মহামারির সময়ে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আগামী বছর জার্মান সরকার প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ গ্রহণ করবে৷ তবে এই ঋণ ২০২৩ সালের মধ্যে ফেরত দেওয়া শুরু করতে হবে বলে জানান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান আইন প্রণেতাদের মধ্যে সরকারের ২০২১ সালের বাজেট নিয়ে বিতর্ক শুরুর আগে ম্যার্কেল করোনা সহায়তায় বিশাল প্রতিশ্রুতি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থায়ী হতে পারে না বলে সতর্ক করে দিলেন৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, স্বাস্থ্য সংকটের ফলে সরকার এখন বিশাল ঋণের যে বোঝা বহন করছে, তা ২০২৩ সালে পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করতে হবে৷
এবং সরকার যদি ব্যবসা ও জনসাধারণের উপকারের জন্য করোনার বিশেষ সহায়তার প্যাকেজটি না গ্রহণ করতো, তাহলে জার্মান অর্থনীতি ও সমাজ আরো বেশি চাপের মুখে পড়তো৷ মহামারির শুরু থেকেই সংকট মোকাবেলায় দেশের অর্থনৈতিক সম্পদকে সচল রাখা সরকারের লক্ষ্য বলে তিনি জানান৷
জার্মানিশক্তঅবস্থানে
সরকার গত কয়েক বছর ধরে বাজেটের প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার কারণে এবছর এবং আগামী বছর এত বেশি প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ তবে অর্থনীতিকে শক্ত অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আবার দ্রুত কাজ শুরু করার কথা বলেছেন ম্যার্কেল৷ তাছাড়া মহামারি কাটিয়ে উঠতে রাজ্য এবং মিউনিসিপ্যালিটিকে একসাথে কাজ করার পরামর্শ তাঁর৷
২০২১ সালের জন্য সরকার প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ইউরো (২১৮ বিলিয়ন ডলার) ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে গত মাসে৷
এই সপ্তাহে জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগে নতুন বাজেটের ওপর ভোট হওয়ার কথা৷
এনএস/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ, ইপিডি)
২৫ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...
করোনা-কালে বেহাল জার্মান অর্থনীতি
করোনা-কালে জার্মান অর্থনীতির অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার আভাস মিলেছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Welz
টোল সংগ্রহ কমছে
রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাকের পরিমাণ বুঝিয়ে দেয় দেশের অর্থনীতি কোন পথে চলছে। পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কম মানে, জিনিসের চাহিদা কমছে। প্রতি বছর পণ্যবাহী ট্রাকের থেকে টোল আদায় করে সরকার। এর থেকে সরকার ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করে। করোনা কালে জার্মানিতে টোল সংগ্রহ চোখে পড়ার মতো কমেছে।
ছবি: Imago Images/M. Stein
উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ
মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জার্মানিতে লকডাউন ছিল। ফলে ওই সময় জার্মান কারখানাগুলিতেও কাজ কম হয়েছে। করোনাকালে জার্মানিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জার্মানিতে ২০২০ সালের শেষে বিদ্যুতের চাহিদা ২০১৯ এর তুলনায় ১০ শতাংশ কম হবে। তবে শিল্প উত্পাদন আস্তে আস্তে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
ছবি: MEHR
ম্যাপ অ্যাপের ব্যবহার কমেছে
অ্যাপল এবং গুগলের মতো সংস্থাগুলি গুগল ম্যাপের মতো অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা দেয়। এই অ্যাপগুলি থেকে মানুষের জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এ বছরের ডেটা বলছে, মার্চে লকডাউন হওয়ার পর থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি জার্মান ম্যাপ অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা বাড়ির বাইরে খুব বেশি বেরচ্ছেন না। এর থেকে প্রমাণ হয়, করোনার কারণে জার্মানদের গতিশীলতা আগের চেয়ে অনেকটা কমে গিয়েছে।
ছবি: picture alliance/dpa/U.Zucchi
রেস্তোঁরা বুকিং
মার্চ মাসে অনলাইন সার্ভিস সংস্থা 'ওপেন টেবিল' একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের গোড়ায় অনলাইনে রেস্তোরাঁ বুকিং চোখে পড়ার মতো কমেনি। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়ার পরে এবং লকডাউন হওয়ার পরে বুকিং কার্যত শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রায় সমস্ত রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জুলাই থেকে অবশ্য রেস্তোরাঁ আবার খুলতে শুরু করেছে। তবে এখনও বুকিং আগের মতো হচ্ছে না।
ছবি: Reuters/A. Gebert
বিমান চলাচলে সমস্যা
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জার্মানি থেকে প্রায় দেড় কোটি যাত্রী দেশে এবং বিদেশে যাতায়াত করেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যত শূন্য হয়ে যায়। ফ্লাইট ট্র্যাকার ফ্লাইটারাডার ২৪ নামক একটি সংস্থা সমীক্ষা করে দেখিয়েছে, বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে বিশ্বজুড়ে কী পরিমাণ বিমান হ্যাঙারে ঢুকে গিয়েছে। তাদের সমীক্ষা বলছে, গত বছরের তুলনায় করোনাকালে গোটা বিশ্বে অন্তত ৭৫ হাজার বিমান কম উড়েছে।
ছবি: picture-alliance/M. Mainka
বেকারত্বের সমস্যা
অর্থনৈতিক সংকটের আরও বড় একটি সূচক হলো বেকারত্ব। জার্মানিতে বেকারের সংখ্যা ছিল চার লাখ ১৫ হাজার। এপ্রিলে তা এক লাফে ২৫ লাখে পৌঁছে যায়। কারণ, বহু ছোট সংস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে জার্মান সরকার বেকার ভাতা দিয়ে এই সমস্যাকে অনেকটাই হাতের মধ্যে রাখতে পেরেছে। অন্য বহু দেশের মতো জার্মান বেকারদের সমস্যায় পড়তে হয়নি।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন
করোনাকালে গাড়ি কেনা বেচাও চোখে পড়ার মতো কমেছে জার্মানিতে। মার্চ মাসে গাড়ি বিক্রি ৩৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এপ্রিল মাসে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এপ্রিলের তুলনায় এ বছর ৬১ শতাংশ গাড়ি কম বিক্রি হয়েছে। মনে রাখা দরকার, গাড়ি শিল্পে জার্মানি পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এসজি/জিএইচ (ডিডাব্লিউ)