1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কর্পোরেট চাঁদার অস্বচ্ছতায় বাড়বে দুর্নীতি?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৭ এপ্রিল ২০২২

কর্পোরেট চাঁদাপ্রাপ্তির নিরিখে সবার শীর্ষে বিজেপি৷ অনুদানের অঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে৷ কিন্তু এই লেনদেনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে৷ এই ব্যবস্থা গণতন্ত্রের পক্ষে কতটা স্বাস্থ্যকর?

সারা বছরে কোন দল কত চাঁদা পেল, তার উপর নজর রাখে অ্যাসেসিয়েশন ফর ডেমোক্রাটিক রিফর্মস
সারা বছরে কোন দল কত চাঁদা পেল, তার উপর নজর রাখে অ্যাসেসিয়েশন ফর ডেমোক্রাটিক রিফর্মসছবি: Getty Images

রাজনৈতিক দল চালাতে বিপুল টাকাকড়ি প্রয়োজন৷ শুধু সদস্য চাঁদায় দল চালানো সম্ভব নয়৷ তাই দেশের বিভিন্ন দল বেসরকারি সংস্থার চাঁদার উপর নির্ভর করে৷ সারা বছরে কোন দল কত চাঁদা পেল, তার উপর নজর রাখে অ্যাসেসিয়েশন ফর ডেমোক্রাটিক রিফর্মস (এডিআর)৷ তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, এ বারও অন্যান্য দলকে চাঁদাপ্রাপ্তিতে পিছনে ফেলেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি৷

এডিআর-এর রিপোর্ট অনুয়ায়ী, জাতীয় দলগুলির মধ্যে ২০১৯-২০ সালে বিজেপির তহবিলে ২,০২৫টি সংস্থার কাছ থেকে জমা পড়েছে ৭২০ কোটির বেশি টাকা৷ দেশের অন্যান্য জাতীয় দলগুলি পেয়েছে ৯২১ কোটি টাকার বেশি৷ অর্থাৎ মোট কর্পোরেট চাঁদার ৭৮ শতাংশই পেয়েছে বিজেপি৷ গেরুয়া শিবিরকে সবচেয়ে বেশি চাঁদাদিয়েছে প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট৷ কংগ্রেস এদের কাছ থেকে ৩১ কোটি টাকা পেয়েছে৷

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এডিআর দেখিয়েছে, কোন দল কত টাকা পেয়েছে৷ বিজেপির পর তালিকায় রয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস৷ তারা ১৫৪টি সংস্থার কাছ থেকে ১৩৩ কোটি টাকার বেশি অনুদান পেয়েছে৷ দেশের ৩৬ বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে শরদ পাওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি পেয়েছে ৫৭ কোটি টাকার বেশি৷ চতুর্থ স্থানে থাকা সিপিএম ১১৭টি সংস্থার কাছ থেকে প্রায় সাত কোটি টাকা তহবিল সংগ্রহ করেছে৷ পাঁচ নম্বরে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ তারা সাতটি কর্পোরেটের কাছ থেকে সাড়ে চার কোটি টাকা পেয়েছে৷ বিজেপি, এমনকী কংগ্রেসের তুলনায় সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্তি সামান্যই৷

‘‘প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলে চাঁদার বিপুল ফারাক’’

This browser does not support the audio element.

রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়া দেশের আইনে স্বীকৃত৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "রাজনৈতিক দলের খরচ আছে৷ সভা, মিছিলের আয়োজন করতে হয়৷ তাদের খরচ চলবে কী করে? তারা চাঁদা নিতে বাধ্য হয়৷” এডিআর-এর রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্র থেকে বেশি টাকা এসেছে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে৷ এডিআর-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সঞ্চালক উজ্জয়িনী হালিম বলেন,  "প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলগুলির মধ্যে বিপুল ফারাক৷ যে ধরনের সংস্থা চাঁদা দিচ্ছে, তাদের দেখে বোঝা যায় যে আগামীতে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র কোনগুলি হবে৷” এখানেই কি দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে? নীলাদ্রির মন্তব্য, "যারা চাঁদা দিচ্ছে, তারা বিনিময়ে কিছু চাইবে৷ এটাকে সংস্থাগুলি বিনিয়োগ হিসেবে দেখে৷ ক্ষমতায় এলে এই সংস্থাগুলিকে সুবিধা দিতে হয়৷ নইলে পরের বার আর চাঁদা পাওয়া যাবে না৷ এটা দুর্নীতির অন্যতম কারণ৷”

 

অনুদান লেনদেনের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠছে বহুদিন৷ ২০ হাজার টাকার কম চাঁদা দিলে চাঁদাপ্রদানকারীর নাম প্রকাশ করতে হয় না৷ নীলাদ্রি বলেন, "কেউ ২০ হাজার টাকার কম চাঁদা বার বার দিতে পারে৷ তা হলে নাম সামনে আসবে না৷ তার উপর বেশি অঙ্কের সবটা সাদা টাকায় লেনদেন হয় না৷ যেটা কালো টাকায় আসে, সেটার হিসেব থাকে না৷ তাই বিমুদ্রাকরণের সময় রাজনৈতিক দলগুলি সমস্যায় পড়েছিল৷” একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেশের ৮৩ শতাংশ আদানপ্রদান নগদ টাকায় হয়৷ এ ক্ষেত্রে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকে৷ রাজনৈতিক দলের চাঁদার ক্ষেত্রে রাজনীতি ও ব্যবসা জগতের মধ্যে একটা অসাধু যোগসাজশ তৈরি হয়েছে বলে মত নীলাদ্রির৷ উজ্জয়িনী বলেন, "যে সংস্থাগুলি চাঁদা দিচ্ছে, সেগুলি আসল কোম্পানি না ভুয়ো, তা অনেক ক্ষেত্রে বোঝা যায় না৷ এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে৷ যে রাজনৈতিক দলগুলি চাঁদা নিচ্ছে, তাদের সদিচ্ছা বড় ব্যাপার৷ কিন্তু সেটা তেমন দেখা যায় না৷”

‘‘রাজনৈতিক দলের খরচ আছে’’

This browser does not support the audio element.

এডিআর-এর রিপোর্টে প্রকাশ, চাঁদাপ্রাপ্তির নিরিখে বাকি দলগুলির তুলনায় অনেক এগিয়ে বিজেপি৷  নীলাদ্রি বলেন, "যে শাসক দল, তাকে ব্যবসায়ীরা বেশি টাকা দেবেন, এটা স্বাভাবিক৷ বিজেপি ১৮টি রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, কেন্দ্রে তাদের সরকার৷ কিন্তু তৃণমূল একটি রাজ্যে ক্ষমতায় আছে৷ যদিও তারা অর্থপ্রাপ্তির নিরিখে পাঁচ নম্বরে৷ সিপিএম একটি রাজ্যে ক্ষমতায়৷ তারা আছে চার নম্বরে৷” এনসিপি কোনও রাজ্যে ক্ষমতায় নেই৷ তারা তালিকায় রয়েছে তিন নম্বরে৷

ভুয়ো কোম্পানির টাকায় যদি রাজনৈতিক দল পুষ্ট হয়, তাতে যদি দুর্নীতি বাড়ে, সেটার ফল কী হতে পারে? প্রবীণ সাংবাদিক শিখা মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রাজনৈতিক দলগুলিকে উদ্যোগ নিতে হবে৷ নইলে পুরো ব্যবস্থার পক্ষে বিষয়টি বিপজ্জনক হতে পারে৷ যারা চাঁদা দিচ্ছে তাদের পরিচয় যদি না পাওয়া যায়, সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর৷” এ ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ নিলে স্বচ্ছতা আসতে পারে? উজ্জয়িনী বলেন, "সংস্থার নামধাম, প্যান, আধার থাকা দরকার৷ আয়কর দফতর আদানপ্রদান খতিয়ে দেখুক৷ ইলক্টোরাল বন্ডের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা জরুরি৷” বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলিই পারে এটা নিশ্চিত করতে৷ কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ