করোনা সংকটের মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও ঐক্যের উদ্যোগ নিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ তবে সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনের বাৎসরিক সম্মেলনের উপর অন্য কিছু অপ্রিয় বিষয় কালো ছায়া ফেলছে৷
বিজ্ঞাপন
চলতি বছর করোনা সংকটের কারণে ডাব্লিউএইচও-র ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্রের বাৎসিরক সম্মেলন অনলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ করোনা ভাইরাস মোকাবিলার বিষয়টি আপাতত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে৷ কিন্তু করোনা সংকটকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বেড়ে চলা সংঘাত মূল অ্যাজেন্ডা কিছুটা ম্লান করে দিচ্ছে৷ চীনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’-র দায়ে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল৷ এবার চীনকে কোণঠাসা করতে তাইওয়ানকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে সম্মেলনে অংশগ্রহণের অনুমতির জন্য চাপ দিচ্ছে ওয়াশিংটন৷ চীনের আপত্তিতে গত তিন বছর ধরে তাইওয়ান সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল৷ জাপান, জার্মানিসহ বেশ কিছু দেশও তাইওয়ানের অংশগ্রহণের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে৷ তবে এ যাত্রায় তাইওয়ানের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে৷
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে তাইওয়ানের সাফল্য গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে৷ তাই সে দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেবার চেষ্টা করছে অনেক দেশ৷ অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ও প্রসার রুখতে ব্যর্থতার কারণে প্রবল সমালোচনার মুখে রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকার লাগাতার আক্রমণের মুখে সে দেশের ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যকলাপের উপরও এই সংঘাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডাব্লিউএইচও সম্ভবত এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে নি৷ সংস্থার প্রধান টেড্রস আদানম গেব্রেয়েসুস এই সম্মেলনকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ কিন্তু ওয়াশিংটন ও বেইজিং-এর সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগে সম্মেলনে একটি প্রস্তাব আনা হচ্ছে, যার আওতায় করোনা সংকটের ফলে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও সার্বিক মূল্যায়নের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ সেইসঙ্গে আরও বেশি মানুষের জন্য পরীক্ষার সুযোগ, চিকিৎসার সরঞ্জাম, সম্ভাব্য চিকিৎসা ও টিকার প্রচেষ্টার ডাক দেওয়া হয়েছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে বিশেষ করে অ্যামেরিকার সমালোচনা সত্ত্বেও ইইউ এই প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ঐকমত্যের আশা করছে৷ সে ক্ষেত্রে করোনা সংকটের মোকাবিলার ক্ষেত্রে কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চ এই প্রথম সর্বসম্মতিক্রমে কোনো প্রস্তাব অনুমদিত হবে৷
শুধু চীন নয়, করোনা সংকটকে কেন্দ্র করে ইইউ-র সঙ্গেও অ্যামেরিকার সংঘাত দেখা যাচ্ছে৷ টিকা আবিষ্কৃত হলে সবার আগে সেটি হাতে পেতে চায় ওয়াশিংটন৷ অন্যদিকে ইইউ গোটা বিশ্বে যত দ্রুত সম্ভব সেই টিকা পৌঁছে দেবার পথ খুঁজছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)
২৭ এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...
বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে ভারত এখন তৃতীয়
সুইডেনের ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ বা সিপ্রি ২০২১ সালে সামরিক খাতে বিভিন্ন দেশের খরচের তথ্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভারত তৃতীয়
২০২১ সালে ভারতের সামরিক ব্যয় ছিল ৭৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন, যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০২০ সাল থেকে এই ব্যয় শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০১২ সালের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ।
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ৮০১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম। প্রতিবেদন মতে, ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নে খরচ বাড়িয়েছে ২৪ শতাংশ এবং অস্ত্র কেনায় খরচ কমিয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
ছবি: picture-alliance/A. Widak
চীন দ্বিতীয়
তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ চীন ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ২৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
ছবি: Reuters
চতুর্থ যুক্তরাজ্য
তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য গত বছর সামরিক খাতে খরচ করেছে ৬৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৩ শতাংশ কম।
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পঞ্চম রাশিয়া
পঞ্চম অবস্থানে থাকা রাশিয়া ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ৬৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। সেসময় রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনের সীমান্তে সামরিক স্থাপনা তৈরি করছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ছবি: picture-alliance/TASS/A. Demianchuk
ছয় নেমে গেছে সৌদি আরব
আগের তালিকায় তিন নম্বরে ছিল সৌদি আরব৷ ২০১৯ সালে ১৬ শতাংশ ব্যয় কমিয়েছে দেশটি৷ গতবছর দেশটি ৬১.৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ ইয়েমেনে সামরিক অভিযান ও ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে সৌদি আরবের সামরিক ব্যয় কমানোতে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
শীর্ষ পাঁচেই ৬২ শতাংশ
সিপ্রি বলছে, ২০১৯ সালে সামরিক খাতে বৈশ্বিক খরচ ছিল ১৯১৭ বিলিয়ন ডলার৷ এর মধ্যে ৬২ শতাংশই করেছে শীর্ষ পাঁচটি দেশ৷
ছবি: Reuters/J. Lee
প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি
২০১৯ সালে ২০১৮ সালের তুলনায় সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৩.৬ শতাংশ৷ এটি ২০১০ সালের পর কোনো এক বছরে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হার৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
ইইউতে প্রথম ফ্রান্স, বিশ্বে সপ্তম
২০১৯ সালে ফ্রান্স ৫০.১ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যা দেশটির জিডিপির ১.৯ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে তাদের ব্যয় ছিল ৫১.৪ বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Reuters/G. Fuentes
অষ্টম-এ জার্মানি
২০১৯ সালে জিডিপির ১.৩৮ শতাংশ ব্যয় করেছে জার্মানি, সংখ্যার হিসেবে যা ৪৯.৩ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১৮ সালে ছিল ৪৬.৫ বিলিয়ন৷ অর্থাৎ, জার্মানির ব্যয় বেড়েছে ১০ শতাংশ, যা সিপ্রির তালিকার শীর্ষ ১৫টি খরুচে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ রাশিয়ার কাছ থেকে হুমকি বাড়া এর একটি কারণ বলে মনে করছেন সিপ্রির বিশ্লেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
শীর্ষ দশে এশিয়ার আরো দুই দেশ
সিপ্রির তালিকায় শীর্ষ ১০ খরুচে দেশের তালিকায় নয় ও দশ নম্বরে যথাক্রমে আছে জাপান (৪৭.৬ বলিয়ন ডলার) ও সাউথ কোরিয়া (৪৩.৯ বিলিয়ন ডলার)৷
ছবি: AP
বাংলাদেশ
২০১৯ সালে বাংলাদেশের সামরিক ব্যয় ছিল ৪,৩৫৮ মিলিয়ন ডলার, ২০১৮ সালে যা ছিল প্রায় ৩,৬৯২ মিলিয়ন ডলার৷