1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা: সাতদিনে দ্বিতীয় পুলিশ বিক্ষোভ কলকাতায়

২৬ মে ২০২০

করোনা সন্দেহে পুলিশ কর্মীর মৃত্যুর পর কলকাতায় গরফা থানায় প্রবল পুলিশ বিক্ষোভ। ভাঙচুরও। কলকাতায় এক সপ্তাহেএই নিয়ে দ্বিতীয় পুলিশ বিক্ষোভ। 

ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri

করোনার উপসর্গ ছিলো। শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। রোববার তাঁকে কলকাতার এমআর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার তিনি মারা যান। গরফা থানার এই মৃত কনস্টেবল পরিমল রায়ের বয়স হয়েছিলো ৪৭ বছর। আদতে কোচবিহারের মানুষ। থানার ব্যারাকে থাকতেন। সপ্তাহ খানেক ধরে অসুস্থ ছিলেন। পরিমল রায়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর গরফা থানার নীচুতলার পুলিশ কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিলো, পরিমল রায়ের চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে। অসুস্থ হওয়ার পরেও তাঁকে ডিউটি করতে হয়েছে। পরে তাঁকে কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়। তারপর শরীর আরও খারাপ হলে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশ অফিসারদের করোনা হলে তাঁদের বেসরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আর নীচুতলার কর্মী হলে সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় কেন?

গরফা থানায় পুলিশের নীচুতলার কর্মীদের বিক্ষোভ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সপ্তাহ খানেক আগে কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানরা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা ডেপুটি কমিশনারকেও হেনস্থা করেছিলেন। সেখানেও অভিযোগ ছিলো করোনায় আক্রান্ত পুলিশ কর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ঠিকভাবে হচ্ছে না। পরে মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে ক্ষোভ সামাল দেন।

গরফা থানাতে বিক্ষোভের সময় ভাঙচুরও হয়েছে। চেয়ার, আলমারি, টেবিলের কাচ, ফুলের টব ভাঙা হয়। কর্মীরা বিক্ষোভ দেখানোর পর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার তাঁদের বলেন, বিক্ষেোভ না দেখিয়ে কাজে যেতে। তাতে ক্ষোভ আরও বাড়ে। নীচুতলার কর্মীদের অভিযোগ হলো, করোনার পর তারা পুরোভাগে থেকে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন। কাজের সময় আরও বেড়ে গিয়েছে। এরপর আমফান হয়েছে। তাতেও পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে উদয়াস্ত খাটতে হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা অসুস্থ হলে ঠিকভাবে ও সময়ে চিকিৎসা হচ্ছে না। পরে ডেপুটি কমিশনার আসেন। তিনি কর্মীদের বলেন, তাঁদের ক্ষোভের কথা তিনি কর্তাদের জানাবেন। তারপর পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার জানিয়েছেন, পরিমল রায়ের লালারসের নমুনা নেগেটিভ এসেছে। আবার ত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, করোনায় মোট ৫৬ জন পুলিশ কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। ২৯ জন সুস্থ হয়েছেন। পুলিশের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ আছে। বহুদিন ধরে নীচুতলার কর্মীরা বাড়ি যেতে পারছেন না। তাঁদের এখন অমানুষিক পরিশ্রম যাচ্ছে। তাঁদের এমন কাজ করতে হচ্ছে, যা তাঁদের করার কথা নয়। কর্মীরা আক্রান্ত হওয়ার পর করোনা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। চিকিৎসায় বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। সোমবার রাতে লালবাজার একটি সার্কুলার দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মীরা আক্রান্ত হলে চারটি হাসপাতালে চিকিৎসা হবে। সেখানে আইডি হাসপাতাল আছে আবার বড় বেসরকারি হাসপাতালের নামও আছে। পদ দেখে নয়, আক্রান্ত হলে সকলকে সমভাবে হাসপাতালে ভর্তি করার কথা জানানো হয়েছে। পুলিশ কর্তার মতে, আসলে কলকাতা পুলিশের সীমা আগের থেকে অনেক বাড়ানো হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের পর থেকে নতুন করে কোনও নিয়োগ হয়নি। ফলে কাজের বহর আগের থেকে এমনিতেই বেড়েছে। করোনা, আমফানের ফলে এখন তা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

পুলিশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে

03:00

This browser does not support the video element.

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারত জুড়েই পুলিশ কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পাঁচশ পুলিশ কর্মী। সম্প্রতি দিল্লি পুলিশের পশ্চিম জেলায় ওয়ারলেস কন্ট্রোল রুমে সাতজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপর কন্ট্রোল রুম পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। টাইমস নাও জানাচ্ছে, দিল্লিতে সবমিলিয়ে ৪৩৪ জন পুলিশ কর্মী করোনায় আক্রান্তহয়েছেন। তার মধ্যে পিসিআর ভ্যানে ডিউটি করা ২৪ পুলিশ কর্মীও আছেন।

এমনিতে দিল্লি, মুম্বইতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। দিল্লিতে প্রতিদিন ৬০০-র বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে ৬৩৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালগুলি প্রায় সব ভর্তি। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার বেসরকারি হাসপাতালের আরও ২০ শতাংশ বেড করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, যেহেতু লকডাউন শিথিল করা হয়েছে, তাই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে সেটা জানা কথা ছিলো। যতক্ষণ আক্রান্ত হয়েও লোকে সুস্থ হচ্ছেন, ততক্ষণ চিন্তার কারণ নেই। দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত ২৭৬ জন মারা গিয়েছেন। মহারাষ্ট্র তথা মুম্বইয়ের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। মহারাষ্ট্রে রোজ প্রায় আড়াই হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তারপরই আছে তামিলনাড়ু, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ। বস্তুত ভারতজুড়েই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ছয় হাজার ৫৩৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ৪ হাজার ১৬৭ জন।

জিএইচ/এসজি(এএনআই, আবাপ)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ