করোনা মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে পঙ্গু করে দিয়েছে, তবে থামাতে পারেনি অপরাধ৷ ভারতে করোনার সময় অপরাধের গ্রাফ সমানে উপরে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
সাধারণ মানুষ করোনার ভয়ে যতই মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে ভয়ে ভয়ে বাস করুন না কেন, অপরাধীরা করোনার ভয় থেকে মুক্ত৷ না হলে করোনা আক্রান্ত নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁকে ধর্ষণ করে অ্যাম্বুলেন্সের চালক? ঘটনাটি ঘটেছে কেরালায়৷ কয়েকদিন আগে৷
একটি অ্যাম্বুলেন্সে দুইজন করোনায় আক্রান্ত নারীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ দুইজনকে আলাদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল৷ প্রথমে বছর চল্লিশের করোনা আক্রান্ত নারীকে অ্যাম্বুলেন্স চালক হাসপাতালে নামিয়ে দেয়৷ তারপর ১৯ বছরের তরুণীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে৷ তারপর তাঁকে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়৷ সেই চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷
একমাসে খবরে আসা নির্মমতার আট ঘটনা
৯ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর৷ এই এক মাসে বাংলাদেশের কিছু মানুষের নির্মম আচরণের উদাহরণ তুলে ধরা হচ্ছে ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24.com
গরু চুরির অপবাদে নির্যাতন
২১ আগস্ট গরু চুরির অপবাদ দিয়ে পারভিন বেগম, তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও ছেলের বন্ধুকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাঁটিয়ে মারধর করতে করতে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷ সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরানও তাদের মারধর করেন৷ বুধবার মিরানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
নৈশপ্রহরীকে পিটিয়ে হত্যা
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ির বাজারে নৈশপ্রহরীর চাকরি করতেন ৬০ বছরের তসলিম উদ্দিন৷ ৯ আগস্ট ঐ বাজারের এক মুদি দোকানে চুরি হলে দোকান মালিক জামিলুর রহমান (২৮) চুরির সঙ্গে তসলিম জড়িত থাকতে পারেন সন্দেহ করে তাকে বিদ্যুতের খুঁটির সাথে বেঁধে মারধর করে৷ পুলিশ তসলিমকে হাসপাতালে নেয়ার উদ্যোগ নেয়, তবে পথেই তিনি মারা যান৷ জামিলুর রহমান ও তার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
শিশু কেন্দ্রে তিন কিশোরের মৃত্যু
১৩ আগস্ট যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়, আহত হয় ১৫ জন৷ কর্তৃপক্ষের দাবি, কিশোরদের দুই দলের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ তবে আহত কিশোরদের ভাষ্য, কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে কেন্দ্র কর্মকর্তা, আনসার সদস্য ও তাদের ‘অনুগামী’ কয়েকজন কিশোরের মারধরে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে৷ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও সহকারী তত্ত্বাবধায়কসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
চুরির অপবাদ দিয়ে মারধরের অভিযোগ
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ২০ শতক জমি পেতে আমির হোসেনকে অনেকদিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ৷ এতে রাজি না হওয়ায় ২৩ আগস্ট রাতে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আমির হোসেনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান৷ পরে জ্ঞান ফিরলে মামলা না করতে ও চিকিৎসা না নিতে সাদা কাগজে সই নেয়া হয় বলে দাবি তার৷ চেয়ারম্যান ছৈয়াল সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: bdnews24.com
শ্বশুর-শাশুড়ির হাতে গৃহবধূ নির্যাতন
৩ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর জেলার আমারগাছিয়া ইউনিয়নের মানিকখালী গ্রামে সৌদি আরব প্রবাসী ছেলের বউ-এর সাথে শাশুড়ি আলেয়া বেগমের পারিবারিক বিষয়ে তর্ক শুরু হয়৷ এক পর্যায়ে শ্বশুর, শাশুড়ি ও চাচা শ্বশুর মিলে গৃহবধূকে নির্যাতন করেন৷ ঐ গৃহবধূর মেয়ের করা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ৫ সেপ্টেম্বর রাতে মামলা হয়৷ এরপর শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
চোর সন্দেহে শিশু পেটানো
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার চর ভবানীপুর এলাকায় ৩ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোন চোর সন্দেহে ১২ ও ১৭ বছর বয়সি দুই শিশুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পেটানো হয়৷ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ৬ সেপ্টেম্বর দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ তাদের একজন গোলাম মোস্তফার (৪৫) নিজের মেয়ের মোবাইল চুরি করেছে সন্দেহে ঐ দুই শিশুকে পিটিয়েছিলেন৷
যৌতুক না পাওয়ায় এই নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ৷ ময়মনসিংহের নান্দাইলে ৬ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটে৷ সেদিন কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে জুয়েল মিয়া (২৮) স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ফাহিমা সুলতানার (২২) মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত করেন৷ পরে বাঁশ দিয়েও মারধর করেন৷ এতে ফাহিমা অচেতন হয়ে যান৷ হাসপাতালে নেয়ার দুদিন পর মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি৷ স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg
পায়ে শিকল বেঁধে শিশু নির্যাতন
দিনাজপুরের বিরামপুরের ত্বালিমউদ্দীন ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র মো. মারুফ হোসেনকে (১০) ৮ সেপ্টেম্বর পায়ে শিকল বেঁধে লাঠি দিয়ে হাত, মাথা, পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে৷ এই অপরাধে মাদ্রাসার মোহতামিম লুৎফর রহমানকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে৷ মারধরের এক পর্যায়ে মারুফ নিস্তেজ হয়ে পড়লে লুৎফর ঘর থেকে বের হন৷ এই ফাঁকে মারুফ পালিয়ে পাশের ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয়৷ স্থানীয় থানার ওসি তাকে উদ্ধার করেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Michelle Shephard
8 ছবি1 | 8
এটা তো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়৷ দিল্লিতে করোনা-কেন্দ্রের ভিতরে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল দুই যুবক৷ কিছুদিন আগে৷ সেই করোনা-কেন্দ্রে আরো রোগী ছিলেন৷ বাইরে নিরাপত্তারক্ষী ছিল৷ করোনা-কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো৷ তা সত্ত্বেও বাথরুমের কাছে নিরালা জায়গা বেছে ধর্ষণ করে ওই দুই যুবক তাই করোনা নামক ভয়ংকর অতিমারীও হেরে যাচ্ছে এই অপরাধীদের কাছে৷ তারা ধরা পড়বে জানে, ধর্ষণের আইন এখন খুব কড়া, সে সবও তাদের অজানা নয়, তা সত্ত্বেও এই ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে৷ বস্তুত, করোনাকালে কোন অপরাধটাই বা কমেছে ভারতে?
খুনের কথাই ধরা যাক৷ উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে খুন লেগেই আছে৷ খুব কম সময়ের ব্যবধানে তিনজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন৷ দিন দুয়েক আগেই বুলন্দশহর থেকে দিল্লি ফেরার পথে এক ট্যাক্সিচালক খুন হয়েছেন৷ পরিবারের অভিযোগ, ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় তাঁকে খুন করে দুই সওয়ারি৷ পুলিশ অবশ্য তা মানতে চায়নি৷ নিজের মেয়েকে বেচে দিয়েছেন এই গুজবের ভিত্তিতে মৈনপুরিতে একজন দলিতকে তাঁরই বাড়ির ছাদে পিটিয়ে মেরেছে পাঁচজন লোক৷ কুশীনগরে তো পুলিশের সামনেই খুনের দায়ে এক অভিযুক্তকে পিটিয়ে মারা হয়েছে৷ লকডাউন হওয়ার আগে গত জানুয়ারিতে উত্তর প্রদেশে একদিনে ১৩টা খুন হয়েছিল৷ দেখা যাচ্ছে, করোনার সময়েও যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে সেই চরিত্রের বদল হয়নি৷
রাজধানী দিল্লিই বা কম যায় কীসে? পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন থেকে দিল্লিতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি করে ছিনতাই হচ্ছে৷ দিন কয়েক আগের ঘটনা৷ মূলচন্দ থেকে নেহরু প্লেস আসার পথে অটোতে বসা এক বাঙালি মেয়ের হাত থেকে ব্যাগ টান মারে এক বাইক আরোহী৷ মেয়েটিও পাল্টা টান দেয়, তখন তাঁর হাত চেপে ধরে দুষ্কৃতী৷ ভয়ে মেয়েটি ব্যাগ ছেড়ে দেয়৷ এটিএমে গিয়ে পিন বদলে ১৫ হাজার টাকা তুলে নেয় দুষ্কৃতীরা৷ রাস্তায় চলার সময় মোবাইল, গলার হার ছিনতাই তো নিত্যদিনের ঘটনা৷ সেই সঙ্গে গাড়ি চুরি, ডাকাতি, হত্যা, মহিলা নির্যাতন সহ সব ধরনের অপরাধেরই বাড়বাড়ন্ত৷
ধর্ষক কেন, কী ভেবে ধর্ষণ করে?
ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সময় কীভাবে কাজ করে ধর্ষকের মন ও মস্তিষ্ক? এ সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী কী বলেছেন তা বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/China Photos
সব সময় যৌনসুখ মুখ্য নয়
সাইকোলজি অফ ভায়োলেন্স জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শেরি হামবির মতে, ‘‘ধর্ষণ যৌনসুখের উদ্দেশ্যে নয়, বরং অপরপক্ষকে দমিয়ে রাখতে ক্ষমতার প্রদর্শন হিসাবে করা হয়৷’’ কিছু ক্ষেত্রে এই ক্ষমতার প্রকাশ শুধু নারীদের বিরুদ্ধে হয়৷ অন্যদিকে, ধর্ষণ কাজ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘জাতে ওঠার’ পন্থা হিসাবে৷ এছাড়া ধর্ষণের পেছনে রয়েছে নানাবিধ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, যা বুঝতে বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images
কে ধর্ষক?
মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক ড. স্যামুয়েল ডি. স্মিথিম্যান একটি গবেষণার জন্য ৫০জন ধর্ষকের সাক্ষাৎকার নেন৷ সেখানে তিনি বুঝতে পারেন যে, কয়েকটি নির্দিষ্ট আর্থসামাজিক বা ভাষা বা ধর্মগোষ্ঠী থেকেই উঠে আসবে ধর্ষকামী চিন্তা, তা নয়৷ ধর্ষক উঠে আসতে পারে যে কোনো সামাজিক বা অর্থনৈতিক শ্রেণি থেকে৷ পাশাপাশি এক ধর্ষক থেকে আরেক ধর্ষকের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করেন তিনি৷ ধর্ষণের উদ্দেশ্যও সেখানে থাকে ভিন্ন৷
ছবি: Gina Sanders - Fotolia.com
উদ্দেশ্য ভিন্ন, কিন্তু চারিত্রিক মিল
ড. স্মিথিম্যানের গবেষণা বলছে, প্রতিটি ধর্ষণের উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও বেশির ভাগ ধর্ষকের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়৷ এর মধ্যে রয়েছে নার্সিসিজম বা আত্মমুগ্ধতা, নারীবিদ্বেষ ও অন্যের প্রতি সার্বিক সহানুভূতির অভাব৷ এছাড়া, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ধর্ষকদের মধ্যে নিজের অপরাধের প্রতি ঔদাসীন্য লক্ষ্য করেন৷
ছবি: Getty Images
ধর্ষণ করে ‘জাতে ওঠা’!
গবেষক শেরি হামবি বলেন, ‘‘তরুণরা যৌন অভিজ্ঞতার সাথে সম্মানকে মেলায়৷ এটিকে এক ধরনের জয় হিসাবে দেখে তারা৷ যাদের বেশি যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি, তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হয়৷’’ এই ‘জাতে উঠতে চাওয়ার’ আকাঙ্খা থেকে ধর্ষণ করাকে টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি বা ক্ষতিকারক পৌরুষের লক্ষণ হিসাবে দেখেন তিনি৷ ওপরের ছবিতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক নারী৷
ছবি: AFP/Abaad/P. Baz
ধর্ষণ একটি অপরাধ
শেরি হামবি এবং স্মিথিম্যান মনে করেন, ধর্ষণ কোনো বিশেষ মানসিক রোগ নয়, এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ কোনো কোনো ধর্ষকের মধ্যে বিশেষ কিছু মানসিক রোগের লক্ষণ দেখা গেলেও এমন কোনো নির্দিষ্ট মানসিক রোগের সন্ধান পাওয়া যায়নি যা ধর্ষণ করতে বাধ্য করে৷
ছবি: Getty Images/China Photos
নানা ধরনের ধর্ষকামী মানসিকতা
ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জয়দীপ সরকার ধর্ষকামী মানসিকতার মোট ছয়টি রূপকে চিহ্নিত করেছেন৷ এর মধ্যে রয়েছে সুযোগসন্ধানী ধর্ষক, স্যাডিস্টিক ধর্ষক, প্রতিহিংসাকামী ধর্ষক, কল্পনাপ্রবণ ধর্ষক, ক্ষমতালোভী ধর্ষক ও ক্ষুব্ধ ধর্ষক৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন ধর্ষকের মধ্যে একাধিক ধর্ষকামী মানসিকতার ছাপ লক্ষ্য করা যায়, বলে জানাচ্ছে সেই গবেষণা৷
ছবি: picture-alliance/F. May
বিজ্ঞানের দ্বন্দ্ব
ধর্ষকের মনস্তত্ত্বকে বোঝার উপায় কী হবে, এই প্রশ্ন বিভক্ত করেছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারার গবেষকদের৷ সমাজতাত্ত্বিক, মনোবিদরা ধর্ষণকে যৌনতা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে একে নিছক ক্ষমতার প্রকাশ হিসাবে দেখেন৷ অন্যদিকে, বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান ও নৃতত্ত্বের গবেষক র্যান্ডি থর্নহিল ও ক্রেগ পামারের মতে, ধর্ষণের মূল উদ্দেশ্য যৌনতাই৷ ওপরের ছবিতে ব্রাজিলের সাওপাওলো শহরে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক নারী৷
ছবি: Imago/ZumaPress
ধর্ষণের যত ‘মিথ’
ধর্ষণ বিষয়ে বেশ কিছু মিথ বা ভুল ধারণা সমাজে প্রচলিত রয়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ, অনেক ক্ষেত্রেই একটি মিথ কাজ করে, যেখানে ধর্ষক আশ্বস্ত হয় যে, অপর পক্ষ যতই বারণ করুক বা বাধা দিক না কেন, বাস্তবে তারও এতে সম্মতি রয়েছে৷ মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক আন্টোনিয়া অ্যাবের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন মিথে বিশ্বাসী এক ধর্ষকের বয়ান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
গবেষণার প্রাসঙ্গিকতা
মনস্তত্ত্বের আনাচ-কানাচ নিয়ে প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে বহু গবেষণা৷ এর একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ধর্ষণকে বুঝতে চাওয়া চেষ্টা৷ বিভিন্ন চিন্তাধারার বা অ্যাকাডেমিক ডিসিপ্লিন নিজেদের মতো করে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে৷ এতে করে গভীরে গিয়ে চিহ্নিত করা যাচ্ছে ধর্ষণের নানা দিক৷ ধর্ষণ রুখতে ও ধর্ষকের মনস্তাত্ত্বিক ঝোঁক চিহ্নিত করতে কাজে লাগানো হচ্ছে এমন গবেষণাকে৷
ছবি: Ambrophoto - Fotolia.com
9 ছবি1 | 9
কেন এই অবস্থা? দিল্লি পুলিশের একটা ব্যাখ্যা হলো, করোনার পর জেলগুলিকে খালি করার দরকার হয়৷ কারণ, রাজধানীর জেলে উপচে পড়া ভিড় ছিল৷ সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য যে সব অপরাধীর সাত বছরের কম হাজতবাসের সাজা ছিল, তাদের অনেককেই প্যারোলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ ছাড়া পেয়ে তারা আবার অপরাধ করতে শুরু করেছে৷ আইজি জেল রাজ কুমার সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডে-কে জানিয়েছেন, ‘‘দিল্লির জেল থেকে চার হাজার ৩০০ জনকে ছাড়া হয়েছিল৷ তারপর আবার ৫০ জনকে বিভিন্ন অপরাধের কারণে ধরা হয়েছে৷’’
লকডাউনের ফলে প্রচুর লোকের চাকরি গেছে৷ ব্যবসা মার খেয়েছে৷ আনলকের পর সব খুলেছে ঠিকই, কিন্তু চাকরি, ব্যবসা কিছুই আর আগের মতো নেই। তাই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এ সব বাড়বে তা জানা কথা৷ তা সত্ত্বেও করোনার বাজারে অপরাধের সংখ্যা মাত্রাছাড়া ভাবে বেড়েছে৷ ১ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত দিল্লিতে ৪৭১টা ছিনতাই হয়েছে৷ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২২৬টা খুন, ২৩৬টা খুনের চেষ্টা, প্রায় ৫৭ হাজার চুরি, ৭০০ ডাকাতি এবং ১৩ হাজারেরও বেশি গাড়ি চুরি হয়েছে৷
পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও৷ সেখানে আবার রাজনৈতিক খুন লেগেই আছে৷ বিজেপি-র অভিযোগ, তাদের হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়কে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে৷ অবশ্য এটাকে আত্মহত্যা বলেছে৷ আরও কিছু বিজেপি নেতা ও কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ করোনাকালেও নিয়মিত তৃণমূল বনাম বিজেপি কর্মীদের লড়াই হয়েছে৷ সব মিলিয়ে অপরাধের হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও খারাপ৷
জাতীয় মহিলা কমিশনের তথ্য বলছে, ২৩ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে তারা নারী নির্যাতনের ৫৮৭টি অভিযোগ পেয়েছে৷ তার মধ্যে ২৩৯টি গার্হস্থ হিংসার৷ করোনা কেটে গেলে যখন পুরো হিসাব আসবে, তখন বোঝা যাবে, গার্হস্থ হিংসার প্রকৃত ছবি৷
ফলে করোনাকালে অপরাধের বাড়বাড়ন্ত ভারতে৷ কোনো অপরাধই কমেনি৷ বরং তা বাড়ছে৷