করোনা সংকট কাটিয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রস্তুতি শুরু ইউরোপে। তবে এখনও ভয়াবহ পরিস্থিতি অ্যামেরিকায়।
বিজ্ঞাপন
চারটি সংখ্যা। তিনটি আশঙ্কার, একটি সামান্য হলেও আশার আলো দেখায়। বিশ্ব জুড়ে করোনার প্রকোপে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেল ২০ লক্ষের আশপাশে। শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কেই মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ১০ হাজার। গোটা বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার জনের। আর আশার কথা, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাড়ে চার লাখ। আশার কথা শুনিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। কী ভাবে বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাপনের দিকে এগোবে মঙ্গলবার তার গাইড লাইন স্থির করে দেওয়ার কথা তাদের। তবে জার্মানি আগামী ১৯ এপ্রিলের পরে ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তোলার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে।
করোনা: এসব গুজবে কান দেবেন না
পুরো বিশ্বে নভেল করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে গুজবের শেষ নেই৷ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমনই কয়েকটি গুজবের জবাব দিয়েছে৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Geisler-Fotopress
১. ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কে করোনা ছড়ায়?
রেডিও তরঙ্গ বা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোন ভাইরাস ছড়ায় না৷ এমন অনেক দেশেই করোনা’র সংক্রমণ হয়েছে, যাদের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
২. রোদের তাপ কি করোনা প্রতিরোধ করে?
তাপমাত্রা যত বেশিই হোক না কেনো, যেকোন তাপমাত্রায় আপনি সংক্রমিত হতে পারেন৷ ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা আছে এমন অনেক দেশেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. van den Bergh
৩. একবার সংক্রমণ, সারাজীবনের সংক্রমণ?
করোনা আক্রান্ত যেকোন মানুষ পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন৷ আপনার লক্ষণ চিনতে হবে এবং সেই বুঝে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে৷ আপনার যদি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে ডাক্তারকে ফোন দিন৷
ছবি: AFP/B.R. Smith
৪. ১০ সেকেন্ডের নাই ভরসা
অনেকে মনে করেন কোনো ধরনের কষ্ট বা কাশি ছাড়া ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় শ্বাস আটকে রাখতে পারলে তার করোনা নেই৷ এই ধারণা ভুল৷ করোনা ভাইরাসের খুব সাধারণ একটি লক্ষণ হল শুকনো কাশি, ক্লান্তি এবং জ্বর৷ কারো কারো ক্ষেত্রে ভয়াবহ ধরনের নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা যায়৷ আপনার উচিত এসব লক্ষণ থাকলে আগে পরীক্ষা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Campodonico
৫. মদে মুক্তি?
বেশি বেশি মদ বা অ্যালকোহল খেলে করোনা প্রতিরোধ হয় না বরং তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.-P. Muller
৬. তীব্র শীতে করোনা মরে?
এটা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে তীব্র শীত বা বরফে করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারে না৷ কারণ বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক না কেনো আপনার শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Ozdil
৭. হ্যান্ড ড্রায়ার করোনা মারে?
না৷ হাত শুকানোর যে মেশিন, করোনা ভাইরাসের উপর তার কোন প্রভাব নেই৷ আপনার যা করণীয় তা হল: বার বার সবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া৷ এরপর টিসু, তোয়ালা বা গরম ড্রায়ার দিয়ে হাত শুকাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/NIAID-RML
৮. নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন কি করোনায় কার্যকর?
না৷ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন যেমন: নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন বা হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি ভ্যাকসিন করোনার ক্ষেত্রে কার্যকর নয়৷ এই ভাইরাস একেবারে নতুন এবং ভিন্ন ধরনের, যার জন্য চাই আলাদা ভ্যাকসিন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় গবেষকরা এ বিষয়ে কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/B. Guan
৯. নাকের ড্রপ কি সংক্রমণ থেকে বাঁচায়?
না৷ এমন কোন তথ্য-প্রমাণ এখনো মেলেনি যে নিয়মিত স্যালাইন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়৷
ছবি: Imago Images/Panthermedia/A. Guillem
১০. করোনা প্রতিরোধে বিশেষ কোন ওষুধ?
করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন ওষুধ নেই৷ কেবল লক্ষণ অনুযায়ী এ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকেরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Geisler-Fotopress
10 ছবি1 | 10
ইউরোপ যখন করোনা সংকটক্রমশ কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিকল্পনা শুরু করেছে, অ্যামেরিকার অবস্থা তখনও ভয়াবহ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি লোকের। শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কেই মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিদিনের মতো সোমবারেও সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এবং প্রতিদিনের মতোই বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। গত কয়েক দিন ধরে ট্রাম্প বার বার প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, ঠিক সময়েই করোনা সংকটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। যদিও দেশের গণমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার পরে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। তার আগে করোনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না তিনি। সোমবার কার্যত নির্বাচনী প্রচারের কায়দায় ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে ট্রাম্প প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, কত দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি। রোববার দেশের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাও অভিযোগ করেছিলেন, ট্রাম্প ব্যবস্থা নিতে দেরি করেছেন। যার জেরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলেও স্বভাবসুলভ হুমকি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। সোমবার অবশ্য প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে সরানোর প্রশ্ন উঠছে না।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতদের গণকবর
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিদিন। লাশ এত বেশি যে কবর দেয়ার জন্য নিতে হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। ড্রোন থেকে তোলা ছবিতে তারই কিছু মুহূর্ত...
ছবি: Reuters/L. Jackson
ভয়াবহ বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র
করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে নেমেছে বিপর্যয়৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্রাটা অনেক বেশি৷ ভাইরাসটির প্রাদূর্ভব প্রথমে চীনে দেখা গেলেও চীন পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে৷ এশিয়া থেকে ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়লে শুরুতে মৃত্যুর সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল ইতালি, ঠিক পেছনেই ছিল স্পেন৷ কিন্তু এখন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মৃতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়েছে সেখানে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
'মৃত্যুপুরী' নিউইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নিউইয়র্কের৷ গোটা দেশের মোট আক্রান্তের ৩৪ ভাগই নিউইয়র্কের৷ ফলে করোনায় মৃতদের জন্য এখন আর কবর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ গণকবর দেয়া শুরু করতে হয়েছে বাধ্য হয়ে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
কেন এই গণকবর
যে হারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যু হচ্ছে, সেই হারে আলাদাভাবে সবাইকে কবর দেয়ার জায়গা এবং এত বড় কর্মযজ্ঞে শরিক হওয়ার মতো লোকবলের অভাব রয়েছে৷ তাই বহু মানুষকে কবর দেয়া হচ্ছে একসঙ্গে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
কোথায় এই গণকবর?
মৃত্যুহার খুব দ্রুত কমাতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রে কত জায়গায় গণকবরের ব্যবস্থা করতে হবে তা এখন বলা মুশকিল৷ তবে নিউইয়র্কের হার্ট আইল্যান্ডের অন্তত একটি গণকবরের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
কবর খোঁড়ার ধুম
ড্রোন থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, হার্ট আইল্যান্ডে করোনা ভাইরাসে মৃতদের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ চলছে পুরোদমে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
শেষ বিদায়ে 'একা'
মৃতদের হাসপাতাল থেকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গণকবরে৷ সংক্রমণ এড়াতে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের অনুপস্থিতিতেই দেয়া হচ্ছে কবর৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
সারি সারি কবর, থরে থরে কবর
লম্বা লাইনে অনেক মৃতদেহ পাশাপাশি কবর দিয়েও চলছে না, হাট আইল্যান্ডে কয়েক স্তরে কবর দেয়া হচ্ছে করোনায় মৃতদের৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
7 ছবি1 | 7
এ দিকে জার্মান প্রশাসন মনে করছে তারা করোনা সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। জার্মানির বিশেষজ্ঞরা প্রশাসনকে জানিয়েছেন, সব ঠিক থাকলে আগামী ১৯ এপ্রিলের পরে ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তোলা যেতে পারে। খোলা যেতে পারে স্কুল, কলেজ, অফিস, রেস্তোরাঁ। তবে সবটাই ধীরে সুস্থে করা হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে কি না, সে দিকেও নজর রাখা হবে।
মঙ্গলবারই নতুন অ্যাডভাইসারি জারি করতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। লকডাউনে থাকা দেশগুলি কী ভাবে একে একে নিষেধাজ্ঞা তুলবে, কোন কোন দিকে নজর রাখতে হবে, সে বিষয়েই বিশদে জানানোর কথা তাদের। সোমবার বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকে সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, বিশ্ব জুড়ে করোনার প্রকোপ এখন আয়ত্তের মধ্যে। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের একটি কাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। টেস্ট হচ্ছে। রোগীদের আইসোলেশনে রেখে সুস্থ করাও সম্ভব হচ্ছে। আরও একটি জরুরি কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য নতুন জীবনযাপনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে।
এ দিকে এরই মধ্যে চীন জানিয়েছে, চলতি মাসেই করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক ভাবে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করতে পারে তারা। এ বিষয়ে দেশের সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত মিলেছে। বেজিংয়ের একটি সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। পরীক্ষা সফল হলে এটাই হবে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন।