখা হতো৷ বিভিন্ন প্রজাতির তোতা পাখি এখনো এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ৷