বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা করোনা সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন৷ বিদেশ-ফেরত মানুষের উপর কড়াকড়ি এবং মাস্ক না পরলে জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সাফল্য যে চিরস্থায়ী হয় না, নিউজিল্যান্ডের মতো অনেক দেশের ক্ষেত্রে তা প্রমাণিত হচ্ছে৷ জার্মানিও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এতকাল করোনা সংকট নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে৷ তবে বেড়ে চলা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে আবার কড়াকড়ি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতারা৷ বৃহস্পতিবার দীর্ঘ বৈঠকের পর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এমনই পূর্বাভাষ দিলেন৷ তবে নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করে সব ক্ষেত্রে গোটা দেশজুড়ে একই পদক্ষেপ চালু করতে ব্যর্থ হলেন তাঁরা৷
যেসব বিষয়ে উপস্থিত নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন, তার মধ্যে বিদেশ ফেরত মানুষের করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে৷ গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় পর্যটনের কারণে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণবাড়ায় বাধ্যতামূলক পরীক্ষা ছাড়াও কোয়ারেন্টাইনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ দেশে প্রবেশের পর বিচ্ছিন্ন থাকার পাঁচ দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষার নেতিবাচক ফল হলে তবেই প্রকাশ্যে বের হওয়া যাবে৷ জেনেশুনে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণ করলে সরকার ভবিষ্যতে কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে না৷ এমন সব যাত্রী ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার সুবিধাও নিতে পারবেন না৷ খুঁটিনাটি বিষয়গুলির নিষ্পত্তির পর সম্ভবত ১লা অক্টোবর থেকে নতুন পদক্ষেপগুলি কার্যকর করা হবে৷
গণপরিবহণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ ইত্যাদি বদ্ধ জায়গায় নিয়ম মেনে মাস্ক না পরলে কমপক্ষে ৫০ ইউরো জরিমানা চালু করা হচ্ছে৷ পূবের স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্য ছাড়া গোটা দেশে এই নিয়ম চালু করা হচ্ছে৷ ফুটবল ম্যাচ ও অন্যান্য বড় অনুষ্ঠানে দর্শক সমাগম বছরের শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ রাখা হবে৷
আলোচনার শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যার্কেল বলেন, গ্রীষ্মকাল জুড়ে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলায় বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ তিনি সংক্রমণ বাড়ার দুইটি প্রধান কারণ তুলে ধরেন৷ বিদেশ ফেরত মানুষ ছাড়াও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্তরে অতিথি সমাগমকেও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন৷ তিনি বদ্ধ জায়গায় সর্বোচ্চ ২৫ জন ও খোলা জায়গায় সর্বোচ্চ ৫০ জনের সমাগমের প্রস্তাব দিলেও সে বিষয়ে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি৷ ম্যার্কেল দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে সম্ভব হলে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে না যাবার আবেদন করেন৷ বাভেরিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার বলেন, ‘‘করোনা জার্মানিতে ফিরে এসেছে এবং আমাদের সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে৷’’ মাস্ক পরার নিয়ম প্রথমবার লঙ্ঘন করলে তিনি নিজের রাজ্যে ২৫০ ইউরো জরিমানা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
আসন্ন হেমন্ত কালের আগে কড়াকড়ি কার্যকর করে করোনা ভাইরাসের ‘দ্বিতীয় ঢেউ' প্রতিরোধ করতে জার্মানি৷ সেটা সম্ভব না হলে আবার নতুন করে লকডাউনের মতো কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আশঙ্কা বাড়ছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
করোনা-কালে বেহাল জার্মান অর্থনীতি
করোনা-কালে জার্মান অর্থনীতির অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার আভাস মিলেছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Welz
টোল সংগ্রহ কমছে
রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাকের পরিমাণ বুঝিয়ে দেয় দেশের অর্থনীতি কোন পথে চলছে। পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কম মানে, জিনিসের চাহিদা কমছে। প্রতি বছর পণ্যবাহী ট্রাকের থেকে টোল আদায় করে সরকার। এর থেকে সরকার ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করে। করোনা কালে জার্মানিতে টোল সংগ্রহ চোখে পড়ার মতো কমেছে।
ছবি: Imago Images/M. Stein
উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ
মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জার্মানিতে লকডাউন ছিল। ফলে ওই সময় জার্মান কারখানাগুলিতেও কাজ কম হয়েছে। করোনাকালে জার্মানিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জার্মানিতে ২০২০ সালের শেষে বিদ্যুতের চাহিদা ২০১৯ এর তুলনায় ১০ শতাংশ কম হবে। তবে শিল্প উত্পাদন আস্তে আস্তে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
ছবি: MEHR
ম্যাপ অ্যাপের ব্যবহার কমেছে
অ্যাপল এবং গুগলের মতো সংস্থাগুলি গুগল ম্যাপের মতো অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা দেয়। এই অ্যাপগুলি থেকে মানুষের জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এ বছরের ডেটা বলছে, মার্চে লকডাউন হওয়ার পর থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি জার্মান ম্যাপ অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা বাড়ির বাইরে খুব বেশি বেরচ্ছেন না। এর থেকে প্রমাণ হয়, করোনার কারণে জার্মানদের গতিশীলতা আগের চেয়ে অনেকটা কমে গিয়েছে।
ছবি: picture alliance/dpa/U.Zucchi
রেস্তোঁরা বুকিং
মার্চ মাসে অনলাইন সার্ভিস সংস্থা 'ওপেন টেবিল' একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের গোড়ায় অনলাইনে রেস্তোরাঁ বুকিং চোখে পড়ার মতো কমেনি। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়ার পরে এবং লকডাউন হওয়ার পরে বুকিং কার্যত শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রায় সমস্ত রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জুলাই থেকে অবশ্য রেস্তোরাঁ আবার খুলতে শুরু করেছে। তবে এখনও বুকিং আগের মতো হচ্ছে না।
ছবি: Reuters/A. Gebert
বিমান চলাচলে সমস্যা
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জার্মানি থেকে প্রায় দেড় কোটি যাত্রী দেশে এবং বিদেশে যাতায়াত করেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যত শূন্য হয়ে যায়। ফ্লাইট ট্র্যাকার ফ্লাইটারাডার ২৪ নামক একটি সংস্থা সমীক্ষা করে দেখিয়েছে, বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে বিশ্বজুড়ে কী পরিমাণ বিমান হ্যাঙারে ঢুকে গিয়েছে। তাদের সমীক্ষা বলছে, গত বছরের তুলনায় করোনাকালে গোটা বিশ্বে অন্তত ৭৫ হাজার বিমান কম উড়েছে।
ছবি: picture-alliance/M. Mainka
বেকারত্বের সমস্যা
অর্থনৈতিক সংকটের আরও বড় একটি সূচক হলো বেকারত্ব। জার্মানিতে বেকারের সংখ্যা ছিল চার লাখ ১৫ হাজার। এপ্রিলে তা এক লাফে ২৫ লাখে পৌঁছে যায়। কারণ, বহু ছোট সংস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে জার্মান সরকার বেকার ভাতা দিয়ে এই সমস্যাকে অনেকটাই হাতের মধ্যে রাখতে পেরেছে। অন্য বহু দেশের মতো জার্মান বেকারদের সমস্যায় পড়তে হয়নি।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন
করোনাকালে গাড়ি কেনা বেচাও চোখে পড়ার মতো কমেছে জার্মানিতে। মার্চ মাসে গাড়ি বিক্রি ৩৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এপ্রিল মাসে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এপ্রিলের তুলনায় এ বছর ৬১ শতাংশ গাড়ি কম বিক্রি হয়েছে। মনে রাখা দরকার, গাড়ি শিল্পে জার্মানি পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এসজি/জিএইচ (ডিডাব্লিউ)