যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবেলায় রীতিমত হিমশিম খাওয়া বরিস জনসন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে বিরোধী দলগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের যে কয়েকটি দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে তার অন্যতম যুক্তরাজ্য৷ জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যানুযায়ী বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্ত এক লাখ ৩০ হাজার ১৮৪ জন এবং মোট মৃত্যু ১৭,৩৩৭ জন৷ খোদ প্রধানমন্ত্রী জনসন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং চিকিৎসা নিতে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে৷
জনসন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা দেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে৷ যথেষ্ট টেস্টও করাতে পারেনি, এমনকি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটেক্টিভ গিয়ার পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারেনি৷ যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশে চিকিৎসাকর্মীদের পলিথিন ব্যাগ পরে করোনা আক্রান্তদের সেবা দিতে হয়েছে৷ যে কারণে সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত হওয়ায় হারও অনেক বেশি৷ কয়েকজন মারাও গেছেন৷
জার্মানিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জীবন
করোনা-সংকট সত্ত্বেও জার্মানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে ফেরার উদ্যোগ শুরু করছে৷ প্রথম পর্যায়ে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে৷ তবে প্রতিটি রাজ্য এ ক্ষেত্রে নিজস্ব পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
নতুন করে দৈনন্দিন জীবনের স্বাদ
প্রায় এক মাস কড়কড়ির পর জার্মানির মানুষ আবার কিছু স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছেন৷ কিন্তু দেশের সব প্রান্তে বিধিনিয়ম এক নয়৷ ১৬টি রাজ্য এ বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ কিছু রাজ্যে ২০শে এপ্রিল থেকে ৮০০ বর্গ মিটারের কম আয়তনের দোকানপাট খোলা হয়েছে৷ তবে এমন অভিজ্ঞতার জন্য বার্লিনের মতো কিছু রাজ্যের মানুষকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: Reuters/A. Gebert
যত মত, তত পথ
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া অবিলম্বে দোকানবাজার খোলার পথ বেছে নিয়েছে৷ বন শহরের অনেক মানুষ চুটিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন৷ আরো এক ধাপ এগিয়ে এ রাজ্যে এমনকি হবু মায়েদের প্রয়োজনীয় পণ্যের বড় দোকান খোলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
সাইকেল কেনার উৎসাহ
ডিন্সলাকেন শহরে সোমবার সাইকেলের দোকান খোলার পর নতুন সাইকেল কেনার আশায় অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন৷ জার্মানির সব রাজ্যেই সাইকেল, বই ও গাড়ির দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ অন্যান্য দোকানের মতো এ ক্ষেত্রে আয়তন সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না৷
ছবি: Getty Images/L. Baron
ব্যবসা-বাণিজ্য আবার চালু
দোকানের মালিকরা আবার ক্রেতাদের স্বাগত জানাতে পেরে খুবই সন্তুষ্ট৷ বসন্ত উপলক্ষ্যে কিছু ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের লুডভিগসবুর্গ শহরে এক দোকানের সামনে লেখা আছে ‘‘আমরা ফিরে এসেছি৷ আপনাদের আবার দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFPT. Keinzle
আবার স্কুলে ফেরার আনন্দ
কিছু রাজ্যে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে আবার স্কুলে ফিরতে পারছে৷ বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গ ও স্যাক্সনি রাজ্য বেশি বয়সের শিক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি ও মূল পরীক্ষার জন্য সোমবার থেকে স্কুল ভবনে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে৷ জার্মানির বেশিরভাগ রাজ্যে ৪ঠা মে থেকে শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ পাবে৷ শুধু বাভেরিয়া রাজ্যে ১১ই মে পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Michael
চিড়িয়াখানা ও মিউজিয়ামও দরজা খুলছে
কড়াকড়ির কারণে জার্মানির চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ কয়েকটি রাজ্যে সেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে৷ মেকলেনবুর্গ-ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ ও রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্য চিড়িয়াখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই তিনটি এবং আরো কিছু রাজ্যে মিউজিয়ামও খোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Kuegeler
মাস্ক পরার চল বাড়ছে
কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় প্রকাশ্যে মাস্ক পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জার্মানির কিছু অঞ্চলে অবশ্য আরো বেশি মাস্ক-পরা মানুষ চোখে পড়ছে৷ দেশজুড়ে বাধ্যতামূলক না হলেও কয়েকটি রাজ্য ও পৌর কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম চালু করছে৷ যেমন স্যাক্সনি রাজ্যে এপ্রিল মাস থেকে ট্রাম-বাস বা ট্রেনে এবং দোকানবাজারে মাস্ক পরা অথবা অন্য কোনো উপায়ে মুখ ও নাক ঢাকা বাধ্যতামূলক৷ বাভেরিয়াসহ আরো কিছু রাজ্যেও এমন নিয়ম চালু হয়েছে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
ব্যবধান বজায় রাখুন!
গোটা দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷ বাসার মানুষ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে৷ যে সব দোকান খোলা হচ্ছে, সেখানেও নানাভাবে ক্রেতাদের মধ্যে এই দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/L. Baron
8 ছবি1 | 8
ইউরোপে বিশেষ করে ইটালি, স্পেন ও ফ্রান্সে যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল এবং বিস্তার রোধে দেশগুলোর সরকার কড়াকড়ি আরোপ করছিল, তখনও জনসন দেশজুড়ে যাতায়াত ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিপক্ষে ছিলেন৷
পরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ এ যুক্তরাজ্যে তিন লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করলে জনসন লকডাউন ঘোষণা করেন৷
সময়মত ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভেন্টিলেটর স্কিম’ এ যোগ দিতে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়েজনীয় সুরক্ষা যন্ত্রের যোগান দিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় কাঁধে নিয়ে জনসন সরকার অবশ্য এর কারণ বোঝাতে জটিল একটি ব্যাখ্য দিয়েছে৷ তবে বিরোধী দলগুলো তাদের এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নয়৷
বুধবার এক বিবৃতিতে লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের ভারপ্রাপ্ত নেতা ইডি ডেভি বলেন, ‘‘বৈশ্বিক এই মহামারিতে সরকার যেভাবে সড়া দিয়েছে অবশ্যই তার আনুষ্ঠানিক তদন্ত হওয়া উচিত৷
‘‘কেন সরকার আশ্চর্যজনকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা যন্ত্র দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, তার সত্যি কারণ জানাতে জনসন সরকারকে সুযোগ দেওয়া উচিত৷ দিন দিন সবার মনেই এই প্রশ্ন জাগছে৷’’
বিরোধী লেবার পার্টির নেতা কির স্টারমারও মনে করেন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সরকার পিছিয়ে ছিল এবং একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যকে এই সংকটে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখতে হবে৷