জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মঙ্গলবার দেশে করোনা মহামারি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে আরো কড়া বিধিনিয়ম ঘোষণা করেছেন৷ নতুন ফর্মুলার ভিত্তিতে আঞ্চলিক পর্যায়ে সেই সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের মাঝেও এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি মোটামুটি ভালোভাবেই সামলাতে পেরেছে জার্মানি৷ কিছু বিধিনিয়ম সত্ত্বেও জনজীবন মোটামুটি স্বাভাবিক ছন্দে চলছে৷ স্বাস্থ্য পরিষেবার অবকাঠামোর উপর কোনো বাড়তি চাপ দেখা যাচ্ছে না৷ কিন্তু সংক্রমণের হার বেড়ে চলায় সরকার বার বার গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সংকট সামলাতে নতুন কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা করলেন৷
জার্মানির সব প্রান্তে করোনা সংক্রমণের হার এক না হওয়ায় সরাসরি কোনো সাধারণ বিধিনিয়ম সম্পর্কে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছিলেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা৷ অবশেষে মঙ্গলবার একটা রফা হয়েছে৷ সেই বোঝাপড়ার আওতায় এবার থেকে গোটা দেশজুড়ে নির্দিষ্ট ফর্মুলার ভিত্তিতে একই পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ অর্থাৎ ঢালাও লকডাউনের বদলে স্থানীয় পর্যায়ে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
কোনো অঞ্চলে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে কতজন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে বিধিনিয়ম স্থির করা হচ্ছে৷ সংখ্যাটা ৩৫-এর বেশি হলে হলে বদ্ধ ঘরের মধ্যে ৫০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক স্তরে কোনো উৎসব-অনুষ্ঠানে ২৫ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে সরকার৷ আক্রান্তদের সংখ্যা ৫০ পেরিয়ে গেলে সমাবেশের ঊর্দ্ধসীমা ২৫ রাখা হবে এবং বাসভবনে ১০ জনের বেশি মানুষ যাতে একত্র না হন, সেই পরামর্শ দেওয়া হবে৷ প্রশাসনের পক্ষে কারো বাসভবনে প্রবেশ করে মানুষ গোনা সম্ভব নয় বলে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্য সেই পরামর্শ মেনে চলার আবেদন করেন ম্যার্কেল৷ তবে আগে থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অনুষ্ঠান নথিভুক্ত করলে এবং কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অঙ্গীকার করলে এই নিয়মের ব্যতিক্রম করা হবে৷
ম্যার্কেল এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের আচরণের উপর করোনা মহামারির গতিপ্রকৃতি অনেকটাই নির্ভর করবে৷ তাঁরা বলছেন, এখনো কোনো ওষুধ বা টিকা না থাকায় করোনা ভাইরাস মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে৷ তাই বিধিনিয়ম শিথিল করার সময় আসে নি৷ স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে বিঘ্ন সত্ত্বেও বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে সে সব মেনে চলতে হবে৷
পরিস্থিতি সামলাতে একাধিক রাজ্য নিয়ম ভাঙলে বড় অঙ্কের জরিমানা স্থির করছে৷ বার্লিনে একটি জায়গায় নাচের পার্টি আয়োজন করায় রাজ্য সরকার আয়োজকদের ৫,০০০ ইউরো জরিমানা করেছে৷ উত্তরে শ্লেসভিক হলস্টাইন রাজ্যে রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে ভুল নাম-ঠিকানা লিখলে ১,০০০ ইউরো জরিমানা করা হচ্ছে৷ অন্য রাজ্যে সেই অঙ্ক অবশ্য ৫০ ইউরোয় সীমিত রাখা হয়েছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
১৫ সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
বার্লিনে করোনার ঝুঁকি দূরে রেখে আলোর উৎসব
প্রতি বছরের মতো এবারও বার্লিনে শুরু হয়েছে ‘ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস’৷ করোনা সংকট এই উৎসবে যোগ করেছে কিছু ভিন্নতা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
ব্রান্ডেনবুর্গ গেট
১৫ বছর পেরিয়ে এ বছর বার্লিনের ‘ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস’ পা দিলো ১৬ বছরে৷ এই উৎসবের মূলে থাকে শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান৷ এৱ মধ্যে অবশ্যই রয়েছে বিখ্যাত ব্রান্ডেনবুর্গ গেট৷ আলো দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেড়ে গেলে কিছুক্ষণের জন্য আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ভিড় কম হয়৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/S. Yuqi
জাদুঘরের সমাহার যেখানে...
জার্মানির সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য বার্লিনের এই টিভি টাওয়ার৷ আলোর উৎসব থেকে বাদ পড়েনি এটিও৷ বেশ কিছু জাদুঘর রয়েছে শহরের ‘মিউজিয়াম আইল্যান্ড’ অঞ্চলে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সচেতনতা প্রকল্পের আওতায় এবার টিভি টাওয়ারসহ বেশ কিছু স্থাপত্যের গায়ে জ্বলবে কমলা আলো৷ এই আলো বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতার প্রতীক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chr. Gateau
বার্লিন ক্যাথিড্রাল
মিউজিয়াম আইল্যান্ডের অদূরে বার্লিন ক্যাথিড্রাল৷ বেশ কিছুদিন ধরে সংস্কার কাজ চলছিল সেখানে৷ সেখানেও চলছে আলোর উৎসব৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/S. Yuqi
বেবেলপ্লাৎজ
ঐতিহ্যবাহী বেবেলপ্লাৎজে হাঁটলে মনে হবে যেন কোনো অসাধারণ শিল্পকর্মের মাঝখানে হেঁটে বেড়াচ্ছেন৷ এবারের উৎসবের ‘একসাথে জ্বলবো আমরা’ স্লোগানের সঙ্গে মিল রেখে সেজে উঠেছে বেবেলপ্লাৎজের হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট অপেরা ও বিখ্যাত হোটেল ডে রোম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chr. Gateau
অপেরা
জার্মানি-ইসরায়েল সম্পর্কের ৫৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইসরায়েল দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আলোকিত করা হয়েছে বার্লিন স্টেট অপেরাকে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/S. Yuqi
হোটেল ডে রোম
উনিশ শতকের শেষের দিকে তৈরি হওয়া এই বাড়িটি যাত্রা শুরু করে ড্রেসডেনার ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসাবে৷ পরে ২০০৬ থেকে এটি অবশ্য হোটেল৷ এর মূল আকর্ষণ ছাদ থেকে পাওয়া বার্লিনের অসামান্য চিত্র, যা এই আলোর উৎসবের সময়ে পর্যটকদের নজর কাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/S. Yuqi
হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ
বেবেলপ্লাৎজের অন্যতম অংশ হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ভবন৷ আঠারো শতাব্দীতে এই বাড়িটি তৈরির নির্দেশ দেন প্রাশিয়ান রাজা ফ্রেডেরিক৷ ১৯৬৯ সালে হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ভবনের মর্যাদা পাবার আগ পর্যন্ত এটি ছিল পাঠাগার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chr. Gateau
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বাদ যায়নি
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবনটিও সেজেছে উৎসবের আলোয়৷ সহনশীলতা ও সামাজিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে এবারের আলোর ডিজাইন বেছে নিয়েছেন চিত্রশিল্পী কার্স্টেন জান্ডের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chr. Gateau
শার্লটেনবুর্গ প্রাসাদ
করোনা সংকটের মাঝে মানুষের ভিড় যাতে শহরের একটি অংশেই সীমিত না থাকে, তা নিশ্চিত করতে এই উৎসবকে শহরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ শহরের কেন্দ্র থেকে একটু দূরের শার্লটেনবুর্গ প্রাসাদ ও বের্গগ্রুয়েন জাদুঘরের আলোর সাজ সেই উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
পটসডামার প্লাৎজ
প্রতি বছরের মতো এবারও আলোর উৎসবের প্রাণকেন্দ্র বার্লিনের পটসডামের প্লাৎজ৷ এবারের আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে বিশাল এক ‘লাভ সাইন’, যা অস্ট্রেলিয়ান শিল্পী জারা পাসফিল্ডের সৃষ্টি৷