মঙ্গলবার থেকে দুই দিনের পরিবেশ সম্মেলনের প্রাক্কালে জার্মানিসহ একাধিক দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার উপর জোর দিচ্ছে৷ করোনা সংকটের পর অর্থনীতি চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দাবি বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের মাঝে জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কার আছে? আসলে এই সংকটের ফলে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা করার প্রশ্নেই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বিষয়টি উঠে আসছে৷ বিজ্ঞানীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে স্থির করা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য হাতে বেশি সময় নেই৷ বিশেষ করে করোনা সংকটের কারণে জাতিসংঘের কপ২৬ পরিবেশ সম্মেলন ২০২১ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেবার ফলে এই আশঙ্কা আরো বাড়ছে৷ পরিবেশবাদীরাও শিল্পক্ষেত্রে দূষণের মাত্রা সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ তাঁদের মতে, এমন সব কোম্পানি সরকারি আর্থিক সহায়তা নিতে এগিয়ে আসছে, যেগুলি অতিরিক্ত দূষণের জন্য কুখ্যাত৷ গ্রিনপিস সংগঠনের মতে, পেট্রোলিয়াম, বেসামরিক বিমান চলাচল ইত্যাদি শিল্প করদাতাদের অর্থ কাজে লাগিয়ে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে৷
মঙ্গলবার ‘পিটার্সবার্গ ক্লাইমেট ডায়ালগ' নামে পরিচিত ৩০টি দেশের পরিবেশমন্ত্রীদের ভারচুয়াল সম্মেলনের প্রাক্কালে জার্মানির মতো কিছু দেশ ‘গ্রিন রিকভারি' বা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ভিত্তিতে অর্থনীতি চাঙ্গা করার প্রস্তাব দিয়েছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস-ও এই সম্মেলনে অংশ নেবেন৷
সম্মেলনের প্রাক্কালে জার্মানির পরিবেশমন্ত্রী স্ভেনিয়া শুলৎসে সংবাদ সংস্থা এপি-কে বলেছেন, আগের অবস্থায় ফিরে না গিয়ে করোনা-সংকট পরবর্তী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছরে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত৷ ভবিষ্যতে এমন ‘ফিউচার প্রুফ' কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন৷ গাড়ি শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলতে অর্থনৈতিক প্রণোদনার অর্থ ব্যয় করে ইলেকট্রিক গাড়ি কেনায় উৎসাহ দেবার পক্ষে সওয়াল করেন শুলৎসে৷
জার্মান পরিবেশমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, করোনা ভাইরাসের টিকা এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব না হলেও জলবায়ু সংকটের প্রতিষেধক কী, তা সবাই জানে৷ তাঁর মতে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি, বিদ্যুৎচালিত যানের ভিত্তিতে পরিবহণ, রিসাইক্লিং এবং বাসস্থানে জ্বলানি সাশ্রয়ের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব৷
দুই দিনের সম্মেলনের সহ-আয়োজক ব্রিটেনের পরিবেশমন্ত্রী অলোক শর্মা বলেন, করোনা মহামারির মোকাবিলা করতে গোটা বিশ্বকে একযোগে কাজ করতে হবে৷ তাঁর মতে, এমন পুনরুদ্ধার কর্মসূচির প্রয়োজন, যা হবে পরিবেশবান্ধব এবং মজবুত এবং তাতে সবাইকে শামিল করতে হবে৷
বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ সোমবার ৬৮টি কোম্পানি এক যৌথ বিবৃতিতে করোনা সংকট কাটাতে অর্থনৈতিক প্রণোদনার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়টি যুক্ত করার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে৷
এসবি/এসিবি (এপি, রয়টার্স)
কার্বন নিঃসরণের দায় কাদের
মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের দিক থেকে দায়ীদের মধ্যে শীর্ষে মধ্যপ্রাচ্য আর শিল্পোন্নত দেশগুলো৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও বা হু), ইউনিসেফ এবং দ্য লেনসেট গঠিত একটি কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই ছবিঘরটি তৈরি৷
ছবি: Imago/CoverSpot/B. Lauter
মাথাপিছু ৪৯ কেজি কার্বন!
বিশ্বে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ কাতার৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির মানুষ বছরে গড়ে ৪৯ টন কার্বন ছড়ানোর জন্য দায়ী৷ ২০৩০ সালের বৈশ্বিক এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তাদের কার্বন ব্যবহার ১৭১৬ ভাগ বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Valat
দ্বীপপুঞ্জে কার্বন
ক্যারিবিয়ান সমুদ্রের বেশ কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগো৷ মাত্র ১৩ লাখ জনগোষ্ঠীর দেশটি কার্বন নিঃসরণে কম যায় না৷ মাথাপিছু ২৯ টনেরও বেশি কার্বন পোড়ায় তারা৷ ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৯৮ ভাগ পিছিয়ে তারা৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/Y. Levy
কুয়েতিরা তৃতীয়
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণে বিশ্বে তৃতীয়৷ দেশটির মানুষ মাথাপিছু ২৫ টনের বেশি কার্বন ব্যবহার করেন প্রতিবছর৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/G. Hellier
প্রথম দশের পাঁচটিই মধ্যপ্রাচ্যের
কুয়েতের পরই কার্বন ব্যবহারে এগিয়ে বাহরাইন৷ তাদের মাথাপিছু নিঃসরণের পরিমাণ ২৩ টন৷ এরপরের অবস্থানে সৌদি আরব৷ দেশটির মাথাপিছু কার্বন ব্যবহার ১৯ টন৷ সবমিলিয়ে প্রথম পাঁচটি দেশই মধ্যপ্রাচ্যের৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/AGF
প্রথম দশে যুক্তরাষ্ট্র
মাথাপিছু কার্বন ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অষ্টম৷ দেশটির মানুষ গড়ে ১৬ টন কার্বন ব্যবহার করে৷ এসডিজি লক্ষ্য অর্জন করতে হলে তা ৫০০ ভাগ হ্রাস করতে হবে৷ যুক্তরাষ্ট্রের উপরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Camp
ইউরোপের শীর্ষে এস্তোনিয়া
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি কার্বন ব্যবহারকারী এস্তোনিয়া৷ শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থান ১৩তম৷ ১৭তম অবস্থানে আছে রাশিয়া, ১৮তম আইসল্যান্ড আর ২০তম জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance / Uwe Gerig
পরিবেশবান্ধব আফ্রিকা
বিশ্বের সবচেয়ে পরিবাশবান্ধব দেশগুলোর অবস্থান আফ্রিকা মহাদেশে৷ সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ বুরুন্ডি৷ মাথাপিছু মাত্র দশমিক শূন্য-পাঁচ টন৷ একই পরিসংখ্যান চাদ কিংবা সোমালিয়ার ক্ষেত্রেও৷ সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরনকারী ১৯টি দেশই এই মহাদেশের৷
ছবি: imago images/imagebroker/F. Wagner
বাংলাদেশ ৩৯তম
সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ করা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ৩৯তম৷ বছরে মাথাপিছু দশমিক ৫৩টন কার্বন ব্যবহার করে এই দেশের মানুষ৷ এসডিজিতে বেঁধে দেয়া মাত্রার চেয়েও যা আশিভাগ কম৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
দক্ষিণ এশিয়ায় পরিবেশবান্ধব নেপাল
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাথাপিছু সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ নেপাল৷ তাদের অবস্থান ২৬তম৷ অন্যদিকে এই অঞ্চলে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ ভারত৷ দেশটির মানুষ গড়ে এক দশমিক আট-চার টন কার্বন ছড়ানোর জন্য দায়ী৷ তবে মাত্রাটি এখনও এসডিজি লক্ষ্যের চেয়ে বেশ খানিকটা কম৷